বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘এন্ট্রি লেভেলের’ শিক্ষক পদে প্রার্থী বাছাইয়ে অনুষ্ঠিত অষ্টাদশ শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় চূড়ান্তভাবে ‘অনুত্তীর্ণ’ বা ‘ফেল করা’ প্রার্থীরা তাদের উত্তীর্ণ ঘোষণা করে সনদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
রবিবার (১৫জুন) রাজধানীর ইস্কাটনে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ-এনটিআরসিএর কার্যালয়ের সামনে তারা এ দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত তারা সেখানে অবস্থানে ছিলেন। অবস্থান কর্মসূচির চলাকালে এনটিআরসিএ কার্যালয়ের সামনে পুলিশ সদস্যদেরও সতর্ক অবস্থায় দেখা যায়।
অষ্টাদশ শিক্ষক নিবন্ধনের প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ভাইভা বা মৌখিক পরীক্ষায় বসার জন্য নির্বাচিত হয়েছিলেন ৮৩ হাজার ৮৬৫ জন প্রার্থী।
গত ৪ জুন চূড়ান্ত ফল প্রকাশিত হলে তাদের মধ্য থেকে ৬০ হাজার ৫২১জন প্রার্থী উত্তীর্ণ হন।
অনুত্তীর্ণ ২৩ হাজার প্রার্থীর একাংশ রোববার সকাল থেকে এনটিআরসিএ কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে তাদের উত্তীর্ণ ঘোষণা করে শিক্ষক নিবন্ধন সনদ দেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন।
অনুত্তীর্ণ প্রার্থীদের দাবি, তারা প্রিলিমিনারি ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও ভাইভায় ভালো করলেও তাদের ‘ফেল করানো হয়েছে’। তাই তারা শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার সনদ দাবি করছেন।
মাদ্রাসার আইসিটি প্রভাষক পদে নিয়োগের জন্য নিবন্ধিত হতে অষ্টাদশ শিক্ষক নিবন্ধনের ভাইভায় অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হতে না পারা সিরাজগঞ্জের প্রার্থী মো. হাবিবুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভাইভায় ২৩ হাজার প্রার্থী ফেল করেছে। যাদের মধ্যে প্রায় তিন হাজার ভাইভায় অনুপস্থিত ছিলেন বা তাদের পদের সঙ্গে শিক্ষাগত যোগ্যতার সামঞ্জস্য নেই।
“বাকি ২০ হাজার প্রার্থীকে ভাইভায় ফেল করানো হয়েছে। আগে আমরা দেখেছি, এনটিআরসিএ ভাইভায় ফেল করায় না। সেখানে আমাদের ২০ হাজার প্রার্থীকে ফেল করানো হয়েছে।
“আমার দাবি ও আমাদের সবার দাবি, আমাদের সনদ দিতে হবে। এনটিআরসিএ চাকরি দেয় না, তারা একটা সনদ দেয় সে সনদপ্রাপ্তরা শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতা রাখেন। এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে যদি আমরা চাকরি নাও পাই, ওই সনদ দিয়ে আমরা নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পেতে পারব।”
আরবি প্রভাষক পদে নিবন্ধিত হতে শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশ নিলেও উত্তীর্ণ হতে না পারা ঠাকুরগাঁওয়ের প্রার্থী সাব্বির হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ শিক্ষক নিবন্ধনে প্রথম পর্যায়ে প্রায় ১৯ লাখ প্রার্থী আবেদন করেছিলেন। পরে প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় ৪ লাখ ৭৯ হাজার প্রার্থী উত্তীর্ণ হয়ে লিখিত পরীক্ষায় বসেন।
“তাদের মধ্য থেকে মাত্র ৮৩ হাজার ৮৬৫ জন লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। আমরা প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষা উত্তীর্ণ হয়েছি, আমরা যোগ্য।”
তিনি বলেন, “আমাদের দাবি, আমাদের যে ২০ হাজার প্রার্থীকে ভাইভায় অকৃতকার্য করা হয়েছে, আমাদের সকলের দাবি, সকলকে সনদ দিতে হবে।”
আরবি প্রভাষক পদে নিবন্ধিত হতে মৌখিক পরীক্ষা দিয়েও উত্তীর্ণ হতে না পারা মাগুরার তাওয়াক্কুল বিল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা মৌখিক পরীক্ষার জন্য মাত্র ৮৩ হাজার টিকেছি। শিক্ষক নিবন্ধনে ভাইভার নম্বর যোগ হয় না। এখন ১ লাখ ১০ হাজার শিক্ষক পদ খালি আছে, কিন্তু তারা আমাদের ২৩ হাজার জনকে বাদ দিয়েছে, আমরা মনে করি আমাদের সঙ্গে জুলুম করা হয়েছে।
“আমাদের দাবি, আমাদের আজকেই উত্তীর্ণ ঘোষণা করতে হবে। আমাকে ভাইভায় ছয়টা প্রশ্ন করা হয়েছিল, আমি পাঁচটা প্রশ্নের উত্তর দিতে পেরেছি, কিন্তু আমাকে ফেল করানো হয়েছে।”
দুপুরে অনুত্তীর্ণ প্রার্থীদের পক্ষ থেকে এনটিআরসিএকে দেওয়া স্মারকলিপিতে অষ্টাদশ শিক্ষক নিবন্ধনের ফল পুনর্বিবেচনার দাবি জানানো হয়।
সেখানে লেখা হয়, বিধি অনুযায়ী একজন পরীক্ষার্থী লিখিত এবং মৌখিক পরীক্ষায় ৪০ শতাংশ নম্বর পেলে পাস বলে গণ্য হবেন। লিখিত পরীক্ষায় ৪০ শতাংশ নম্বর পেয়েই একজন পরীক্ষার্থী ভাইভার জন্য নির্বাচিত হন। আর ভাইভার ২০ নম্বরের মধ্যে ১২ হচ্ছে অ্যাকাডেমিক রেজাল্টের ওপর। বাকি ৮ নম্বর ড্রেসকোড, আচরণ এবং প্রশ্ন জিজ্ঞাসা, যার মধ্যে ৩.২ নম্বর পেলেই প্রার্থীর পাস করার কথা।
“অনেকেই সবগুলো প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেওয়ার পরেও ফেল করেছেন। যেটা ভাইভা বোর্ডের মনগড়া সিদ্ধান্ত ছিলো যা অনেক মেধাবী পরীক্ষার্থীর মনে দাগ কেটেছে।”
এই যুক্তিতে অষ্টাদশ শিক্ষক নিবন্ধনের ফল পুনর্বিবেচনার দাবি জানানো হয় স্মারকলিপিতে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনটিআরসিএর চেয়ারম্যান পদের দায়িত্বে থাকা সদস্য মুহম্মদ নূরে আলম সিদ্দিকী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার বিধিমালা অনুযায়ী ফল পুনর্নীরিক্ষণের সুযোগ নেই। প্রার্থীরা অভিযোগ তুলেছেন, এনটিআরসিএ ভাইভাতে তাদের মনগড়া নম্বর দিয়ে ফেল করিয়েছে।
“তারা তাদের দাবি জানিয়ে আমাদের স্মারকলিপি পাঠিয়েছে, সেটি আমরা আমাদের কর্তৃপক্ষ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগে পাঠিয়ে দিয়েছি।”
নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, “তারা অভিযোগ তুলছেন এনটিআরসিএর বিরুদ্ধে। যেহেতু আমাদের বিরুদ্ধেই অভিযোগ, আমাদের এ ক্ষেত্রে কিছু করার নাই। আমরা মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি জানিয়েছি। মন্ত্রণালয় প্রার্থীদের দাবি আমলে নিয়ে এনটিআরসিএর বিরুদ্ধে তদন্ত করে দেখতে পারে আমরা কি আসলেই মনগড়া নম্বর দিয়েছি কি-না।”
২০২৩ সালের ২ নভেম্বর ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে এনটিআরসিএ। এ পর্যায়ে রেকর্ডসংখ্যক প্রায় ১৯ লাখ প্রার্থী আবেদন করেন।
প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হয় ২০২৪ সালের ১৫ মার্চ। এরপর গত বছরের ১৪ অক্টোবর লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। তাতে ৮৩ হাজার ৮৬৫ জন উত্তীর্ণ হন, পাসের হার ছিল ২৪ শতাংশ।
২০০৫ সাল থেকে এনটিআরসিএ শিক্ষক নিবন্ধন সনদ দিচ্ছে। তবে শুরুর ১০ বছর শিক্ষক নিয়োগের ক্ষমতা ছিল সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি বা ম্যানেজিং কমিটির হাতে।
২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর সরকার এনটিআরসিএকে সনদ দেওয়ার পাশাপাশি শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশের ক্ষমতাও দেয়।
এরপর পাঁচটি গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে চলতি বছরের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ১ লাখ ৩২ হাজার ৮৯৮ জন শিক্ষক নিয়োগের চূড়ান্ত সুপারিশ করেছে এনটিআরসিএ।
সংবাদচিত্র ডটকম/জাতীয়