রাজধানীর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) কার্যক্রম চলতি বছরের মে ও জুন মাসে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ৪০ দিন বন্ধ ছিল। অথচ এই সময়ে কর্মকর্তাদের ব্যবহৃত গাড়ির জন্য জ্বালানি তেল বাবদ প্রায় ৫ কোটি টাকার খরচ দেখানো হয়েছে, যা নিয়ে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) ডিএসসিসির নগর ভবনে এনফোর্সমেন্ট অভিযান চালায়।
কী কারণে ৪০ দিন অফিস বন্ধ ছিল?
সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির নেতা-কর্মীরা দলীয় নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়ে আন্দোলনে নামে। তাদের সঙ্গে ডিএসসিসির কিছু কর্মচারীও যুক্ত হন। এর ফলে, ১৪ মে থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত টানা ৪০ দিন সেবামূলক কার্যক্রম বন্ধ ছিল।
তেল গেল কোথায়? খরচ আগের মতোই!
যদিও অফিস কার্যক্রম বন্ধ ছিল, তথাপি এপ্রিল, মে ও জুন মাসের জ্বালানি খরচ বিশ্লেষণে দেখা গেছে—মে ও জুন মাসে খরচ হয়েছে প্রায় সমান তেল, যেমনটা সাধারণ সময়ে হয়ে থাকে। অথচ বাস্তবে অফিস বন্ধ থাকায় গাড়ির ব্যবহারও সীমিত থাকার কথা।
এ বিষয়ে দুদকের উপপরিচালক মো. আকতারুল ইসলাম বলেন:
“নগর ভবন ৪০ দিন বন্ধ, তবু কোটি টাকার তেল খরচ! এই তেল গেল কোথায়? কর্মকর্তাদের জন্য বরাদ্দকৃত গাড়ির জ্বালানি তেলের ভুয়া খরচ দেখিয়ে কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে আজ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।”
যানবাহনের সংখ্যা ও জ্বালানি ব্যয়ের হিসাব
ডিএসসিসির পরিবহন শাখার তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে করপোরেশনে রয়েছে:
কর্মকর্তাদের ব্যবহৃত গাড়ি: ৯১টি
মোটরসাইকেল: ১০১টি
বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও অন্যান্য যানবাহন: ৪১৮টি
মোট যানবাহনের সংখ্যা: ৬১০টি
প্রতি মাসে জ্বালানি বাবদ খরচ হয় প্রায় ৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ বছরে জ্বালানির জন্য ৬০ কোটিরও বেশি টাকা ব্যয় করা হয়।
তবে অভিযোগ উঠেছে, এই বিশাল ব্যয়ের একটি বড় অংশ কাগজে-কলমে দেখানো, যা বাস্তব ব্যবহার বা কার্যক্রমের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
দুদকের তদন্ত ও সম্ভাব্য ব্যবস্থা
দুদক বলছে, অভিযানের পর প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রয়োজনে অভিযোগকারীদের জিজ্ঞাসাবাদ, কাগজপত্র যাচাই এবং ব্যবস্থাপনার তথ্য খতিয়ে দেখা হবে। যদি অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তবে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জনমত ও বিশেষজ্ঞদের মতামত
সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক সূত্র ও দুর্নীতি বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন:
“একটি গুরুত্বপূর্ণ সেবা প্রতিষ্ঠান যখন কার্যত বন্ধ থাকে, তখনও যদি নিয়মিত খরচ দেখানো হয়, তাহলে সেটি সরাসরি দুর্নীতির শামিল। এটি রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয় এবং সাধারণ মানুষের প্রতি চরম দায়িত্বহীনতার বহিঃপ্রকাশ।”
৪০ দিন সেবা বন্ধ থাকার পরও কোটি কোটি টাকা জ্বালানির নামে খরচের অভিযোগ শুধুই প্রশাসনিক ব্যর্থতা নয়, বরং এটি দুর্নীতির গভীর শিকড়ের দিকেই ইঙ্গিত করে। দুদকের তদন্তের ফলাফলই হয়তো বলবে—এটা কতটা পরিকল্পিত অর্থ আত্মসাত, আর কতটা অব্যবস্থাপনা।
সংবাদচিত্র ডটকম/দুদক