অস্ট্রেলিয়া সফরে থাকা জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী, অভিনেতা ও উপস্থাপক তাহসান খান মেলবোর্নে আয়োজিত কনসার্টে ঘোষণা দিয়েছেন, অভিনয়ের পর এবার সংগীত ক্যারিয়ারও গুটিয়ে নিচ্ছেন তিনি। আবেগমাখা এই বিদায় ভাষণে উঠে এসেছে কৃতজ্ঞতা ও জীবনের নতুন অধ্যায়ের সিদ্ধান্ত।
তবে ২৫ বছরের সঙ্গীত জীবনে তরুণ প্রজন্মের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়া হয়ে উঠলেও কালজয়ী বা মনে রাখার মতো গান উপহার দিতে পারেননি তাহসান। জনপ্রিয়তা কাজে লাগিয়ে এসেছিলেন অভিনয় এবং মডেলিংয়েও।
গত বছর অভিনয় থেকেও সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন তিনি। তখন গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘আমি ২০ বছর ধরে অভিনয়ে কাজ করছি। কখনো কখনো নিজেকেই নিজের বিরতি নিতে হয়। কাজ একঘেয়ে হয়ে গেলে, ভালো কাজ না হলে তখন থেমে যাওয়া জরুরি।’
বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া সফরে তিনি ২৫ বছরের সংগীত জীবনের বিশেষ মুহূর্ত উদ্যাপন করছেন। সফরকালে দেশটির পাঁচটি শহরে কনসার্ট করার কথা থাকলেও এক আয়োজনে ভক্তদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘এটাই আমার শেষ কনসার্ট। আস্তে আস্তে মিউজিক ক্যারিয়ারটাও গুটিয়ে ফেলব। মেয়ে বড় হচ্ছে, এখন কি স্টেজে দাঁড়িয়ে এমন লাফালাফি করতে ভালো লাগে?’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এই ভিডিও। কনসার্টে তিনি আরও জানান, এরই মধ্যে নিজের সব সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট ডিঅ্যাক্টিভ করেছেন। পরে ভক্তরা খুঁজে দেখেন, সত্যিই তাহসানের ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট বন্ধ রয়েছে।
সংগীত ও অভিনয় থেকে সরে আসার পেছনে শারীরিক সমস্যাও একটি বড় কারণ। কিছুদিন আগে তিনি জানান, তার কণ্ঠনালিতে হেটেরোটোপিয়া নামের একটি রোগ বাসা বেঁধেছে। এতে গলার কাঠামো পরিবর্তিত হয় এবং গান গাওয়ার সক্ষমতা ধীরে ধীরে কমে আসে। তিনি ২০১৮ সালেই সতর্ক করে বলেছিলেন, ‘যত দিন যাচ্ছে আমার গান গাওয়ার সক্ষমতাও কমছে। যদি কোনোদিন দেখেন আমি কনসার্ট বা লাইভ শো কমিয়ে দিয়েছি, বুঝবেন সমস্যাটা বেড়েছে। তখন আমার জন্য দোয়া করবেন।’
তাহসান তার সংগীত যাত্রা শুরু করেছিলেন জনপ্রিয় ব্যান্ড ‘ব্ল্যাক’-এর মাধ্যমে। পরে ২০০৪ সালে প্রথম সোলো অ্যালবাম ‘কিছু কথা’ প্রকাশ করে শ্রোতাদের হৃদয় জয় করেন। একক শিল্পী হিসেবে এবং ‘তাহসান অ্যান্ড দ্য সুফিজ’ ও পরে ‘তাহসান অ্যান্ড দ্য ব্যান্ড’-এর হয়ে অসংখ্য জনপ্রিয় গান উপহার দিয়েছেন। তার গাওয়া ‘চোখে চোখে কথা হতো’, ‘ভালবেসে কেউ ভুল করো না’, ‘যদি কোনোদিন’, ‘চলে যাও তবে’সহ অনেক গান ভক্তদের হৃদয়ে বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে।
মেয়ের বড় হয়ে ওঠা ও পরিবারকে সময় দেওয়ার তাগিদ থেকেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানান তিনি। তার ভাষায়, ‘জীবনের এই পর্যায়ে এসে মনে হচ্ছে সময়টা পরিবারকে দেওয়াই বেশি জরুরি।’
ভক্তরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখছেন—‘তাহসান ভাই, আমরা এখনও প্রস্তুত ছিলাম না আপনাকে মিউজিক থেকে হারানোর জন্য।’ কেউ কেউ মন্তব্য করেছেন—‘ব্ল্যাক থেকে শুরু করে এখনো মনে হয় আমাদের অনেকগুলো কনসার্ট বাকি ছিল।’
যদিও তিনি সরাসরি ‘অবসর’ শব্দটি উচ্চারণ করেননি, তবে তার বক্তব্য ও কার্যকলাপ দেখে মনে হচ্ছে, সংগীতে আর আগের মতো নিয়মিত সক্রিয় থাকবেন না।
সংবাদচিত্র ডটকম/সঙ্গীত