ঠাকুরগাঁওয়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে টেন্ডারের মাধ্যমে আসবাবপত্র দিয়ে বিল নেয়ার কথা থাকলেও আসবাবপত্র না দিয়েই বিল তুলে নিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। আর এ বিষয়ে তদারকি না করেই বিল পরিশোধ করেছে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর।
বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় সমূহের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে ম্যানুফ্যাকচারিং সাপ্লায়িং অব ফার্নিচার নামে একটি কাজের অনুমোদন হয় ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার গিলাবাড়ী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের নামে। বাজেটে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি কোনো ধরনের আসবাবপত্র না পেলেও ঠিকাদারকে কাজটি সম্পন্ন করা বাবদ বিল বুঝিয়ে দিয়েছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর ঠাকুরগাঁও।
বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও ইইডি সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ১২ সেপ্টেম্বর বিদ্যালয়ের নতুন ভবন উদ্বোধন করেন ঠাকুরগাঁও-১ আসনের সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে নির্বাচিত বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়সমূহে ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় ভবনটি নির্মাণ করা হয়।
ভবন নির্মাণের কাজ শেষ হওয়ার পর ২০২০ সালের ১৫ জানুয়ারি নতুন ভবনে আসবাবপত্র সরবরাহের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। যার প্রাক্কলিত খরচ ধরা হয়েছিল ১২ লাখ ৩৬ হাজার ১২৬ টাকা। ঠিকাদার সেই মূল্যের ৩৬.৭৫ শতাংশ কম দর দেন। ফলে কাজ বাস্তবায়নে অনুমোদিত মূল্য দাঁড়ায় ৭ লাখ ৮১ হাজার ৮৩৯ টাকা। ২০২০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওই প্রতিষ্ঠানের নামে কার্যাদেশ দেন ইইডি পঞ্চগড় কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক কুমার মণ্ডল।
কিন্তু গেল ২৮ আগস্ট সকালে বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, উদ্বোধনের প্রায় দুই বছর পার হলেও সেখানে বসার নতুন বেঞ্চ পায়নি শিক্ষার্থীরা। পুরোনো বেঞ্চ দিয়ে ভবনের নিচতলার কয়েকটি কক্ষে শ্রেণি কার্যক্রম চলছে। বাকি কক্ষগুলো ফাঁকা পড়ে আছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহজাহান ই-হাবিব বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিদ্যালয়ে কোনো আসবাবপত্রই সরবরাহ করেনি। ঠিকাদারি কাজের বিল উত্তোলন করতে হলে প্রতিষ্ঠান প্রধানের প্রত্যায়ন লাগে। সেই প্রত্যয়ন ছাড়াই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি কীভাবে বিল পেল তা জানা নেই। আসবাপত্র সরবরাহ না করলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সাদমান এন্টারপ্রাইজের নামে ২০২১ সালের ২০ জুন, ৫ লাখ ৪৭ হাজার ২৬০ টাকার বিল ছাড় করেছে ইইডি। বিষয়টি সহকারী হিসাব রক্ষণ মো. আমানুল্লাহ নিশ্চিত করেছেন।
এ বিষয়ে মেসার্স সাদমান এন্টারপ্রাইজ মালিক মো. রাসেদ বলেন, ইইডিতে বিভিন্ন কাজের বিপরীতে ২০ থেকে ২২ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে। তাই অগ্রিম বিল পেতে অনুরোধ করেছিলাম। প্রকৌশল বিভাগও সেই অনুরোধে ছাড় দিয়েছে।
ইইডি ঠাকুরগাঁও কার্যালয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মফিজুল ইসলাম বলেন, মেসার্স সাদমান এন্টারপ্রাইজ হরিপুর উপজেলার একটি বিদ্যালয় ভবন নির্মাণের কাজ করছেন। ওই কাজের বিপরীতে তার প্রায় ১৪ লাখ টাকা জামানত রয়েছে। এ ছাড়া গিলাবাড়ি আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে আসবাবপত্র সরবরাহ কাজের বিপরীতে প্রায় পৌনে দুই লাখ টাকা জামানত রয়েছে। তাই ঠিকাদারের অনুরোধে বিলটি ছাড় করা হয়েছে। এ মাসের মধ্যেই বিদ্যালয়ে আসবাবপত্র সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে।
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর ঠাকুরগাঁও কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মেহেদী ইকবাল বলেন, বিলটি তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলীর সময় ছাড় করা হয়েছে। জুন সমাপনীর সময় কাজের চাপের কারণে হয়তো তিনি সেটি খেয়াল করেননি। এ মাসের মধ্যে সে প্রতিষ্ঠানে আসবাবপত্র সরবরাহ করা হবে।
সংবাদচিত্র/অপরাধ