আর মাত্র কয়েক ঘন্টা পরেই ভোট অনুষ্ঠিত হবে সিলেট ও রাজশাহী সিটিতে। এরই মধ্যে নির্বাচনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন। আর এর মাধ্যমেই শেষ হচ্ছে জাতীয় নির্বাচনের আগে ৫ সিটির ভোট।
বুধবার (২১ জুন) এই দুই সিটিতে সকাল ৮টা থেকে একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ চলবে। আগের তিনটির মতো এই দুই সিটিতেও ভোট হচ্ছে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)। আগেরগুলোর ধারাবাহিকতা সিসিটিভি দিয়ে আগারগাঁও নির্বাচন ভবন থেকে ভোটের সার্বিক পরিস্থিতি মনিটরিং করবে নির্বাচন কমিশন। ভোট কেন্দ্রগুলোর নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবে পর্যাপ্ত পরিমাণে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য।
আগের তিনটি সিটি ভোটের মতোই এই দুই সিটি নির্বাচনেও নেই বিএনপির কোনো প্রার্থী। বরিশালে দলের মেয়র প্রার্থীর উপর হামলার অভিযোগ এনে আগেই এই দুই সিটি ভোট থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে ইসলামী আন্দোলন।
এরআগের তিনটি সিটি ভোটেই বড় কোনো গলযোগ হয়নি। ভোট ছিলো বেশ শান্তিপূর্ন। এরমধ্যে একটিতে স্বতন্ত্র এবং বাকি দুটিতে জয় পেয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। আগেরগুলোর ধারাবাহিকতায় এই দুই সিটিতেও শান্তিপূর্ন ভোট করতে চায় নির্বাচন কমিশন।
ভোটের আগের দিন আজ মঙ্গলবার সকালে রাজশাহীর নিউ গভর্মেন্ট ডিগ্রি কলেজ অডিটরিয়াম থেকে ইভিএম ও নির্বাচনী সরঞ্জাম বিতরণ করা হয়। এ সময় জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, ভোট সুষ্ঠু করতে সম্পন্ন সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ হয়েছে।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। প্রত্যেকটি কেন্দ্রের বাহিরে প্রয়োজনীয় সংখ্যক, তিনটা লাগুক চারটা লাগুক, নিরাপত্তার স্বার্থে ক্যামেরা থাকবে। প্রত্যেক ভোটকক্ষে একটা করে, ১১৫৩ ভোটকক্ষ, ১১৫৩টা তো থাকবেই এবং কেন্দ্রের বাহিরে মনটিরিংয়ের জন্য ২-৩টা করে ক্যামেরা থাকবে।’
সিটি ভোট সামনে রেখে রাজশাহী নগরীতে মোতায়েন করা হয়েছে প্রায় ছয় হাজার আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্য। সকালে পুলিশ লাইন্সে তাদের সতর্কতার সাথে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন রাজশাহীর পুলিশ কমিশনার আনিসুর রহমান। তিনি বলেন, ‘এখানে কোনো রকমের বিশৃঙ্খল আচরণ, কেন্দ্র দখল ও অন্যান্য কোনো অজারকতা তৈরির কিছু কেউ করলে সেটা আমরা বরদাশত করবো না।’
রাজশাহী সিটির ১৫৫টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৪৮ টিকে গুরুত্বপূর্ন ও ৭ টিকে সাধারণ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। ভোট সুষ্ঠু করতে প্রিজাইডিং অফিসারসহ ৩ হাজার ৬১৪ নির্বাচনি কর্মকর্তা মাঠে থাকবেন।
রাজশাহীতে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মোট ৪ জন। এরা হলেন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, জাতীয় পার্টির লাঙ্গল নিয়ে মো. সাইফুল ইসলাম স্বপন ও জাকের পার্টির গোলাপফুল নিয়ে মো. লতিফ আনোয়ার। দলীয় সিদ্ধান্তে নির্বাচন বর্জন করেছেন ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মো. মুরশিদ আলম।
এছাড়া নগরীর ৩০টি সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১১১ জন আর ১০টি সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে লড়ছেন ৪৬ জন।
