আমাদের সুস্থতা অনেকাংশেই মুখের সুস্থতার ওপর নির্ভর করে। মুখের ভেতরে যদি নিয়মিত যত্ন না নেয়া হয় তা হলে নানা সমস্যা হতে পারে। যেমন- মাড়িতে ব্যথা, দাঁত ক্ষয়, দাঁতে পাথর জমা, মুখের ক্যানসার, দাঁতের সৌন্দর্য নষ্ট হওয়া ইত্যাদি। তাই দাঁতের সুস্থতার জন্য নিয়মিত ব্রাশ করা এবং ডেন্টিস্টের কাছে দাঁত চেকআপ করানোর পাশাপাশি ঠিক করতে হবে খাদ্যের তালিকাও। কারণ সব ধরনের খাবার দাঁতের জন্য উপকারী নয়। কিছু খাবার দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকে, আবার কিছু খাবারে চিনি বেশি থাকে যার কারণে দাঁতে ব্যাকটেরিয়া জন্মে। তাই এই খাবারগুলো সম্পর্কে জানা জরুরি।
দাঁত ভালো রাখে যে খাবারগুলো
দাঁত ভালো রাখতে বেশকিছু খাবার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যেমন-
ক্যালসিয়াম ও অন্যান্য নিউট্রিয়েন্টস যুক্ত লো-ফ্যাট চিজ, দুধ, দই, সবুজ শাক-সবজি ইত্যাদি।
প্রোটিনযুক্ত খাবার ডিম, মাছ, মাংস ইত্যাদি খাবারগুলো দাঁতের এনামেলের সুরক্ষা করে।
ফলমূল ও শাক-সবজিতে আছে পানি ও ফাইবার, যা মুখের লালা বা স্যালাইভা উৎপাদনে সাহায্য করে।
এনামেলের ক্ষয় হওয়া, দাঁতের ফাঁক থেকে খাদ্যকণা ধুয়ে যাওয়া এবং মুখে স্যালাইভা প্রোডাকশন প্রমোট করতে হেল্প করে পানি। তাই প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা উচিত।
দাঁতের ক্ষতি যে সব খাবারে
দাঁত সুস্থ রাখার ক্ষেত্রে বিভিন্ন কাজের পাশাপাশি খাদ্যাভ্যাসও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সব খাবারই দাঁতের জন্য ভালো নয়।
# কোমল পানীয়: কোমল পানীয়তে প্রচুর পরিমাণে চিনি থাকে। এই চিনি শুধু শরীরের জন্যই নয়, দাঁতের জন্যও সমানভাবে ক্ষতিকর। বাজারে ডায়েট কোক নামে কিছু ড্রিংকস আছে। অনেকেই চিনি নেই ভেবে সেগুলো পান করেন। কিন্তু এই ড্রিংকসগুলোতে চিনির পরিবর্তে এর সাবস্টিটিউট ফসফোরিক ও সাইট্রিক এসিড থাকে। এই উপাদানগুলো দাঁতের এনামেল নষ্ট করে দেয়। তাই দাঁতের সুস্থতায় যে কোনো ধরনের কোমল পানীয় খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে।
# স্টার্চি ফুড : অনেকের বাড়িতেই সকালে নাশতার টেবিলে পাউরুটি থাকে। কিন্তু অতিরিক্ত পরিমাণে পাউরুটি খাওয়া দাঁতের জন্য ক্ষতিকর। শুধু পাউরুটিই নয়- স্টার্চ আছে এমন যে কোনো খাবার, পাস্তা, আলু, ভাত সবই দাঁতের জন্য ক্ষতিকর। অনেকেই এই খাবারগুলো মিষ্টি না ভেবে রেগুলার ডায়েটে অ্যাড করেন। এই ভুলটাই আমরা করি। স্টার্চি ফুড দাঁতে স্টিকি হয়ে থাকে এবং এগুলো ব্যাকটেরিয়ার খুব ভালো সোর্স। ধীরে ধীরে এই ব্যাকটেরিয়াই দাঁতের জন্য ক্ষতিকারক হয়ে ওঠে। তাই স্টার্চি ফুড যখনই খাবেন, অবশ্যই পরিমাণমতো খাবেন এবং খাওয়া শেষে দাঁত ব্রাশ করবেন। আর দাঁত সুস্থ রাখতে হলে এ ধরনের খাবার খাওয়ার পরিমাণও কমাতে হবে।
# চকলেট ও স্টিকি ফুড : বাচ্চাদের কাছে ক্যান্ডি ও চকলেট মানেই পছন্দের একটি খাবার। শুধু বাচ্চারাই নয়, বড়দের অনেকের কাছেও চকলেট বেশ প্রিয়। এই চকলেট ও ক্যান্ডিতে চিনির পরিমাণ বেশি থাকার কারণে দাঁতে দেখা দিতে পারে ক্যাভিটি। ফলাফল, দিনে দিনে দাঁত ক্ষয়ে যাওয়া। চকলেট খাওয়া শেষে সঙ্গে সঙ্গে দাঁত ব্রাশ বা কুলি করে ফেললে এই রিস্ক কিছুটা কমে যায়। কিন্তু ক্যান্ডি দাঁতের সঙ্গে স্টিকি হয়ে থাকে বলে সেটাই ক্ষতি করে বেশি। এ ছাড়া আরও কিছু স্টিকি ফুড যেমন- পিনাট বাটার, পটেটো চিপস দাঁতের ফাঁকে আটকে থেকে ব্যাকটেরিয়ার সৃষ্টি করে।
# অ্যালকোহল : অ্যালকোহল পান করার কারণে মুখ শুকিয়ে যায়। মুখ শুষ্ক থাকা মানে লালার পরিমাণ কমে যাওয়া। অথচ দাঁত ভালো রাখতে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। লালা দাঁতে খাবার লেগে থাকতে দেয় না এবং খাবারের কণাকে ধুয়ে ফেলে। এমনকি দাঁতের ক্ষয়, মাড়ির রোগ এবং ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের অন্যান্য প্রাথমিক লক্ষণগুলোকেও সারিয়ে তুলতে হেল্প করে লালা। তাই মুখ সব সময় হাইড্রেটেড রাখা প্রয়োজন। আর এ জন্য প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। সেই সঙ্গে ওরাল হাইড্রেশন সলিউশনও ব্যবহার করা জরুরি।
# কফি : মুখের ভেতরের স্যালাইভা প্রোডাকশনকে কমিয়ে দেয় কফি। আর স্যালাইভার অভাবে মুখের ভেতর শুকিয়ে যায়। এ ছাড়া কফি ব্যাকটেরিয়া গ্রো করতে হেল্প করে, সেই সঙ্গে কমে যায় দাঁতের এনামেল। ধীরে ধীরে দাঁতে তৈরি হয় ক্যাভিটি, সেনসিভিটি এবং শুরু হয় দাঁতের ক্ষয়।
সচেতনতা এবং কিছু কথা
সুন্দর দাঁত ও সুন্দর হাসি আমরা সবাই চাই। আর তাই দাঁতের সঠিক পরিচর্যার পাশাপাশি এড়িয়ে চলুন ক্ষতিকর খাবার। মুখ বা দাঁতের কোনো সমস্যাই অবহেলা করবেন না। সমস্যা যতই ছোট হোক না কেন সেটা অবহেলা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা বাঞ্ছনীয়।
লেখক : দন্ত বিশেষজ্ঞ,ম্যান্ডি ডেন্টাল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতাল