ছোট থেকেই তারা ছিলো অন্য আর দশ জন মেয়ের মতন। একজন মেয়ের সকল বৈশিষ্ট্যই তাদের মধ্যে ছিলো। কিন্তু বয়ঃসন্ধির ছোঁয়া না লাগা পর্যন্ত তাদের মধ্যে যে অন্য আরেকজনের বসবাস সেটা এতদিন পরিবারের কেও টেরই পাইনি। এমন একজন জনি। বয়ঃসন্ধি ছোঁয়া পর্যন্ত জনির পরিবারের কেউই জানতো না তাদের আদরের ছোট মেয়েটি আসলে ছেলে! বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছে ধীরে ধীরে তার শরীরে ছেলেদের সকল বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পায়। যা দেখে বাক্রুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন পরিবারের সবাই। খবর ওয়াশিংটন পোস্ট।
ছোট থেকে জনির আচরণ অবশ্য মেয়েদের মতো ছিল না। সে সব সময়ই ছেলেদের সঙ্গে খেলতে ভালবাসতো। মেয়েদের মতো পোশাক পরতে এবং সাজতে ভাল লাগতো না তার। জনি বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছনোর পরই তার বাহ্যিক পরিবর্তনগুলো চোখে পড়তে শুরু করে পরিবারের।
‘অভিশপ্ত’ সেই গ্রামের গ্রামবাসীর অনেকে বিশ্বাস করতো, গ্রামের উপর নাকি কোনো পুরাতন অভিশাপ রয়েছে। সেই কারণেই এমন ঘটনা ঘটছে।
এরকম ঘটনা জনির সঙ্গেই শুধু ঘটেনি। ক্যালিফোর্নিয়ার ছোট্ট গ্রাম স্যালিনাসে জনির মতো আরও অনেকে আছে। বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছে যাদের মধ্যে পুরুষের বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পেয়েছে। কার্লা নামে সাত বছরের একটি মেয়েও যেমন পরবর্তীতে কার্লোস হয়ে উঠেছিল। ক্যালিফোর্নিয়ার স্যালিনাসে এই বিরল জিনগত রোগের প্রকোপ বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের থেকে তুলনামূলক বেশিই চোখে পড়ে। প্রতি ৯০ শিশুর মধ্যে এক জন এই রোগে আক্রান্ত। স্যালিনাসে এই রোগের প্রকোপ বেশি হওয়ার রহস্য অবশ্য আজও অজানা রয়ে গেছে।
চিকিৎসকদের মতে, জনি, কার্লোস এবং তাদের মতো গ্রামের অন্য অনেক শিশু এক বিরল জিনগত রোগে আক্রান্ত। রোগটির নাম ফাইভ আলফা রিডাকটেজ ডেফিসিয়েন্সি। ফাইভ আলফা রিডাকটেজ মানব শরীরের একটি উৎসেচক (এনজাইম)। এই উৎসেচকের ঘাটতি দেখা দিলেই এমন ঘটনা ঘটে।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, শরীরে যে জিনটি এই উৎসেচক তৈরির নির্দেশ বহন করে থাকে, তার মধ্যে কোনও সমস্যা দেখা দিলে এই উৎসেচক যথাযথ পরিমাণে উৎপন্ন হয় না।
ফাইভ আলফা রিডাকটেজ এর কাজই হল নারী শরীরে পুরুষের বৈশিষ্ট্য বাহক হরমোন টেস্টোস্টেরন এর বিপাক ঘটিয়ে তাকে ডিহাইড্রোটেস্টোস্টেরনে পরিণত করা। নারী শরীরে এটাই স্বাভাবিক জৈবিক ক্রিয়া। এর ফলেই পুরুষের বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পায় না এবং ওই ব্যক্তি এক জন নারী হিসাবে চিহ্নিত হন।
কিন্তু এই উৎসেচকের ঘাটতি দেখা দিলে টেস্টোস্টেরনের বিপাক ঘটিয়ে তাকে ডিহাইড্রোটেস্টোস্টেরনে পরিণত করার জৈবিক ক্রিয়াটি ব্যাহত হয় এবং শরীরে টেস্টোস্টেরন হরমোনের উপস্থিতির জন্য পুরুষের বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পায়।
এই বিরল জিনগত রোগে আক্রান্তদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, জিনগত ভাবে তারা পুরুষ হওয়া সত্ত্বেও বয়ঃসন্ধি পর্যন্ত তাদের মধ্যে পুরুষের বাহ্যিক বৈশিষ্ট্যগুলো (যেমন পুরুষের লিঙ্গের বৃদ্ধি, পেশির গঠন ইত্যাদি) প্রকাশ পায় না। তার পর ধীরে ধীরে তা প্রকাশ পেতে শুরু করে।জনি, কার্লোসদের ক্ষেত্রেও ঠিক এমনটাই ঘটেছিল।
সংবাদচিত্র/আন্তর্জাতিক