নগরীতে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৫১ হাজার ৯৮২ জন। এরমধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৭১ হাজার ১৬৭ জন, নারী ১ লাখ ৮০ হাজার ৮০৯ জন আর হিজড়া আছেন ৬ জন।
১৯৮৭ সালে যাত্রা শুরু করা রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের আগের তিনটি ভোটের গুলোতেই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। এরমধ্যে ২০০৮ ও ২০১৮ সালের ভোটে তিনি মেয়র হন। ২০১৩ সালের ভোটে বিএনপির মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন লিটন।
ভোটের জন্য প্রস্তুত সিলেট
বৈরি আবহাওয়ার মধ্যেই সকালে সিলেটে বিতরণ হয়েছে ইভিএমসহ নির্বাচনী সরঞ্জাম। ভোটের পরিবেশ সুষ্ঠু থাকলেও, বৈরি আবহাওয়ার কারণে ভোটার উপস্থিতি কম হতে পারে বলে ধারণা রিটার্নিং কর্মকর্তা ফয়সল কাদেরের।
ফয়সল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, ‘ভোটাররা বৃষ্টির মধ্যে কতটুকু আসবে এটা আসলে এখনই বলা যাচ্ছে না, কাল বোঝা যাবে। এরমধ্যে যদি আবহাওয়া একটু পরিবর্তন হয় তাহলে হয়তো ভোটাররা আসবেন। আর প্রার্থী যারা আছেন মেয়র বা কাউন্সিলর প্রার্থী, তারাও ভোটারদের নিয়ে আসবেন।’
নির্বাচন নির্বিঘ্ন করতে নগরীতে মোতায়েন থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় ৫ হাজার সদস্য। সিলেটের পুলিশ কমিশনার ইলিয়াছ শরীফ বলেন, ‘এই অঞ্চলের মানুষ শান্তিপূর্ন। এই অঞ্চলের মানুষ সন্ত্রাস পছন্দ করে না। আমরা আশা করি ভোট শান্তিপুর্ন হবে। যদি কেউ এ ধরনের কোনো চেষ্টা করেন তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
সিলেটে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আটজন। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে লড়ছেন মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, জাতীয় পার্টির লাঙ্গল নিয়ে নজরুল ইসলাম বাবুল এবং জাকের পার্টির গোলাপফুল নিয়ে মাঠে আছেন মো. জহিরুল আলম।
দলীয় সিদ্ধান্তে নির্বাচন বর্জন করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাহমুদুল হাসান। এছাড়াও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঘোড়া প্রতীকে আছেন মোহাম্মদ আবদুল হানিফ কুটু, ক্রিকেট ব্যাট প্রতীকে মো. ছালাহ উদ্দিন রিমন, বাস প্রতীকে মো. শাহ জাহান মিয়া এবং হরিণ প্রতীকে মোশতাক আহমেদ রউফ মোস্তফা।
৪২টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ২৭২ জন। আর ১৪টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে লড়বেন ৮৭ জন।
নগরীতে মোট ভোটার ৪ লাখ ৮৭ হাজার ৭৫৩ জন। এরমধ্যে, পুরুষ ২ লাখ ৫৪ হাজার ৩৬০ জন এবং নারী ২ লাখ ৩৩ হাজার ৩৮৭ জন এবং হিজড়া ৬ জন।
২০০২ সালে সিটি করপোরেশনে উন্নীত হওয়ার পর সিলেটে ভোট হয়েছে চারবার। এরমধ্যে দুইবার আওয়ামী লীগ এবং ২ বার বিএনপির প্রার্থীরা জয় পান।
২০০৩ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের বদর উদ্দিন কামরান আর ২০১৩ ও ২০১৮ সালে মেয়র হন বিএনপির আরিফুল হক চৌধুরী। এবার বিএনপি ভোট বর্জন করায় আর প্রার্থী হননি আরিফুল। আর বদর উদ্দিন কামরানের মৃত্যুর পর এবার আওয়ামী লীগ মনোনয়ন পেয়েছেন আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।
সংবাদচিত্র ডটকম/সিটি করপোরেশন নির্বাচন-২০২৩