সম্প্রতি ভারতের আসামের গুয়াটিতে অনুষ্ঠিত দক্ষিণ এশিয়া আঞ্চলিক জুনিয়র আন্তর্জাতিক ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্টের ডাবলসে (অনূর্ধ্ব-১৫) চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশের দুই প্রতিযোগী। যার অন্যতম দিনাজপুর জেলার বিরামপুর উপজেলার পৌর শহরের পূবপাড়ার ছেলে মোস্তাকিম হোসেন।
১০টি দেশের প্রতিযোগিরা এ টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছিল। মোস্তাকিমরা শ্রীলঙ্কা, নেপাল ও ফাইনালে ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে।
জানা গেছে, ব্যাডমিন্টন মোস্তাকিমের প্রাণের স্পন্দন। কিন্তু সমস্যা হলো সাংসারিক টানাপোড়েন। গরিব ঘরে জন্ম হলেও ব্যাডমিন্টন খেলায় দারুণ পারদর্শী সে। স্বপ্ন ছিল একজন নামকরা ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় হবে। কিন্তু নড়বড়ে সাংসারিক অবস্থা তার সেই স্বপ্নের পথে দেয়াল হয়ে দাঁড়ায়। মোস্তাকিমের বাবা পেশায় রিকশাচালক, মা সংসারের কাজ সামলানোর পাশাপাশি বাইরে টুকটাক কাজ করে সামান্য টাকা আয় করেন। সংসারে অভাব অনটন লেগে থাকলেও সুযোগ পেলেই ব্যাডমিন্টন খেলতে ছুটে যেতো বিরামপুর ব্যাডমিন্টন একাডেমির মাঠে। সেখানে সিনিয়র খেলোয়ারদের সঙ্গে সে অনুশীলন করতো।
এভাবেই একদিন খেলতে গিয়ে বিরামপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার পরিমল কুমার সরকারের নজরে পড়ে সে। আর ছেলেটির প্রতিভার আগুন আঁচ করতে পারেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার। তিনি মোস্তাকিমকে এগিয়ে যাবার রাস্তা দেখান। সেই সঙ্গে আর্থিক সহযোগিতাসহ মাথার ওপর অনুপ্রেরণার ছায়া হয়ে দাঁড়ান।
এদিকে, মোস্তাকিমের এগিয়ে যাওয়া এবং অনন্য প্রাপ্তিতে দারুণ উচ্ছ্বসিত ইউএনও পরিমল কুমার সরকার। মোস্তাকিম শুধু দেশের নামই নয়, বিরামপুরের নামও উজ্জ্বল করেছে। তাই এই খুশির খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ইউএনও পরিমল কুমার সরকার মোস্তাকিমকে বিরামপুর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিনন্দন এবং শুভেচ্ছা জানান। সেই সঙ্গে মোস্তাকিম যেন আরও অনেকদূর এগিয়ে যায় সেই প্রত্যাশাও প্রকাশ করেন।
মোস্তাকিমকে সব প্রকার সহযোগিতা ও ঢাকায় অনুশীলনের আশ্বাস দিয়েছেন বিরামপুর ব্যাডমিন্টন একাডেমির সদস্য সভাপতি সাহিনুর আলম শানু ও সাধারণ সম্পাদক রোকনুজামান দুলালসহ সদস্যরা। মোস্তাকিমের পিতা মুন্নার হাতে ইউএনও পরিমল কুমার সরকার ১০ হাজার টাকা সহায়তাও দেন।
তিনি বলেন, চ্যাম্পিয়ন হওয়ার খবর শুনে আমি খুশী হয়েছি। ইউএনও হিসেবে অনেক মানুষের মাঝেই সরকারি সহায়তা দিয়েছি, কিন্তু এটিকে আমার কর্মজীবনের অন্যতম সেরা অর্জন হিসেবেই মনে করছি। মোস্তাকিমের মত ছেলেরা সামান্য সুযোগ পেলেই নিজের দেশের লাল-সবুজ পতাকা বিদেশের মাটিতে সাফল্যের সঙ্গে উড়াতে পারে।