স্ট্রোকে মৃত্যু বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে একটি বড় সমস্যা। গবেষণায় জানা যায়, বিভিন্ন রোগের কারণে মৃত্যুহারের মধ্যে স্ট্রোকে মৃত্যুহার তৃতীয়। স্ট্রোক আক্রান্ত হওয়ার ফলে যারা জীবিত থাকেন তারা বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক সমস্যায় ভোগেন। স্ট্রোকের ফলে মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহে বাধা ঘটে এবং এতে মস্তিষ্কের কোষের মৃত্যু হয়। তাই পরবর্তী সময়ে মস্তিষ্কের ক্ষতিগ্রস্ত অংশটি কার্যক্ষমতা হারায়।
সিআরপির ফিজিওথেরাপির বিভাগীয় প্রধান আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘সাধারণত দুই ধরনের স্ট্রোক রয়েছে। ১. মস্তিষ্কের রক্ত সংরোধজনিত এবং অন্যটি রক্তক্ষরণজনিত স্ট্রোক। দুই কারণেই মস্তিষ্কের কিছু অংশ ঠিকমতো কাজ করতে পারে না।
স্ট্রোকের ঝুঁকি রোধে করণীয় ও ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা
উচ্চ রক্তচাপ, বেশি কোলেস্টেরল বা চর্বির পরিমাণ বেশি থাকলে ডায়াবেটিস বা মদ্যপান, ধূমপান ও তামাকজাতীয় দ্রব্য সেবন, পারিবারিক ইতিহাস ইত্যাদি। স্ট্রোক সাধারণত ৫৫ বছর এবং তার বেশি বয়সের পুরুষদের হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।
স্বাস্থ্যসম্মত জীবনমান ঠিক রাখলে ঝুঁকি অনেকটা কমানো যায়
যুক্তরাষ্ট্রের হার্ট অ্যাসোসিয়েশন ২০১৪ সালে স্ট্রোক প্রতিরোধের কিছু নিয়ম প্রকাশ করেছে। সেগুলো হলো:
১. উচ্চ রক্তচাপ সম্পর্কে জানা এবং নিয়ন্ত্রণ করা। ধূমপান না করা এবং মদ্যপান না করা বা বিরত থাকা, নিয়মিত ব্যায়াম করা।
২. বেশি পরিমাণে শাকসবজি খাওয়া, মাখন বা ঘি কম খাওয়া, খাবারে সোডিয়ামের পরিমাণ কমানো, রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখা, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা, শরীরের ওজন ঠিক রাখা, দুশ্চিন্তা না করা ইত্যাদি মেনে চললে স্ট্রোক প্রতিরোধ সম্ভব।
স্ট্রোক-পরবর্তী সমস্যা
শরীরের এক পাশ অথবা অনেক সময় দুই পাশ অবশ হয়ে যায়। মাংসপেশির টান প্রাথমিক পর্যায়ে কমে যায়। পরে ধীরে ধীরে টান বাড়তে থাকে। হাত ও পায়ে ব্যথা থাকতে পারে। হাত-পায়ের নড়াচড়া সম্পূর্ণ অথবা আংশিকভাবে কমে যেতে পারে। মাংসপেশি শুকিয়ে অথবা শক্ত হয়ে যেতে পারে। হাঁটাচলা, ওঠাবসা, বিছানায় নড়াচড়া ইত্যাদি কমে যেতে পারে। নড়াচড়া কমে যাওয়ার কারণে চাপজনিত ঘা দেখা দিতে পারে সোল্ডার বা অন্যান্য জয়েন্ট সরে যেতে পারে।
স্ট্রোক-পরবর্তী ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা
দ্রুত চিকিৎসা ও বিভিন্ন ওষুধ রোগীর জীবন বাঁচানোসহ স্থিতিশীল করতে পারলেও তার শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা ফিরিয়ে আনতে দীর্ঘদিন লেগে যায়। এ ক্ষেত্রে দরকার হয় ফিজিওথেরাপি। একজন ফিজিও থেরাপিস্টের মূল কাজ হলো রোগ-পরবর্তী সমস্যাগুলো নির্ণয় করে শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা ফিরিয়ে আনা। বর্তমানে অত্যাধুনিক ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার মাধ্যমে স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। তাই কেউ হঠাৎ আক্রান্ত হলে যত দ্রুত সম্ভব কাছাকাছি হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
সংবাদচিত্র ডটকম/স্বাস্থ্য