স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)-এর প্রধান প্রকৌশলীর দায়িত্ব নেওয়ার সতেরো দিন পার হলেও প্রতিষ্ঠানটির কাজে কোনো দৃশ্যমান পরিবর্তন আনতে পারেননি মো. আনোয়ার হোসেন। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে তার কার্যক্রম নিয়ে প্রতিষ্ঠানের ভেতরে-বাইরে সমালোচনা বাড়ছে।
দায়িত্ব গ্রহণ ও ‘রুটিন দায়িত্ব’
গত ৩১ আগস্ট স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে এলজিইডির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (গ্রেড-৩) ও প্রকল্প পরিচালক (SupRB) হিসেবে কর্মরত মো. আনোয়ার হোসেনকে প্রধান প্রকৌশলীর ‘রুটিন দায়িত্ব’ প্রদান করা হয়। এর পরদিন থেকে তিনি প্রধান প্রকৌশলীর চেয়ারে বসছেন।
‘রুটিন দায়িত্ব’ বলতে বোঝায়— প্রতিদিন বা নিয়মিত বিরতিতে পূর্বনির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী সম্পাদনীয় কাজ, যেখানে প্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক কার্যক্রম সচল রাখার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।
কাজের অগ্রগতি নেই
কিন্তু দায়িত্ব নেওয়ার সতেরো দিন পরও এলজিইডির গতি ফিরছে না। প্রতিদিন অফিসে এলেও মো.আনোয়ার হোসেন দিনে এক-দুটি মিটিং করেই সময় পার করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ফাইল স্বাক্ষর না করা এবং কাজের তদারকিতে অনাগ্রহের কারণে দীর্ঘ এক মাস ধরে প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম কার্যত স্থবির হয়ে আছে।
গুরুত্বপূর্ণ নিয়োগ-বদলি, প্রকল্প তদারকি থেকে শুরু করে নিয়মিত কাজগুলোও আটকে পড়েছে। এর ফলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা দেখা দিয়েছে। অনেকের মতে, এলজিইডির বর্তমান অবস্থা এখন “দিশেহারা জাহাজের মতো”।
নেতৃত্বশূন্যতায় ক্ষতি
প্রতিষ্ঠানের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্ব) মো. আবদুর রশীদ মিয়া অবসরে যাওয়ার সতেরো দিন আগেই (১৬ আগস্ট) দপ্তরে যাওয়া বন্ধ করে দেন। তখন থেকেই প্রধান প্রকৌশলীর দাফতরিক কাজ স্থবির হয়ে পড়ে। অনেকেই ভেবেছিলেন নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত মো. আনোয়ার হোসেন এ স্থবিরতা কাটিয়ে উঠবেন। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি।
তিনি তার সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানিয়ে দিয়েছেন যে, সাবেক প্রধান প্রকৌশলীর স্বাক্ষরিত রেখে যাওয়া কোনো ফাইল বা কাজ যেনো তার কাছে আনা না হয়। তার এ মৌখিক নির্দেশনার কারেণে অতি গুরুত্বপূর্ণ হলেও তার কাছে সেসব বিষয়ে কেউ যায় না বললেই চলে।
এখানে উল্লেখ্য মো. আবদুর রশীদ মিয়া স্বাক্ষরিত ফাইলের বাইরে তিনি নিজে থেকেও কোনো কাজ করছেন না।
অভিজ্ঞজনদের প্রশ্ন, “যদি দায়িত্ব পালনে আগ্রহ না থাকে, তাহলে দায়িত্ব নিলেন কেন? তাকে তো জোর করে বসানো হয়নি।”
অতীত ঘেঁটে সমালোচনা
নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, মো. আনোয়ার হোসেনের কর্মজীবনে উল্লেখযোগ্য কোনো সাফল্যের নজির নেই। নির্বাহী প্রকৌশলী থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রকল্প পরিচালনায় তিনি ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
উপকূলীয় উন্নয়ন প্রকল্পের দায়িত্বে থাকাকালে সরকারি অর্থ অপচয় এবং সুপার ব্রিজ প্রকল্পের পিডি হিসেবে নিজস্ব ঠিকাদার সিন্ডিকেট তৈরি, কমিশন আদায়সহ প্রকল্পের প্রায় ৮ কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগও উঠেছে। এসব অভিযোগের কারণে তিনি বিতর্কিত হয়ে পড়েন।
এলজিইডির সামনে চ্যালেঞ্জ
দেশের বৃহত্তম উন্নয়ন সংস্থা এলজিইডি বর্তমানে একাধিক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এর মধ্যে রয়েছে— গ্রামীণ সেতু, সড়ক অবকাঠামো উন্নয়ন, নদীভাঙন প্রতিরোধ ও উপকূলীয় এলাকায় টেকসই প্রকল্প। প্রধান প্রকৌশলীর নিষ্ক্রিয়তা অব্যাহত থাকলে এসব প্রকল্পের অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন অভ্যন্তরীণ সংশ্লিষ্টরা।
অভ্যন্তরীণ সংকট কাটিয়ে প্রতিষ্ঠানের কাজ সচল রাখতে প্রধান প্রকৌশলীর সক্রিয় ভূমিকা অপরিহার্য। কিন্তু দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে আনোয়ার হোসেনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন আরও তীব্র হচ্ছে। এলজিইডির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভাষায়, “এভাবে তো কোনো প্রতিষ্ঠান চলতে পারে না।”
সংবাদচিত্র ডটকম/জাতীয়