সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার ওপর সহিংস ও অপমানজনক আচরণের ঘটনার নিন্দা জানিয়ে দুটি মানবাধিকার সংগঠন পৃথক বিবৃতি দিয়েছে।
তারা বলেছে, বিচারহীনভাবে জনতার হাতে আইন তুলে নেওয়া মানবাধিকার লঙ্ঘনের গুরুতর দৃষ্টান্ত, যা দেশের আইনি কাঠামো ও ন্যায়বিচার ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। সরকারের এই দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। কোনো ব্যক্তি অপরাধ করলে বা তাঁর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ থাকলে দেশের প্রচলিত আইনে তাঁর বিচার করতে হবে। এভাবে মব সৃষ্টির ধারাবাহিকভাবে চলতে থাকলে এটি ভবিষ্যতে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পথকে আরও জটিল করে তুলতে পারে।
আজ সোমবার গণমাধ্যমে আলাদা আলাদা বিবৃতি পাঠিয়ে দুটি মানবাধিকার সংগঠন এসব কথা বলেছে। তারা সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার প্রতি অপমানজনক ও সহিংস আচরণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে।
সরকারের নীরবতা সহিংস গোষ্ঠীগুলোর অপকর্মে প্রভাব জোগাচ্ছে: আসক
মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এক বিবৃতিতে বলেছে, কোনো নাগরিকের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ থাকলে তা নিষ্পত্তির একমাত্র পথ হচ্ছে সংবিধান ও আইনের নির্ধারিত প্রক্রিয়া। বিচারব্যবস্থার বাইরে গিয়ে যেকোনো অপমানজনক ও সহিংস আচরণ শুধু ব্যক্তি–অধিকারকেই লঙ্ঘন করে না, তা একটি সভ্য ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার মূল ভিত্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এ ধরনের ঘটনা ধারাবাহিকভাবে ঘটানো হলে তা বিচারহীনতার একটি বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত তৈরি করে বলে মনে করে আসক। সংগঠনটি বলছে, এটি আইনের শাসনের পরিবর্তে ‘মব সংস্কৃতি’কে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার প্রচ্ছন্ন সংকেত দেয়।
এসব ঘটনায় সরকারের দায় এড়ানোর সুযোগ নেই বলে মনে করে আসক। বিবৃতিতে সংগঠনটি বলছে, সরকারের পক্ষ থেকে এ ধরনের সংঘবদ্ধ সহিংসতার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যায়নি। আপাতদৃষ্টে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নীরবতা ও নিষ্ক্রিয়তা এসব সহিংস গোষ্ঠীর অপকর্মে পরোক্ষভাবে প্রভাব জোগাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। রাষ্ট্রকে এসব বিষয়ে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে আসক।
অপরাধের বিচার আইন অনুযায়ী হতে হবে, মবের মাধ্যমে নয়: এইচআরএসএস
আরেক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস) এক বিবৃতিতে বলেছে, কোনো ব্যক্তি অপরাধ সংঘটিত করলে দেশের প্রচলিত আইনে তাঁর বিচার করতে হবে। বিচার ব্যতিরেকে ‘মব’ বা জনতার হাতে আইন তুলে নেওয়ার ঘটনা মানবাধিকার লঙ্ঘনের গুরুতর দৃষ্টান্ত। এ ধরনের আচরণ দেশের আইনি কাঠামো, মানবিক মূল্যবোধ ও ন্যায়বিচার ব্যবস্থার প্রতি চ্যালেঞ্জ।
এসব ঘটনার যথাযথ তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা এবং ভবিষ্যতে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকার, সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানায় সংগঠনটি।
প্রসঙ্গত, রোববার সাবেক সিইসি নূরুল হুদার বাসায় ‘মব’ তৈরি করে কিছু লোক তাঁকে জুতার মালা পরিয়ে মারধর করে। ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পরে তাঁকে পুলিশে হস্তান্তর করা হয়।
নূরুল হুদা ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় সিইসি ছিলেন, যা ‘রাতের ভোট’ নামে পরিচিতি পেয়েছিল। বিএনপি সম্প্রতি তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করেছে, যেখানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মোট ১৯ জনের নাম রয়েছে।
সংবাদচিত্র ডটকম/জাতীয়