নানামুখি চ্যালেঞ্জের মুখে অন্তর্বর্তী সরকার - সংবাদচিত্র ডটকম/songbadchitro.com
শনিবার, ৯ নভেম্বর ২০২৪ , ২৪ কার্তিক ১৪৩১
  1. প্রচ্ছদ
  2. বিশেষ সংবাদ
  3. নানামুখি চ্যালেঞ্জের মুখে অন্তর্বর্তী সরকার

নানামুখি চ্যালেঞ্জের মুখে অন্তর্বর্তী সরকার

প্রতিকী ছবি

অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের এক মাস পূর্ণ হলো আজ রবিবার (৮ সেপ্টেম্বর)। নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে সময় যত গড়াচ্ছে বিগত সরকারের অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থ লোপাটের ভয়ংকর সব চিত্র ফুটে উঠছে। বিশেষ করে দেশের অর্থনীতির কিছু ক্ষেত্র ও আইনশৃঙ্খলায় অবনমন লক্ষ করা যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে দেশের আর্থিক খাতসহ প্রত্যেকটি খাত সংস্কারে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার।

পোশাক, ব্যাংক, বিদ্যুৎ, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতসহ বেশ কিছু খাতের বিদ্যমান সংকটগুলো মোকাবিলা করে দেশকে এগিয়ে নেওয়া বর্তমান সরকারের সামনে এখন বড় চ্যালেঞ্জ।

পোশাক খাত
এই মুহূর্তে বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণশক্তি পোশাক শিল্প। রপ্তানি আয়ের ৮৪ শতাংশ আসে এই খাত থেকে। জিডিপিতে পোশাক শিল্পের অবদান প্রায় ১১ ভাগ। পোশাক শিল্পে প্রায় ৪৪ লাখ শ্রমিক সরাসরি সম্পৃক্ত, যার মধ্যে ৬০ শতাংশ নারী শ্রমিক। পোশাক শিল্পকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা অন্যান্য বাণিজ্য মিলিয়ে প্রায় ৩ কোটি মানুষের জীবিকা নির্ভর করছে এই খাতের ওপর।
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর ৮ আগস্ট নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শপথ নেয়। বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের মতো পোশাক খাতের শ্রমিকরাও এতদিন ধরে তাদের পুঞ্জিভূত দাবি উত্থাপন করতে থাকে। ঢাকার আশুলিয়া, সাভার, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে দেখা দেয় শ্রমিক অসন্তোষ। রাস্তা বন্ধ করে তারা বকেয়া বেতনসহ বিভিন্ন দাবি তুলে ধরে। এ সময় অনেক মালিক তাদের পোশাক কারখানা বন্ধ রাখে। গাজীপুর ও ঢাকায় গত ৩ আগস্ট অন্তত ৬০টি কারখানা শ্রমিক বিক্ষোভে বন্ধ ঘোষণা করে মালিক পক্ষ। জুলাই বিপ্লবের সময় পুলিশের বিতর্কিত অবস্থানের কারণে যথাযথভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারছে না শিল্প পুলিশও।

গত ৬ সেপ্টেম্বর (শুক্রবার) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনী মিলনায়তনে গার্মেন্টস শিল্পে বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে জাতীয় শ্রমিক ঐক্য। সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির নেতারা বলেন, গার্মেন্টস শিল্পে অস্থিরতা চলছে। একের পর এক গার্মেন্টস কারখানা মালিকগণ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। ইতোমধ্যে আশুলিয়া-সাভার-গাজীপুরের প্রায় দুই শতাধিক গার্মেন্টস কারখানা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হওয়ায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কিছু কারখানা শ্রমিকদের মজুরি সংক্রান্ত আন্দোলনে বন্ধ হলেও বেশির ভাগ কারখানা পরিকল্পিতভাবে হামলা-ভাঙচুরের কথা বলে বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।

যদিও সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর তাদের দোসররা ক্ষমতা ফিরে পেতে ব্যাকুল হয়ে উঠেছে। তারা জুডিশিয়াল ক্যু, সনাতন ধর্মালম্বীদের উসকে দিয়ে অরাজকতা সৃষ্টির পায়তারা, আনসার বিদ্রোহসহ বিভিন্ন ইস্যু সৃষ্টি করে ছাত্র-জনতার বিপ্লবকে প্রতিবিপ্লবে রূপ দেওয়ার নানামুখী ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে।

