ইউক্রেনে দ্বিতীয় দিনে চলছে নিরাপত্তা বাহিনীর তুমুল লড়াই। রাজধানী কিয়েভসহ বেশ কিছু জায়গায় চলছে দফায় দফায় বিস্ফোরণ। বাড়ছে লাশের মিছিল। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ২০৩টি হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। ১৩৭ জন ইউক্রেন সেনা নিহত হয়েছে এবং রাশিয়ার ৪৫০ সেনা নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
এ অবস্থায় যুদ্ধ ঘোষণার প্রায় ৪৮ ঘণ্টা পর ইউক্রেনকে আলোচনায় বসার বার্তা দিলো মস্কো। সংবাদ সংস্থা এএফপির খবরে বলা হয়েছে, রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ জানিয়েছেন, ইউক্রেন যদি অস্ত্র ফেলে দেয় তাহলে তারা আলোচনায় বসতে প্রস্তুত।
শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বিকালে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী শর্তসাপেক্ষ আলোচনায় বসার এই ঘোষণা দেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) স্থানীয় সময় সকাল ৬টার টেলিভিশনে দেওয়া আকস্মিক এক ভাষণে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, আমি সামরিক অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি বলে তিনি ইউক্রেনের দোনবাস অঞ্চলে ‘সামরিক অভিযানের’ ঘোষণা দেন। পুতিনের সামরিক অভিযানের ঘোষণার পরই ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে দফায় দফায় বিস্ফোরণ শুরু হয়।
এমন অবস্থায় দেশের মানুষকে আতঙ্কিত না হয়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে পাল্টা লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লোদিমির জেলেনস্কি।
এই অবস্থায় ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে বেজে ওঠে জরুরি সাইরেন। এর পরের দৃশ্য এমন—শহরজুড়ে যেন শুরু হয় গাড়ির স্রোত। একটি এক্সপ্রেসওয়েতে দেখা যায়—আটকা পড়েছে অসংখ্য গাড়ি। কিয়েভ ছেড়ে পালাচ্ছেন শহরের বাসিন্দারা।
ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের প্রতিবাদে বিক্ষোভ উত্তাল হয়ে উঠেছে রাশিয়া। তবে প্রতিবাদীদের মুখ বন্ধ করতে কঠোর অবস্থান নিয়েছে পুতিন প্রশাসন। আক্রমণ ও বিক্ষোভের প্রথম দিনই গ্রেফতার করা হয়েছে অন্তত ১৭০০ জনকে।
উল্লেখ্য, ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার সংকট মূলত পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক জোট ন্যাটোকে ঘিরেই। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অঙ্গরাজ্য ও রাশিয়ার প্রতিবেশী রাষ্ট্র ইউক্রেন কয়েক বছর আগে পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য আবেদন করার পর থেকেই সংকট শুরু হয় রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে। ইউক্রেন যেন ন্যাটোর সদস্যপদ লাভের আবেদন প্রত্যাহার করে নেয়, মূলত সেজন্য দেশটির ওপর চাপ সৃষ্টির করতেই সীমান্তে সেনা মোতায়েন করেছিলো রাশিয়া।
১৯৪৯ সালে গঠিত ন্যাটোকে রাশিয়া পাশ্চাত্য শক্তিসমূহের আধিপত্য বিস্তারের হাতিয়ার মনে করে এবং ঐতিহাসিকভাবেই রাশিয়া পাশ্চাত্য আধিপত্যবাদের বিরোধী। সম্প্রতি ন্যাটো ইউক্রেনকে সদস্যপদ না দিলেও ‘সহযোগী দেশ’ হিসেবে মনোনীত করার পর আরও বেড়েছে এই উত্তেজনা।
সংবাদচিত্র/আন্তর্জাতিক