সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে অন্তত তিন সাংবাদিক হামলার শিকার হয়েছেন। আজ বুধবার অ্যানেক্স ভবনের সামনে এ হামলা হয়। আহত এক সাংবাদিককে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

হামলার ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে আইন, বিচার ও মানবাধিকারবিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ল রিপোর্টার্স ফোরাম (এলআরএফ)।

পাবনার ঈশ্বরদীতে শেখ হাসিনাকে বহনকারী ট্রেনে গুলি ও বোমা হামলার অভিযোগে করা মামলার আপিলের রায়ের ধার্য দিন ছিল বুধবার। সে জন্য আদালতে আসেন বহু বিএনপি নেতা-কর্মী। দুপুরের আগে রায় ঘোষণা শেষ হয়। রায় ঘোষণার পর অ্যানেক্স ভবনের সামনে সাংবাদিকরা আইনজীবীদের বক্তব্য নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এ সময় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিবসহ পাবনা জেলা বিএনপির নেতা-কর্মীরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এক পর্যায়ে সেখানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলে এক যুবক সাংবাদিকদের ঠেলে ডায়াসের সামনে চলে আসেন। তখন তর্কবিতর্কের এক পর্যায়ে একদল যুবক সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হন। তারা সাংবাদিকদের কিল-ঘুষি ও লাথি মারেন। এতে কয়েকজন সাংবাদিক আহত হন।
পরে সেখানে উপস্থিত হয়ে বিএনপির আইন সম্পাদক কায়সার কামাল ও বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস পরিস্থিতি শান্ত করেন।

কায়সার কামাল আহত সাংবাদিক জাবেদ আখতারকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির অ্যাম্বুলেন্সে কাকরাইলের ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে পাঠান।
আখতার বেসরকারি টিভি চ্যানেল এটিএন নিউজের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক এবং ল রিপোর্টার্স ফোরামের প্রশিক্ষণ ও কল্যাণ সম্পাদক।

হামলার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকরা ব্রিফিং বর্জন করে হাই কোর্ট অ্যানেক্স ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।

ল রিপোর্টার্স ফোরামের (এলআরএফ) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হাসান জাবেদ ও সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মিশন এক বিবৃতিতে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় সাংবাদিকদের ওপর হামলার নিন্দা জানান এবং জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

ল রিপোর্টার্স ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম নূর মোহাম্মদের স্বাক্ষরে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, আজ পাবনার ঈশ্বরদীতে শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলার মামলায় রায় হয় হাই কোর্টে। ওই রায়ের পর আইনজীবীদের বক্তব্য নেওয়ার জন্য সুপ্রিম কোর্টের অ্যানেক্স ভবনের সামনে অপেক্ষা করছিলেন সাংবাদিকরা। সে সময় ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানোর জন্য ধাক্কাধাক্কি করতে থাকেন ঈশ্বরদী এলাকার বিএনপির কয়েক শ নেতা-কর্মী। তখন সেখানে ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব।

ধাক্কাধাক্কির সময় এটিএন নিউজের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জাবেদ আখতারের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয় বিএনপি নেতা-কর্মীদের। একপর্যায়ে ঈশ্বরদী থেকে আসা বিএনপির ২০ থেকে ২৫ নেতা-কর্মী জাবেদকে লাথি ও কিল-ঘুষি মারতে থাকেন। এ সময় তাকে রক্ষা করতে গিয়ে তাদের মারধরের শিকার হন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আজিজুল ইসলাম পান্নু, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক হাসান জাবেদসহ বেশ কয়েকজন। ভাঙচুর করা হয় টেলিভিশনের মাইক্রোফোনও।

ল রিপোর্টার্স ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মিশন বলেন, হামলার ঘটনা সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন ও অ্যাটর্নি জেনারেলকে অবহিত করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টে কর্মরত সাংবাদিকরা যাতে নির্বিঘ্নে দায়িত্ব পালন করতে পারেন সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা করবেন সংগঠনের নেতারা।

হামলায় জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়েছে এলআরএফের পক্ষ থেকে।

সংবাদচিত্র ডটকম/অপরাধ