কমছে করপোরেট কর, থাকছে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ। এরকম চারটি সুসংবাদ রাখা হচ্ছে আসছে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে। বাকি দুটি সুসংবাদ হলো- লেনদেনের ওপর আরোপিত অ্যাডভান্স ইনকাম ট্যাক্স (এআইটি) কমছে, আর সুকুক, করপোরেট এবং ট্রেজারি বন্ডেরও ওপরও কর হার কমানো হচ্ছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, অর্থ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট তথ্য মতে, ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে নন-লিস্টেড অর্থাৎ পুঁজিবাজারে অতালিকাভুক্ত কোম্পানির করপোরেট কর সাড়ে ৩২ শতাংশ থেকে আড়াই শতাংশ কমিয়ে ৩০ শতাংশ করা হচ্ছে। আর তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে সাড়ে ২২ শতাংশ করা হচ্ছে।
চলতি বছরের মতোই মাত্র দশ শতাংশ কর দিয়ে আগামী অর্থবছরেও কালো টাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সুবিধা থাকবে। থাকবে ব্রোকার হাউজের লেনদেনের ওপর আরোপিত এআইটি কর কমানোর সুবিধা এবং পুঁজিবাজারে বন্ড মার্কেটকে বিকশিত করতে বিশেষ ছাড়া দেওয়া হচ্ছে।
এগুলো আগামী বাজেটে থাকলে তারপর পুঁজিবাজার আরও চাঙা হবে বলে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। তাতে বাজারে লেনদেন আরও বাড়বে, ব্রোকার হাউজগুলোর ব্যবসাও জমজমাট হবে বলে মনে করেন তারা।
এ বিষয়ে বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, দেশের অর্থনীতিতে পুঁজিবাজারে অবদান বাড়াতে কমিশনের পক্ষ থেকে বন্ডের ওপর আরোপিত কর হার কমানোসহ বিশেষ সুবিধা চেয়েছি। আশা করছি, অর্থমন্ত্রী বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখবেন। বন্ড মার্কেটে বিকশিত করার সুযোগ দেবেন। উন্নয়নের অর্থায়নের উৎস হিসেবে বন্ড মার্কেটকে শক্তিশালী বন্ড মার্কেটে পরিণত করবেন।
ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোশিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি শরীফ আনোয়ার হোসেন বলেন, বাজেটে ব্রোকার হাউজগুলোর লেনদেনের ওপর আরোপিত অ্যাডভান্স ইনকাম ট্যাক্স(এআইটি) দশমিক শূন্য ৫ পয়সা থেকে কমানো হচ্ছে। করপোরেট কর হার কমছে। এছাড়াও কালো টাকা সাদা করার সুযোগও থাকছে। এগুলো করা হলে পুঁজিবাজারে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) প্রেসিডেন্ট ছায়েদুর রহমান বলেন, পুঁজিবাজার ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে বাজেটে তালিকাভুক্ত কোম্পানির করপোরেট কর ৫ শতাংশ কমিয়ে ২০ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছি। করোনা মোকোবেলায় আশা করছি সরকার বিষয়টি বিবেচনা করবে।
তিনি বলেন, ভালো ভালো কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে আনতে তালিকাভুক্ত-অতালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হারে ১০ শতাংশ ব্যবধান চেয়েছি। লভ্যাংশের ওপর কর হার কমানোর পাশাপাশি লেনদেনের ওপর উৎসে কর দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ রয়েছে। এটা দশমিক শূন্য পাঁচ শতাংশের পরিবর্তে দশমিক শূন্য ১৫ শতাংশ করার আবেদন করেছি।
আমরা প্রত্যাশা করছি সরকার আমাদের বিষয়টি বিবেচনা করে পুঁজিবাজার ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে সুবিধাগুলো দেবেন।
এদিকে চলতি ২০২০-২০২১ অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার করদাতা কালো টাকা সাদা করেছেন; যা স্বাধীনতার পর থেকে এক বছরের হিসাবে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। জুলাই থেকে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মধ্যে পুঁজিবাজার, নগদ টাকা কিংবা জমি-ফ্ল্যাট কিনে সব মিলিয়ে মোট ৯ হাজার ৯৩৪ জন কালো টাকা সাদা করেছেন। এদের মধ্যে শুধু জমি-ফ্ল্যাট কিনে কিংবা নগদ টাকা সাদা করেছেন ৯ হাজার ৬২৩ জন।
আর পুঁজিবাজারে ৩১১ জন বিনিয়োগকারী ১০ শতাংশ হারে কর দিয়ে ৪৩০ কোটি কালো টাকা সাদা করেছেন। সব মিলে কালো টাকা সাদা করা বাবদ এনবিআর রাজস্ব পেয়েছে ১ হাজার ৩৮৬ কোটি টাকা।