সম্প্রতি এলজিইডি ভবনে অপেক্ষমান তালিকার চাকরি প্রত্যাশীদের আন্দোলন তুঙ্গে, গত ৩ অক্টোবর দিনব্যাপী ৫০/৬০ জন চাকরি প্রত্যাশী এলজিইডি ভবন অবরুদ্ধ করে রাখে। আন্দোলনকারীরা ভবনের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেয় এবং আল্টিমেটামের হুমকি দিয়ে মাইকে স্লোগান দিতে থাকে। পরে বিকাল ৫ টায় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়।
এলজিইডি সূত্র জানায়, সাবেক প্রধান প্রকৌশলী শেখ মহসিন ১০ম গ্রেড থেকে ২০তম এই এগারোটি গ্রেডে প্রায় দুই হাজার ২০০ টি পদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেয় এবং এমসিকিউ পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেয়। এতে প্রায় তিন লাখেরও বেশি আবেদন করে এবং পরীক্ষায় অংশ নেয় এবং মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের বিভিন্ন কোটায় নিয়োগ দেয়া হয়। অথচ পিএসসির মাধ্যমে ওই নিয়োগে কোনো অপেক্ষমান তালিকা প্রকাশ করা হয়নি।
এলজিইডি সূত্র আরো জানায়, ওই এগারোটি গ্রেডে ২২০০ টি পদে নিয়োগ পত্র দেওয়া হলেও কতজন যোগদান করেনি তার প্রকৃত তথ্য এলজিইডির কাছে নেই, তবে তারা বলছেন সরকারি চাকরির যে দুর্মূল্য তাতে সবাই যোগদান করেছে কিন্তু কিছু কিছু ছেলে মেয়ে এরচে ভাল কোনো চাকরি পাওয়ায় তারা যোগদান করেনি, তবে এর সংখ্যা দুই থেকে আড়াইশ জনের বেশি হবে না। এদিকে আন্দোলনকারীরা বলছে এই সংখ্যা ছয়শ’রও বেশি।
এই প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় নেত্রকোনার সাঈদ, মুন্সীগঞ্জের কালাম ও ভোলার চন্দনসহ আরো অনেকের সাথে। তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয় উপস্থিতি এতো কম কেন এবং অপেক্ষমান তালিকা প্রকাশ করা হয়নি কিন্তু আপনারা কিভাবে জানলেন আপনাদের নাম ওই তালিকায় আছে? উত্তরে তারা জানান, প্রায় তিনশ’জনের সাথে চুক্তি হয়। আর এদের প্রত্যেকে দশ লাখ টাকা দিলে তাদের চাকরি হবে। চুক্তি হয় অর্ধেক টাকা অগ্রীম দিতে হবে বাকি অর্ধেক যোগদান পত্র পাওয়ার পর।
কবে এই টাকা দিয়েছেন? যানতে চাইলে তারা বলেন, চলতি বছরের মার্চে ও এপ্রিল মাসে টাকা দেওয়া হয়। উপস্থিত কম কেন এর প্রেক্ষিতে তারা বলেন, আমাদের মধ্যে কেহ পড়াশুনা করে কেহ প্রাইভেট ফার্মে চাকরী করে তাই আমরা শিফট ভাগ করে নিয়েছি যার যেদিন সময় হবে সে সেদিন আসবে।
বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় আন্দোলন কেন? জানতে চাইলে তারা বলেন, আমরা যাকে ঘুষের টাকা দিয়েছি, মূলত তার নির্দেশে এই আন্দোলন।
কার কাছে টাকা দিয়েছেন? জানতে চাইলে তারা নাম প্রকাশ না করতে চাইলেও এক পর্যায় বলেন, মো. আবু হানিফ মৃধার নিকট।
হানিফ মৃধা ওই যোগদান পত্র দেওয়ার সময় ওই পদে ছিলনা তবে কেন তাকে টাকা দিলেন? এই প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, হানিফ মৃধা গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে মোবাইলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করে এবং দশ-বারো জনের গ্রুপে ডাকতো এবং আমাদের নিয়োগ কমিটির সকলের সীল স্বাক্ষরকৃত অপেক্ষমান তালিকা দেখান এবং টাকা দিলে চাকরির ব্যবস্থা করবেন। তারা জানায়, হানিফ মৃধা বলেছেন- মন্ত্রী, সচিব, পিএস, এনপিএস, প্রধান প্রকৌশলী ও নিয়োগ কমিটির সদস্যদের ঘুষ দিতে হবে।
এই শর্তে চুক্তির অর্ধেক পাঁচ লাখ হিসেবে তিন’শ জনের নিকট থেকে প্রায় পনেরো কোটি টাকা ঘুষ আদায় করেন। সূত্র জানায়, ঘুষের ওই টাকার পাঁচ কোটি টাকা সাবেক মন্ত্রী তাজুল ইসলামকে দেওয়া হয়েছে, এপিএস’কেও ঘুষের টাকার একটি অংশ দেয়। পাঁচ আগস্টের পর পট পরিবর্তনে ওই চাকরি পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়লে ঘুষ প্রদানকারীরা হানিফ মৃধার কাছে টাকা ফেরত পেতে চাপ দিতে থাকে। পরে হানিফ মৃধার পরামর্শে তারা এই আন্দোলনের কর্মসূচি দিতে থাকে।
এলজিইডি সূত্র জানায়- অপেক্ষমান তালিকা থেকে আর চাকরি দেয়ার সুযোগ নেই কারণ, পূর্বে চাকরি দেওয়া হয়েছে কোটার ভিত্তিতে, কিন্তু এখন আর কোটা পদ্ধতি নেই। তাছাড়া ওই সময় জেলা কোটায় প্রাপ্যতা না থাকায় এগারোটি জেলার লোক আবেদন করতে পারেনি। এখন যেহেতু কোটা পদ্ধতি বিলুপ্ত হয়ে গেছে এবং মেধার ভিত্তিতে চাকরি দিতে হবে সুতরাং ওই এগারোটি জেলার ছেলে মেয়েদেরও সুযোগ দিতে হবে। যে কারণে কোটায় নির্ধারিত অপেক্ষমান তালিকা থেকে চাকরি দেয়ার আর সুযোগ নেই। যদি অপেক্ষমান তালিকা থেকে চাকরি দেওয়া হয় তাহলে ওই এগারোটি জেলার ছেলে মেয়েরাসহ কোটাবিরোধী নতুন আন্দোলনের ডাক দেবে। (চলবে)
সংবাদচিত্র ডটকম/বিশেষ সংবাদ