জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরিচ্যুত ৯৮৮ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে পুনরায় চাকরিতে ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত। মঙ্গলবার সকালে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের বেঞ্চ এই রায় দেন। এর মধ্য দিয়ে প্রায় ১৪ বছর আগে চাকরি হারানো এই বিপুল সংখ্যক কর্মজীবী অবশেষে ন্যায়বিচার পেলেন।
২০০৩ ও ২০০৪ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগবিধি অনুসরণ করে স্মারক নম্বরের মাধ্যমে ৯৮৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু ২০১১ সালে উচ্চ আদালতের নির্দেশে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের এক সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে তাদের চাকরিচ্যুত করা হয়। অভিযোগ ছিল, এই নিয়োগ ছিল অবৈধ ও অনিয়মতান্ত্রিক।
এই রায়ের পেছনে ষড়যন্ত্রের অভিযোগও রয়েছে। অনেকেই দাবি করেছেন, কয়েকজন অসাধু কর্মকর্তা আদালতে ভুল ও বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে এই রায় আদায় করেন। ফলে নির্দোষ কর্মচারীরা চাকরি হারান, অনেকে চরম মানবেতর জীবন যাপন করেন, এমনকি মৃত্যুবরণ করেন বিনা চিকিৎসায়।
চাকরিচ্যুতির পরপরই আইনি লড়াই শুরু হয়। ২০০৪ সালে সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন, যা ২০০৬ সালে খারিজ হয়ে যায়। পরে গাজীপুর-১ আসনের সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট আ ক ম মোজাম্মেল হক ২০১০ সালে পুনরায় রিভিউ আবেদন করেন। এরপরই আদালত নিয়োগ অবৈধ ঘোষণা করে ২০১১ সালে চাকরিচ্যুতির আদেশ দেন।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এই ৯৮৮ কর্মকর্তা-কর্মচারী নতুন করে আশায় বুক বাঁধেন। গত ৫ আগস্ট তারা চাকরি ফেরতের দাবি নিয়ে আন্দোলনে নামেন। তাদের পাশে দাঁড়ায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান কর্তৃপক্ষও।
এরই ধারাবাহিকতায় গত ৯ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় ২০০৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রতিহিংসামূলকভাবে চাকরিচ্যুত এসব কর্মচারীদের পুনর্বহালের জন্য রিভিউ আবেদন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
আজকের আপিল বিভাগের রায়ে স্পষ্ট হয়েছে, নিয়োগের প্রক্রিয়া যথাযথ ছিল এবং চাকরিচ্যুতির সিদ্ধান্ত ছিল অনিয়মতান্ত্রিক। এই রায় শুধু চাকরি ফেরতের দ্বার উন্মোচন করেনি, বরং এটি দেশে আইনের শাসনের একটি শক্ত বার্তা বহন করে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
চাকরিচ্যুত কর্মচারীদের পরিবারের সদস্যরা এই রায়কে “আল্লাহর পক্ষ থেকে ন্যায়ের বিজয়” হিসেবে অভিহিত করছেন।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আপিল বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী দ্রুত এই ৯৮৮ জনকে পুনর্বহাল করার প্রক্রিয়া শুরু হবে। প্রয়োজনে নিয়োগ সংক্রান্ত অন্যান্য বিষয়গুলোও যাচাই-বাছাই করে সমন্বয় করা হবে।
এই রায়ের মাধ্যমে বহু বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটল, আর দীর্ঘদিনের দুঃসহ জীবনের শেষে চাকরি ফিরে পেতে যাচ্ছেন একদল অবহেলিত সরকারি কর্মচারী।
সংবাদচিত্র ডটকম/আইন ও বিচার