জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) দলীয় প্রতীক হিসেবে শাপলা পাচ্ছে না। নির্বাচন কমিশন (ইসি) জানিয়েছে, শাপলা বাংলাদেশের জাতীয় প্রতীকের অংশ হওয়ায় এটি বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব নয়।
মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ের সামনে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য দেন ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ।
তিনি বলেন, “শাপলা প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া যাচ্ছে না। এনসিপিকে বিকল্প প্রতীকের জন্য আবেদন করতে বলা হয়েছে।”
কেন শাপলা দেওয়া হচ্ছে না
ইসির ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে-
শাপলা বাংলাদেশের জাতীয় প্রতীকগুলোর একটি; সাংবিধানিকভাবে এর বিশেষ মর্যাদা রয়েছে। জাতীয় প্রতীকগুলো নির্বাচনী প্রতীক হিসেবে ব্যবহার না করার নির্দেশনা রয়েছে নির্বাচনী আচরণবিধিতে। এজন্য সম্প্রতি প্রকাশিত ১১৫টি প্রতীকের তালিকায় শাপলাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
এনসিপির দাবি
এনসিপির নেতারা বলছেন, তাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল শাপলাকে প্রতীক হিসেবে দেওয়া হোক।
তাদের অভিযোগ, শাপলা বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকাকে রাখা হয়েছে, যা অন্যায্য।
দলটির মতে, শাপলা জনগণের কাছে সহজবোধ্য ও গ্রহণযোগ্য প্রতীক, তাই এটি রাজনৈতিকভাবে ব্যবহারযোগ্য হওয়া উচিত।
পটভূমি
এনসিপি চলতি বছর নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করে। নিবন্ধন প্রক্রিয়া বর্তমানে শেষ পর্যায়ে রয়েছে। নিবন্ধনের সময় দলটি প্রথম পছন্দ হিসেবে শাপলা প্রতীক চায়। বিকল্প হিসেবে কলম ও মোবাইল ফোন প্রতীকও প্রস্তাব করা হয়।
নির্বাচন কমিশন মোট ১১৫টি প্রতীকের তালিকা প্রকাশ করলেও শাপলা প্রতীক বাদ যায়। তাছাড়া
অতীতে কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলকে শাপলা প্রতীক দেওয়া হয়নি। জাতীয় ফুল হওয়ায় এটি বরাদ্দ না দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন।
বিশ্লেষণ
বিশেষজ্ঞদের মতে, জাতীয় প্রতীককে রাজনৈতিক প্রতীকে রূপান্তর করলে কয়েকটি জটিলতা তৈরি হতে পারে—
জাতীয় ঐক্যের প্রশ্ন: জাতীয় প্রতীক কোনো নির্দিষ্ট দল বা মতের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে গেলে তা জাতীয় ঐক্যের প্রতীক হিসেবে আর নিরপেক্ষ থাকবে না।
বিভ্রান্তির সম্ভাবনা: ভোটারদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে—জাতীয় প্রতীক ও রাজনৈতিক প্রতীক এক হয়ে গেলে, অনেকেই এটিকে রাষ্ট্রীয় প্রতীক ভেবে ভোট দিতে পারেন।
আন্তর্জাতিক দৃষ্টান্ত: অনেক দেশেই জাতীয় প্রতীককে দলীয় প্রতীক হিসেবে ব্যবহারের অনুমতি নেই। যেমন, ভারতের জাতীয় প্রতীক অশোকচক্র বা পদ্মফুলকে কোনো রাজনৈতিক প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা যায় না।
রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার ন্যায্যতা: জাতীয় প্রতীক ব্যবহার করলে অন্য দলগুলো বঞ্চিত বা বৈষম্যের শিকার মনে করতে পারে।
এই কারণে নির্বাচন কমিশন জাতীয় প্রতীক ব্যবহার না করে বিকল্প প্রতীক বেছে নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে।
বর্তমান অবস্থা
ইসি সূত্র জানায়, এনসিপির নিবন্ধন প্রক্রিয়া এখনও চলমান। তবে প্রতীক নির্ধারণের ক্ষেত্রে তাদের বিকল্প প্রতীক চেয়ে আবেদন করতে হবে। অন্যথায়, কমিশনের অনুমোদিত তালিকা থেকে প্রতীক বেছে নিতে হবে।
সংবাদচিত্র ডটকম/রাজনীতি