দালালের মাধ্যমে অবৈধভাবে আবারও লিবিয়া হয়ে সমুদ্রপথে ইতালি যাওয়ার সময় নিখোঁজ হয়েছেন নরসিংদীর বেলাব উপজেলার ৯ যুবক। এ খবরে পরিবারগুলোতে চলছে মাতম।
শুক্রবার (১১ আগস্ট) নিখোঁজ হওয়া ৯ যুবকের স্বজনরা সাংবাদিকদের কাছে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে জুন মাসে একইভাবে পাড়ি দিতে গিয়ে নরসিংদীর রায়পুরার একজনের মরদেহ উদ্ধার ও বেলাব উপজেলার ৭ জন নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা ঘটেছিল।
নিখোঁজরা হলেন— উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের কাঙ্গালিয়া গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে মোখলেছুর রহমান (২০), একই এলাকার মৃত হাছেন আলীর ছেলে আনোয়ার হোসেন ওরফে কামাল হেসেন (৩৪), ভাটের গ্রামের হাসান উদ্দিনের ছেলে মাসুদ রানা (২২), দুলালকান্দি গ্রামের হারুন রশিদের ছেলে মনির হোসেন (২২), একই এলাকার আ. মোতালিব মিয়ার ছেলে রবিউল (৩৩), রায়হান (২২), টান লক্ষ্মীপুর গ্রামের মহরম আলীর ছেলে স্বাধীন মিয়া (২০), নিলক্ষীয়া গ্রামের আমান মিয়া (২১) ও দেওয়ানেরচর গ্রামের আলমাছ আলীর ছেলে ইমন (২০)।
নিখোঁজদের স্বজনদের দাবি, ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা খরচ করে মূল দালালের স্থানীয় দুই সহযোগী দালাল দুলালকান্দি গ্রামের লাল মিয়ার ছেলে জাকির হোসেন এবং তার ফুফু একই এলাকার নুর কাসেমের স্ত্রী শাহিনুরের মাধ্যমে অবৈধভাবে ইতালি যাওয়ার উদ্দেশে দেশ ছাড়েন ওই যুবকরা।
নিখোঁজ কামাল হোসেনের ছোট ভাই জামাল মিয়া বলেন, ‘৫-৬ মাস আগে তার ভাইকে ১২ লাখ টাকা চুক্তিতে ইতালি নেয়ার উদ্দেশ্য প্রথমে লিবিয়া নিয়ে যাওয়া হয়। বেশ কিছুদিন গেম ঘরে রেখে গত বুধবার রাত ৮টায় নদীপথে ইতালির উদ্দেশে যাত্রা করার ৪০ মিনিট পর বহনকারী বোট ডুবে যায়। জাকিরের তত্ত্বাবধানে থাকা ২০ জন থেকে ১২ জন তীরে ফিরে এলেও ৯ জন নিখোঁজ রয়ে যায়। লিবিয়ায় থাকা দালাল জাকির হোসেনের মোবাইলে ও অন্যদের ফোন করে স্থানীয় মিলন মেম্বার বেশ কয়েকজন নিখোঁজ হওয়ার তথ্য জানতে পেরে আমাদেরকে জানান। এর মধ্যে আমার ভাইও নিখোঁজ।’
নিখোঁজ রবিউলের ভাই ইব্রাহিম বলেন, ‘৮ মাস আগে ভৈরবের দালাল রবিউল্লার মাধ্যমে লিবিয়া গিয়েছিলেন তার ভাই। কিন্তু সেখানে তার ভাইকে বৈধ কোনো কাগজ করে দেওয়া হয়নি। দুলালকান্দি এলাকার দালাল জাকির হোসেন ইতালি যাওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে আমাদের কাছ থেকে ৯ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। এখন খবর পেলাম আমার ভাই নিখোঁজ।’
রবিউলের স্ত্রী সাথী আক্তার বলেন, ‘১৭ দিন আগে আমার স্বামীর সঙ্গে কথা হয়েছিল, তিনি তার জন্য দোয়া চেয়ে জানিয়েছিলেন আমরা এখন গেম ঘরে আছি। আগামী বুধবারে ডিঙিতে (বোট) তুলবে, এ কথা বলে মোবাইল বন্ধ করে দেয়। তারপর থেকে আর যোগাযোগ করতে পারিনি।’
এ বিষয়ে দুলালকান্দি গ্রামের বাসিন্দা নারায়ণপুর ইউপি সদস্য মিলন মিয়া বলেন, ‘বিভিন্ন পরিবারের লোকজনের মাধ্যমে নিখোঁজের খবর পেয়ে লিবিয়ায় থাকা জাকির হোসেনের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করি। তাকে ফোন দেওয়া হলে অন্য একজন ফোন রিসিভ করে জানান, বোট ডুবিতে জাকির হোসেনের অধীনে থাকা ২০ জন থেকে আমানসহ ১২ জন গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার হলেও ৮ জনের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। তবে উদ্ধার হওয়া আমানের সঙ্গেও পরিবারের লোকজন যোগাযোগ করতে পারছেন না।’
এদিকে লিবিয়া হয়ে ইতালি যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগরে নিখোঁজ হওয়ার খবরে অভিযুক্ত দালাল জাকির হোসেন ও তার ফুফু শাহিনুরের বাড়িতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। নিখোঁজের খবর ছড়িয়ে পড়লে থেকে তাদের পরিবারের সদস্যরা বাড়িতে তালা দিয়ে আত্মগোপনে গেছেন।
বেলাব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.তানভীর আহমেদ বলেন, ‘বিষয়টি সাংবাদিকদের মাধ্যমে এবং লোক মুখে শুনেছি। এখনও কোনো অভিযোগ আসেনি, এ বিষয়ে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে।’
বেলাব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আয়েশা জান্নাত তাহেরা বলেন, ‘ইতালি যাওয়ার পথে বেশ কয়েকজন নিখোঁজের সংবাদ লোকমুখে শুনেছি। পরিবারের পক্ষ থেকে আমাদের সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করেননি। নিখোঁজের বিষয়ে জানতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি।’
এর আগে গত ২৪ জুন নৌপথে ইতালি পাড়ি দিতে গিয়ে নরসিংদীর বেলাব উপজেলার ৭ জন নিখোঁজ ও রায়পুরা উপজেলার ১ জনের মৃত্যুর খবর আসে গণমাধ্যমে।
সংবাদচিত্র ডটকম/সারাদেশ