মুঠোফোনে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করে বছরে ৭৫ হাজার কোটি টাকা পাচার হচ্ছে বলে জানিয়েছে সিআইডি। প্রায় পাঁচ হাজার অবৈধ এজেন্টের মাধ্যমে এই টাকাগুলো পাচার করা হয়েছে। এ কারণে গত চার মাসে বাংলাদেশ প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকার রেমিট্যান্স বঞ্চিত হয়েছে।
গত বুধবার (৭ সেপ্টেম্বর) ডিজিটাল হুন্ডি কারবার করা এমন ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। নজরদারিতে আছে আরও কয়েক শ জন।
বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মাদ আলী এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, দেশে ডলারের দাম বাড়াসহ নানা বিষয় তদন্ত করতে গিয়ে এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
সিআইডি প্রধান বলেছেন, সংঘবদ্ধ হুন্ডিচক্র প্রবাসে বাংলাদেশিদের উপার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করে তা দেশে না পাঠিয়ে এর সমপরিমাণ অর্থ স্থানীয় মুদ্রায় পরিশোধ করে। অপরাধীরা তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে কাজটি করে। প্রথম গ্রুপ বিদেশে অবস্থান করে প্রবাসীদের কাছ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করে এবং দেশ থেকে যারা টাকা পাচার করতে চায় তাদের দেয়। দ্বিতীয় গ্রুপে আছে অর্থ পাচারকারী ও তাদের সহযোগীরা। তারা দেশীয় মুদ্রায় ওই অর্থ এমএফএস এজেন্টদের প্রদান করে। তৃতীয় গ্রুপ তথা এমএফএস এজেন্টরা বিদেশে অবস্থানকারীর কাছে থেকে প্রাপ্ত এমএফএস নম্বরে দেশীয় মুদ্রায় মূল্য পরিশোধ করে। কালোটাকার মালিকরা এভাবে কোটি কোটি টাকা দেশ থেকে পাচার করছে, এর ফলে বাংলাদেশ রেমিট্যান্স হারাচ্ছে।
তবে এই তালিকায় কোন সরকারী কর্মকর্তা, পরিচিত ব্যবসায়ী বা রাজনীতিবিদ আছেন কি না সে প্রশ্নের জবাব দেননি সিআইডি প্রধান।
এ ঘটনায় গ্রেপ্তার ১৬ জনের মধ্যে ছয়জন বিকাশ এজেন্ট, তিনজন বিকাশের ডিস্ট্রিবিউটর সেলস অফিসার, তিনজন বিকাশের ডিএসএস, দুজন হুন্ডি এজেন্ট, একজন হুন্ডি এজেন্টের সহযোগী ও আরেকজন হুন্ডি পরিচালনাকারী। এ বিষয়ে মামলা রেকর্ডসহ যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন।
দুই বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইনটিগ্রিটির (জিএফআই) একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অধিকাংশ অর্থনৈতিক সূচকে পিছিয়ে পড়লেও অবৈধভাবে অর্থ পাচারে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ৷
জিএফআই-এর ওই প্রতিবেদনে বলেছে, ২০১৫ সালে বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছে এক হাজার ১৫১ কোটি ডলার বা ৯৮ হাজার কোটি টাকা৷ ২০১৪ সালে ৯১১ কোটি ডলার বা ৭২ হাজার ৮৭২ কোটি ৷ আর ২০১৩ সালে বাংলাদেশ থেকে ৯৬৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার বা ৭৬ হাজার ৩৬১ কোটি ৪০ লাখ টাকা পাচার হয়েছে৷
সব মিলিয়ে ২০০৫ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছে প্রায় ৮ হাজার ৯৬৬ কোটি ডলার বা সাত লাখ চার হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা।
সংবাদচিত্র ডটকম/রাজধানী