পৃথিবীর আলো দেখার সুযোগ হয়নি অঞ্জনা রানীর। জন্মের পর থেকেই সে অন্ধ। তবুও জীবন-যুদ্ধে থেমে থাকেননি তিনি। অঞ্জনার সামনে কোনো সংকটই বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। জন্মান্ধ হয়েও জীবন-সংগ্রামে দমে যাননি এই নারী।
দৃষ্টিহীনতা আর দারিদ্র্যের সঙ্গে একাই লড়াই করে ইতিহাস বিভাগ থেকে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেছেন। এরপরও কোনো চাকরি না পেয়ে গান গেয়ে ও টিউশনি করে সংসার চালান অঞ্জনা।
অঞ্জনার পরিবারের সদস্যরা একটি সরকারি চাকরির জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন। কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবে সরকারি চাকরি ও বাসস্থান চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন অঞ্জনা নিজেও।
মঙ্গলবার (২৮ জুন) বেলা ১২টার দিকে এ সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি। এ সময় তার সঙ্গে পরিবারের লোকজনও উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি তার অভাব অনটন আর নানা সংকটের মাঝে নিজের উদ্দাম ইচ্ছা শক্তি দিয়ে লেখাপড়া শেষ করার কথা জানান।
নানা-প্রতিবন্ধকতার পরও লেখাপড়ায় সফল হয়ে সমাজে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চান তিনি। প্রবল ইচ্ছা শক্তি থাকলে মানুষ পৃথিবীকে জয় করতে পারে। সেটিই করে দেখিয়েছেন অঞ্জনা রানী।
অঞ্জনা রানী অদম্য মনোবল নিয়ে এখন চালিয়ে যাচ্ছেন জীবন যুদ্ধ। শুধু তাই নয়, বর্তমানে তিনি চাকরির পড়াশোনা, সংসারের কাজ, টিউশনি, গানের অনুষ্ঠানসহ নানা কাজে সময় পার করছেন।
অঞ্জনা রানীর জন্ম ১৯৮৮ সালের ১ জানুয়ারি। তিনি কুষ্টিয়া শহরের প্রাণকেন্দ্র আমলাপাড়া এলাকার বিবি নন্দি রোডের পুরাতন আনসার অফিসের সরকারি জায়গায় বসবাস করেন।
হতদরিদ্র ফুটপাতে চা বিক্রেতার পরিবারে তার জন্ম। পরিবারে তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে অঞ্জনা সবার বড়। তার স্বপ্ন ছিল লেখাপড়া শেষ করে সরকারি চাকরিজীবী হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে দেশ ও দেশের মানুষকে সেবা করা। কিন্তু মাস্টার্স পাস করেও প্রতিবন্ধী হওয়ায় সরকারি চাকরি জোটেনি অদম্য মেধাবী অঞ্জনা রানীর কপালে। তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি চাকরি চান। একইসঙ্গে শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাতের সুযোগ চান তিনি।
২০০৬ সালে কুষ্টিয়া হাই স্কুল থেকে এসএসসিতে ভালো ফলাফল করে ভর্তি হন ইসলামিয়া কলেজে। সেখান থেকে ২০০৮ সালে এইচএসসি পাস করেন। পরবর্তীতে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে ইতিহাস বিভাগে ২০১৩ সালে অনার্স ও ২০১৪ সালে মাস্টার্স পাস করে সবাইকে চমকে দেন তিনি।
অঞ্জনা রানী সংবাদ সম্মেলনে আরও বলেন, অভাব আর দৃষ্টিহীনতার মাঝে অনেক দুঃখ-কষ্টে বেড়ে উঠতে হয়েছে জীবন যুদ্ধ করে। প্রতিনিয়ত পদে পদে সংকট আর সমস্যায় পড়তে হয়েছে। কিন্তু আমি কোনোদিন থেমে যায়নি। মনোবল নিয়ে বাস্তবতার সঙ্গে জীবনের যুদ্ধে সফলতা ছিনিয়ে আনার চেষ্টা করছি, এখনও করছি। জীবনে প্রচুর পরিশ্রম করছি। বাবা-মায়ের সহযোগিতা ও আমার নিরলস কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে এতো দূর পৌঁছেছি।
তিনি বলেন, আমার মেধা আছে, তবুও চাকরি হচ্ছে না। প্রতিবন্ধী হওয়ায় মাস্টার্স পাস করেও চাকরি পাচ্ছি না। এখন একটা সরকারি চাকরি চাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে। আমি তার সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ চাই। তাকে জীবন যুদ্ধের গল্প শুনিয়ে একটি সরকারি চাকরি ভিক্ষা চাইব। চাকরি পেলে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর পাশাপাশি পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে চাই।
সংবাদচিত্র/সারাদেশ
