সময় গড়ালেও সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনে অংশ নেবেন কি না, তা পরিষ্কার করছিলেন না বর্তমান মেয়র আরিফুল হত চৌধুরী। কখনো বলছিলেন বিএনপি নির্বাচনে যাবে না, কখনো আবার বলছিলেন এলাকাবাসীর কথা ভেবে নির্বাচনে যাবেন তিনি। সব মিলিয়ে বেশ ধোঁয়াশা তৈরি করে রেখেছিলেন। অতঃপর নির্বাচনের ঠিক এক মাস আগে শনিবার (২০ মে) রেজিস্ট্রারি মাঠে এক সমাবেশে ঝেড়ে কাশলেন আরিফুল হক চৌধুরী।
সিসিক নির্বাচনে প্রার্থী না হওয়ার ঘোষণা দিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির এই সদস্য। বিকেলে সিলেট নগরের রেজিস্ট্রারি মাঠে এক নাগরিক সভায় তিনি জানালেন, ‘প্রহসনের এ নির্বাচনে’ অংশ নেবেন না তিনি।
২০ মে সমাবেশ করে তিনি নিজের অবস্থান স্পষ্ট করার কথা অবশ্য আগেই জানিয়ে রেখেছিলেন আরিফুল। তাই শনিবারের এই সমাবেশ ঘিরে আগ্রহ ছিল সবার। দুপুরের পর থেকেই সমাবেশস্থল রেজিস্ট্রারি মাঠে জড়ো হতে শুরু করেন নানা শ্রেণির মানুষ। মিছিল নিয়েও আসেন অনেকে। বিএনপির কেন্দ্রীয় অনেক নেতাও এই সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন।
সমাবেশে মেয়র বলেন, এই মুহূর্তে সিলেট তথা সারা দেশেই নির্বাচনী কোনো পরিবেশ নেই। আপত্তি সত্ত্বেও সিলেটে ইভিএমে ভোট গ্রহণের আয়োজন করা হয়েছে। অথচ সিলেটের মানুষ ইভিএমের সঙ্গে একেবারে অপরিচিত। এখানে ইভিএম নিয়ে আসাই ভোট ডাকাতির ইঙ্গিত। বর্তমান নির্বাচন কমিশনও সুষ্ঠু ভোট চায় না। তারা ডিজিটাল ভোট ডাকাতি চায়।
আরিফুল হক বলেন, ‘নির্বাচনে কারচুপির নীলনকশার অংশ হিসেবে পুলিশ প্রশাসনে রদবদল শুরু হয়েছে। একটি প্রহসনের নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। আমার নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার ও হয়রানি করা হচ্ছে। এ রকম অবস্থায় আমি নির্বাচনে যেতে পারি না। আমি বিএনপির সিদ্ধান্তের সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত। আমি প্রহসনের নির্বাচনে প্রার্থী হব না।’
বর্তমান মেয়র আরিফুল হক এবারের নির্বাচনে প্রার্থী হবেন কি না এ নিয়ে তফসিল ঘোষণার পর থেকেই শুরু হয়েছিল জল্পনা-কল্পনা। আরিফুলের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে নির্বাচন নিয়ে তার আগ্রহও প্রকাশ পায়। তবে বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেয়ার ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে ছিল। এ অবস্থায় দল আর নির্বাচন- এই দুটির মধ্যেই একটিকে বেছে নিতে হতো মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে। অবশেষে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়ে দলে থাকার ঘোষণাই দিলেন আরিফুল।
শনিবারের নাগরিক সভায় তিনি বলেন, ‘বিএনপি আমার অস্থিমজ্জায়। ছাত্রজীবনে জিয়াউর রহমানের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে বিএনপির সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলাম। আজীবন বিএনপিই হবে আমার শেষ ঠিকানা।’
মেয়র আরিফুল বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে নগরের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ আমার বাসায় গিয়ে আমাকে প্রার্থী হওয়ার অনুরোধ করছেন। তাদের ‘এতিম অবস্থায়’ ফেলে না যাওয়ার অনুরোধ করছেন। আমি তাদের সবার কাছে, এই নগরবাসীর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। আমাকে ক্ষমা করে দিন। তবে মেয়র না থাকলেও এই নগরবাসীর যেকোনো প্রয়োজনে, সব ভালো কাজে এবং অধিকার আদায়ের সংগ্রামে আমি সব সময়ই থাকব।’
নগরবাসীকে নির্বাচন বর্জনের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই নির্বাচন আসলে নির্বাচন নয়, এটি প্রহসন। তাই আমার দলীয় নেতা-কর্মীসহ সব নাগরিককে এই নির্বাচন বর্জনের আহ্বান জানাই। দয়া করে আপনারা কেউ ভোটকেন্দ্রে যাবেন না।’
উল্লেখ্য আগামী ২১ জুন অনুষ্ঠেয় সিলেট সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে এ পর্যন্ত আটজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ২৩ মে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। মনোনয়নপত্র বাছাই ২৫ মে ও প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১ জুন।
সংবাদচিত্র ডটকম/সিসিক নির্বাচন-২০২৩