এদিকে যৌথ বাহিনীর সম্পৃক্ততায় দ্রুত পোশাক কারখানায় শৃঙ্খলা ফেরানোর ওপর জোর দিয়েছেন শ্রমমন্ত্রী আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়া।
বিশ্বে চীনের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ এখন বাংলাদেশ। তাড়াতাড়ি যদি এ শিল্পের অস্থিরতা দূর করা না যায় তবে আমেরিকা ও ইউরোপের ক্রেতারা অন্য দেশের দিকে ঝুঁকতে পারে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য অশনি সংকেত।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি
শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর পর তার মিত্রদের ওপর প্রতিশোধমূলক হামলা হয়েছে। বিশেষ করে পুলিশ যারা ছাত্র জনতার আন্দোলনে গুলিবর্ষণ করে শত শত ছাত্রকে হত্যা ও আহত করেছে; তাদের ওপরও পাল্টা হামলা হয়েছে। এতে অন্তত ৪৬ জন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

আন্দোলনের পর পুলিশ বাহিনীর আত্মবিশ্বাস তলানিতে এসে ঠেকেছে। সেনাবাহিনীর সহায়তায় তাদের ব্যারাকে ফিরতে হয়েছে। এখনো কোথাও কোথাও সেনাবাহনীকে পুলিশের পাশে থাকতে হচ্ছে।

দেশের আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে পুলিশ বাহিনীর বিকল্প নেই। কিন্তু তাদের দুর্বল ও ভীতিপূর্ণ অবস্থানের কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিকে আনা কঠিন হয়ে পড়ছে। বিশেষ করে রাজধানী এবং গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জের শিল্প এলাকাগুলোতে প্রতিদিনই আন্দোলন হচ্ছে রাস্তা আটকে। অনেকে বিশৃঙ্খলা করছে, কিন্তু এগুলো সহজে সুরাহ করা কঠিন হয়ে পড়ছে।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানায়, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম কাজ হবে জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি বাকস্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের পথ তৈরি করে দেওয়া। একই সঙ্গে নতুন করে যাতে আর কোনো সহিংসতার ঘটনা না ঘটে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া। এটা নতুন সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি নিরপেক্ষ অবস্থানে থেকে সরকারকে সহযোগিতা করে তাহলে পরিস্থিতি দ্রুত শান্ত হয়ে আসবে।

ব্যাংক খাত
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ব্যাংক লোপাটের ভয়ংকর সব গল্প উঠে এসেছে। নামে-বনামে ইসলামী ব্যাংকের মোট ঋণের অর্ধেকের বেশি নিয়েছে এস আলম। ইসলামী ব্যাংকের নতুন চেয়ারম্যান ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ জানান, চলতি বছরের জুন শেষে ইসলামী ব্যাংকের ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৭৪ হাজার ৭৬০ কোটি টাকা। সেই হিসাবে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা এস আলমের পকেটে আছে।

ঋণের নামে ব্যাংকের টাকা হরিলুটের দ্বিতীয় শীর্ষ অবস্থানে বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে একাই ব্যাংক খাত থেকে ঋণের নামে প্রায় সাড়ে ৩৬ হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ বের করে নিয়েছেন।

২০২৩ এ বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বর্তমানে দেশে ব্যাংকিং খাতের প্রধানতম সমস্যা হচ্ছে ক্রমবর্ধমান ও নিয়ন্ত্রণহীন কুঋণ বা মন্দ ঋণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, বর্তমানে ঋণের ৯.৯৩ শতাংশ হচ্ছে কুঋণ; যার মধ্যে ২০ শতাংশের বেশি মন্দ ঋণ আছে ৯টি ব্যাংকের, বিশেষত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর।

বিগত সরকারের আমলে লুটের কারণে ব্যাংগুলোতে তৈরি হয়েছে তীব্র তারল্য সংকট। বিশেষ করে ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলোর মধ্যে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক এবং আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকে তারল্য সংকটটা তীব্র।

এই অবস্থায় অনেক গ্রাহককে চেক নিয়ে ব্যাংক থেকে খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে। অনেক ব্যাংকের বুথে কোনো টাকা নেই। অনেকের কার্ডে টাকা থাকলেও কোনো বুথ থেকে তুলতে পারছেন না।

সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, ‘বাংলাদেশ থেকে ব্যাংকের মাধ্যমে প্রচুর অর্থ পাচার হয়েছে। ব্যাংকিং খাত থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ লুটপাট করা হয়েছে। ফলে, অনেক ব্যাংক তারল্য সংকটে পড়েছে। সংকটে পড়া ব্যাংকগুলোকে তারল্য সহায়তা দেওয়া হবে। এ জন্য আমরা সংকটে থাকা ৮ ব্যাংককে প্রয়োজন অনুযায়ী তারল্য সহায়তা দিতে বলেছি। গ্যারান্টার হিসেবে কাজ করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। আমরা সীমিত পরিসরে তারল্য সহায়তা দিতে চাই। সরকার আমানতকারীর কথা ভেবে তাদের পাশে দাঁড়াবে।’

গভর্নর বলেন, ‘আমরা নতুন টাকা ছাপিয়ে আর কোনো ব্যাংকে তারল্য সহায়তা দেবো না। কারণ, আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে গেলে এখন ২ লাখ কোটি টাকা ছাপিয়ে দিতে হবে। এতে দেশের মুদ্রাবাজার, বিদেশি মুদ্রার বাজার, মূল্যস্ফীতিসহ সবকিছুই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। এ জন্য সংকটে থাকা ৮ ব্যাংককে প্রয়োজন অনুযায়ী তারল্য সহায়তা দিতে বলেছি।’

তিনি বলেন, ‘আপতত এসব ব্যাংক কোনো ধরনের ঋণ বিতরণ করবে না। শুধু আমানতকারীদের কিছু কিছু টাকা ফিরত দেবে। তবে, এতে আতঙ্কগ্রস্ত হওয়ার কিছু নেই। কারণ, আমরা আমানতকারীদের অধিকার সংরক্ষণ করব। সে ক্ষেত্রে আমাদের কিছুটা সময় দিতে হবে।’
গভর্নর বলেন, ‘আমরা আমানতকারীদের অনুরোধ করব, আপনারা একসাথে টাকা উত্তোলন করবেন না। আপনাদের প্রয়োজনমতো টাকা উত্তোলন করুন। আমাদের কিছুটা সময় দেন। আমরা আশা করি, ব্যাংকগুলো ঘুরে দাঁড়াবে।

নির্বাচন
দুই দিন হলে কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন পদত্যাগ করেছে। এখন একটা নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা এবং নির্বাচন দিয়ে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়া এই সরকারের অন্যতম চ্যালেঞ্জ। কেননা সরকারকে পুরো নির্বাচন ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে হবে। তাছাড়া গত ৩টি জাতীয় নির্বাচনে মানুষ যথাযথভাবে ভোট দেয়নি। ফলে মানুষের মধ্যে ভোটের আগ্রহ তৈরি করে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করা সরকারের অন্যতম চ্যালেঞ্জ।

গত জানুয়ারির যে নির্বাচনে শেখ হাসিনা পঞ্চম মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হন, সেই নির্বাচন ছিল বেশির ভাগ মানুষের কাছে অগ্রহণযোগ্য। প্রধান বিরোধী দলগুলো নির্বাচন বর্জন করেছিল।

ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের বিশ্লেষক টমাস কিনের মতে, শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ যে ব্যাপক জনসমর্থন পেয়েছিল, তার একটি বড় কারণ এটি। কারণ গত ১৫ বছরে দেশটিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক কোনো নির্বাচন হয়নি। অন্তর্বর্তী সরকারকে বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফেরানোর জন্য দীর্ঘমেয়াদে কাজ শুরু করা প্রয়োজন। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় দেশটিতে গণতান্ত্রিক পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ কত দিন হবে, কবে নির্বাচন হবে এবং নির্বাচনে কারা অংশ নিতে পারবেন, সেসব সম্পর্কে এখনো কিছুই জানা যাচ্ছে না।

বিদ্যুৎ খাত
সাবেক সরকারের ভুল জ্বালানি নীতির কারণে দীর্ঘদিন ধরে দেশের জ্বালানিনিরাপত্তা উপেক্ষিত রয়েছে। সরকারের পতনের পর যা আরও স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। প্রায় ১৬ বছরের শাসনামলে গৃহীত একের পর এক বিতর্কিত নীতি, আমদানিনির্ভরতা ও একচেটিয়া সিদ্ধান্ত এ সংকটের প্রধান কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে মাত্র ১ হাজার ৮৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যা জ্বালানি খাতে গত সরকারের সীমাহীন উদাসীনতা প্রমাণ।

