সাভারে মধুমতি টাইলস কারখানার পানি ও বর্জ্যে পরিবেশ দূষণের প্রতিবাদে কারখানা ঘেরাও করে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন স্থানীয়রা।
মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) দুপুরে সাভার পৌর এলাকার গেন্ডা টিয়া বাড়িতে অবস্থিত মধুমতি টাইলস কারখানা ঘেরাও করে এ বিক্ষোভ করা হয়। এর আগে সকালে সাভার উপজেলা কার্যালয় ও পৌরসভা কার্যালয়র সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন ভুক্তভোগীরা।
মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জমশের আলী বুদ্ধু মিয়া, হাজী আবদুর রহমান, মুফতি মতিউর রহমান, নজরুল ইসলাম, রহিছ, লুৎফর রহমান খান, জাহাঙ্গীর ও জামাল উদ্দিন হাওলাদার।
মানববন্ধন ও বিক্ষোভে এলাকাবাসী আবদুর রহমান জানান, দীর্ঘদিন যাবৎ কোনো পরিশোধন ছাড়াই মধুমতি টাইলস কারখানার ক্যামিকেল যুক্ত দূষিত পানি স্থানীয় ড্রেনে ফেলা হচ্ছে। এতে সাভার পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের টিয়াবাড়ি এলাকায় মারাত্মক জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে।
জমশের আলী বুদ্ধু মিয়া বলেন, দিনের পর দিন অবস্থার কোন পরিবর্তন না হওয়ায় এলাকার ব্যবসায়ীরা দোকানপাট খোলতে পারছে না। এ এলাকার ভাড়াটে বাসিন্দারা বাড়ি ছেড়ে অন্য এলাকায় চলে যাচ্ছে। এতে করে বাড়ির মালিকরা অর্থনৈতিকভাবে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।
নজরুল ইসলাম বলেন, এলাকার প্রতিটি বাসাবাড়িতে মধুমতি কারখানার পানি প্রবেশ করে জলাবদ্ধতাও সৃষ্টি হচ্ছে। এতে করে শিশু ও মহিলারা পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এ ছাড়া কারখানাটির প্রচণ্ড শব্দে আশপাশের এলাকার বাসিন্দারা শব্দ দূষণের শিকার হয়ে নানান স্বাস্থ্যগত সমস্যায় ভোগছে। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় বেঘাত ঘটছে।
মুফতি মতিউর রহমান বলেন, রাস্তাঘাটে ক্রমাগত ময়লা পানি জমে থাকার কারণে এলাকাবাসী মুসল্লিগণ মসজিদে এসে নামাজ আদায় করতে পারে না। ছোট বাচ্চারা নিয়মিত আরবী শেখার জন্য মক্তবে আসতে পারে না। সপ্তাহের একটা দিন জুম্মার নামাজেও মুসল্লিদের সংখ্যা প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। এ অবস্থার অবসান হওয়া দরকার।
এমতাবস্থায় ভুক্তভোগী এলাকাবাসীর দাবি, অবিলম্বে মধুমতি কারখানার পানি এলাকার ড্রেনে নিষ্কাশন বন্ধ করতে হবে। একইসঙ্গে বায়ু দূষণ ও শব্দ দূষণরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে।
উক্ত এলাকার বাসিন্দা সাংবাদিক রেজাউল করিম রেজা গণমাধ্যমকে জানান, সরকার সারাদেশে বহুমাত্রিক উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালনা করলেও গত বিশ বছরে এ এলাকায় উন্নয়নের ছিটেফোটাও লাগেনি। দীর্ঘদিন ধরে এখানকার রাস্তাঘাট ও ড্রেনেজ অব্যবস্থাপনার কারণে সামান্য বৃষ্টি হলেই রাস্তায় হাটুসমান পানিতে জলাবদ্ধতার সৃস্টি হয়। এ বিষয়ে এলাকাবাসী সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করলেও তেমন কোনো সুফল পাওয়া যায় নাই।
তিনি বলেন, চলমান এমন দুর্ভোগের মধ্যে বাড়তি যন্ত্রণা হয়ে দাড়িয়েছে মধুমতি টাইল কারখানার অমানবিক অত্যাচার। গত কয়েক বছরে মধুমতি টাইলস খারখানার দুষিত ক্যামিকেলযুক্ত পানি ও ধুলোমাটিতে এ এলাকার সামগ্রিক পরিবেশ এতোটাই ক্ষতি করেছে যা শুধুমাত্র ভুক্তভোগী বাসিন্দারাই অনুমান করতে পারে।
তিনি মধুমতির অযাচিত অত্যাচার বন্ধ করাসহ এলাকার উন্নয়নে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও পৌর কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
স্থানীয় বাসিন্দা হালিমা বেগম বলেন, অবিলম্বে মধুমতি টাইলসের ময়লা এবং ক্যামিকেলযুক্ত পানি বাসাবাড়ির ড্রেনে ফেলা বন্ধ করতে হবে। ড্রেনের সঙ্গে দেওয়া সংযোগ বিচ্ছিন্নসহ জলাবদ্ধতা রোধে স্থানীয় প্রশাসন ও সরকারের উপর মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তিনি।
সবুজ আন্দোলন সাভার থানা শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. ওমর ফারুক বলেন, সাভারের বিভিন্ন এলাকায় মধুমতি টাইলসের মতো বেশকিছু কোম্পানি নিয়ম না মেনেই বাসাবাড়ির ড্রেনের সঙ্গে কারখানার কেমিক্যালের পানি ছেড়ে দিয়ে পরিবেশ দূষিত করে চলেছে। এসব কারখানার বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদপ্তর এবং স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় দিনদিন তাদের স্বেচ্ছাচারিতা বেড়েই চলেছে। তাই এদের বিরুদ্ধে দ্রুত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তিনি প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানোর আহ্বান জানান।
সংবাদচিত্র ডটকম/সারাদেশ