বর্তমান সময়ে দেশের জ্বালানির মজুত কমেছে আশঙ্কাজনকভাবে, যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হতে না হতেই সাধারণ মানুষসহ শিল্প খাতসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বেশ উদ্বিগ্ন, বিশেষত তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের সরবরাহ নিয়ে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এ অবস্থায় দেশের জ্বালানি খাতে সংকট আরও বাড়তে পারে। পিছিয়ে যেতে পারে গভীর সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রমের উদ্যোগসহ স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদে নেওয়া বিভিন্ন প্রকল্প। আপাতত যেহেতু অন্তর্বর্তী সরকার দেশ চালাবে, তাই নতুন বিনিয়োগও কমে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। আমদানিনির্ভরতায় গ্যাস খাতে চরম বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। এতে শিল্প উৎপাদন চরম হুমকির মুখে পড়তে যাচ্ছে।

দীর্ঘদিন ধরে সরকারের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের নিরাপত্তাজনিত অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা বিরাজমান থাকা সত্ত্বেও বিগত সরকার তা উপেক্ষা করে একটি ভঙ্গুর আমদানিনির্ভর জ্বালানি খাত তৈরি করে রেখেছে। ইউক্রেন–রাশিয়া যুদ্ধ এবং ফিলিস্তিন–ইসরায়েল যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের গভীর সংকট বাড়লে দেশের বাজারে তার বিরূপ প্রভাব পড়ে। অন্যদিকে দেশের ডলার–সংকটে আর্থিক পরিস্থিতি আমদানি সহায়ক নেই।

জ্বালানি বিশ্লেষক ও ভূতাত্ত্বিক অধ্যাপক বদরুল ইমাম সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, বিগত সরকার দেশের জ্বালানি খাত এমন এক পরিস্থিতিতে ফেলে রেখে গেছে, যেখান থেকে নতুন সরকারের জন্য পরিস্থিতি সামাল দেওয়া বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। বিশেষ করে চাহিদা অনুযায়ী জ্বালানির জোগানের নিশ্চয়তা, বিদ্যমান চুক্তির আওতায় জ্বালানি আমদানি ও চলমান প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন কঠিন হতে পারে। এ ছাড়া সমুদ্রে ও স্থলভাগে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানসহ জ্বালানি খাতে বিদেশি ও বেসরকারি বিনিয়োগও কমার আশঙ্কা রয়েছে। সব মিলিয়ে সামনের দিনগুলোতে জ্বালানি খাতে সংকটগুলো আরও প্রকট হতে পারে।

অব্যাহত অব্যবস্থাপনায় দেশের রিজার্ভের একটা বড় অংশ খেয়ে দিয়ে গেছে সাবেক সরকার। তারা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণেও ছিল নজিরবিহীনভাবে ব্যর্থ। এ সংক্রান্ত তথ্য আবার বিকৃত করা হচ্ছিল। এ অবস্থায় যে উচ্চাভিলাষী বাজেট প্রণীত হয়েছিল, সেটাও দ্রুত কমাতে হবে। চলমান উন্নয়ন প্রকল্পও করতে হচ্ছে যাচাই-বাছাই। এ সব ক্ষেত্রেও রয়েসয়ে এগোনোর সুযোগ কিন্তু নেই। দায়িত্ব নিতে না নিতেই নজিরবিহীন বন্যাও মোকাবিলা করতে হচ্ছে সরকারকে। সরকারের খাদ্য মজুত কেমন, সে প্রশ্ন উঠেছে দ্রুতই। পণ্যবাজার কিছুটা হলেও স্বাভাবিক করে আনার দায়ও রয়েছে সরকারের। সেজন্য জোর দিতে হচ্ছে আমদানি স্বাভাবিকীকরণে। বিশেষ কোনো দেশের অসহযোগিতা করার শঙ্কায় এ ক্ষেত্রে বিকল্প উৎসও চিহ্নিত করতে হচ্ছে! খাদ্যপণ্য আমদানিকারক বড় ব্যবসায়ীদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলে আবার সরবরাহ সংকট দেখা দেয় কিনা, সেদিকেও কি নজর রাখতে হচ্ছে।

অন্যান্য
সরকারের আরও চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে, রাজপথ সচল রাখা, কলকারখানা, বিশেষত রপ্তানি খাত স্বাভাবিক রাখা, পণ্যবাজার শান্তকরণ, পালটা দখলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতসহ সেবা প্রতিষ্ঠানে অরাজকতা মোকাবিলা, ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি।

ক্ষমতাচ্যুতদের ওপর প্রতিশোধমূলক হামলা, এর মধ্যে আবার ‘ধর্মীয় সংখ্যালঘু’ ইস্যু সামলাতে সরকারকে কম বেগ পেতে হয়নি। এমন গণঅভ্যুত্থানের পর ক্ষমতাচ্যুতদের প্রতি ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা তো কঠিন। তাদের গ্রেপ্তার এড়িয়ে থাকতে পারা আর পালিয়ে যাওয়াটাও সরকারের জন্য অস্বস্তিকর। এ নিয়ে আন্দোলনকারীদের দিক থেকেও কম কথা শুনতে হচ্ছে না। সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষজনকে হত্যা মামলায় আসামি করার মতো স্পর্শকাতর ইস্যুও রয়েছে।

এই অবস্থায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পথ আগেকার যে কোনো সরকারের চেয়ে অনেক বেশি কঠিন। তবে তার সমর্থনে প্রকাশ্যেই রয়েছে গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী ছাত্রসমাজ আর সেনাবাহিনী। ব্যাপক ‘তরল জনসমর্থন’ও রয়েছে সরকারের পেছনে। এর ওপর ভর করে অগ্রাধিকার ধরে ধরে তাকে এখন এগোতে হবে।

সংবাদচিত্র ডটকম/বিশেষ সংবাদ

শেয়ার করুনঃ

আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের লড়াকু সংগ্রহ

৯ নভেম্বর, ২০২৪, ৮:১৩

নির্বাচিত সরকার ছাড়া সংস্কার সম্ভব নয়: তারেক রহমান

৯ নভেম্বর, ২০২৪, ৭:৪৪

দেড় যুগ পর তামিম-সাকিব-মুশফিককে ছাড়া ওয়ানডে খেলছে বাংলাদেশ

৯ নভেম্বর, ২০২৪, ৭:৪০

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের নতুন সাংগঠনিক টিম ঘোষণা

৯ নভেম্বর, ২০২৪, ৭:২৭

ফ্যাসিবাদ কিন্তু মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে শুরু করেছে: মির্জা ফখরুল

৯ নভেম্বর, ২০২৪, ৭:২২

১ জানুয়ারি থেকে স্মার্ট ফ্যামিলি কার্ডেই মিলবে টিসিবির পণ্য

৯ নভেম্বর, ২০২৪, ৭:১৮

এলজিইডির পিডি নিয়োগের প্রস্তাব তালিকায় অসন্তোষ : আওয়ামীপন্থীদের প্রাধান্য!

৯ নভেম্বর, ২০২৪, ৭:১৩

আবারও চালু হচ্ছে নগর পরিবহন

৯ নভেম্বর, ২০২৪, ৫:০৭

ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ নিয়ে যা বললেন প্রেস সচিব শফিকুল আলম

৯ নভেম্বর, ২০২৪, ৫:০২

পাকিস্তানে রেল স্টেশনে ভয়াবহ বোমা বিস্ফোরণ, নিহত ২১

৯ নভেম্বর, ২০২৪, ৪:২৮

বিয়ের প্রলোভনে কলেজছাত্রীকে ধর্ষণ, যুবক গ্রেফতার

৮ মে, ২০২১, ৪:৫৩

চেলসির সঙ্গে ড্র, ফাইনালের পথ কঠিন হলো রিয়ালের

২৮ এপ্রিল, ২০২১, ৬:৫৩

রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে দিল্লিকে হারিয়ে শীর্ষে কোহলিরা

২৮ এপ্রিল, ২০২১, ৬:৫১

আরও ২/৩ দিন হাসপাতালে থাকতে হবে খালেদা জিয়াকে

২৮ এপ্রিল, ২০২১, ৬:৪৩

খাদ্যের সঙ্গে পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিতেও কাজ হচ্ছে: প্রধানমন্ত্রী

২২ মে, ২০২১, ১০:০৭

পপ সম্রাটের বিরদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ প্রত্যাখান

২৮ এপ্রিল, ২০২১, ৬:৪০

ইউনেসকোর প্রেস ফ্রিডম পুরস্কার জিতলেন মারিয়া রেসা

২৮ এপ্রিল, ২০২১, ৬:৩৮

দিরাইয়ে বজ্রপাতে দুই সহোদরের মৃত্যু, আহত ৩

২৮ এপ্রিল, ২০২১, ৬:৩৭

রাজধানীতে অভিযানে গ্রেফতার ৩০

২৮ এপ্রিল, ২০২১, ৬:৩৬

ওবায়দুল কাদের আপনি রেহাই পাবেন না: কাদের মির্জা

২৮ এপ্রিল, ২০২১, ৬:৩৩


উপরে