চারাপিতা মরিচ একটি জাতের নাম। তবে যেনতেন মরিচ নয়, এটা বিশ্বের সবচেয়ে দামি মরিচ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। কারণ চারাপিতা মরিচের প্রতি কেজি গুঁড়ার দাম ২৬ হাজার মার্কিন ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ২৮ লাখ টাকারও বেশি!
হ্যাঁ, দেশে প্রথমবারের মতো সেই চারাপিতা মরিচের আবাদ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন কুমিল্লা নগরীর ঠাকুরপাড়ার আহমেদ জামিল সেলিম। ছয় বছরের চেষ্টায় মরিচের বীজ থেকে চারা উৎপাদন করেছেন তিনি। পরীক্ষামূলকভাবে এই মরিচের গাছ তিনি লাগিয়েছেন নিজের বাড়িতে। এত দামি মরিচের গাছ দেখতে কৌতূহলী অনেকেই ভিড় করছেন তার বাড়িতে।
জেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চারাপিতা মরিচ মূলত একটি মসলা। এটি সাধারণত দক্ষিণ আমেরিকার দেশ পেরুতে জন্মায়। তবে সাধারণ মানুষ এমনকি উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অনেকেই জানেন না এই মরিচের কথা। তাই অধিকাংশ লোকের কাছেই মরিচটি অনেকটা রহস্যাবৃত।
সরেজমিনে দেখা যায়, নিজের বাগানে চারাপিতা গাছের যত্ন নিচ্ছেন আহমেদ জামিল। সবুজ পাতার মাঝে ছোট ছোট চারাপিতা মরিচ ধরে আছে। মরিচের আকার এতই ছোট যে কাছ থেকে না দেখলে খুব ভালোভাবে সেটি বোঝাই যায় না।
আহমেদ জামিল সেলিম বলেন, ‘ছয় বছর আগে ইন্টারনেটে জানলাম, দামি মরিচ চারাপিতা। জন্মে পেরুতে। সেখান থেকে বীজ এনে লাগিয়ে সফল হইনি। পরে কুমিল্লা নগরীর মহিলা কলেজ রোডের বাসিন্দা মেজবাহুজ্জামান বাবুর সহযোগিতা চাই। তিনি আমেরিকা থাকেন। তার কাছে বীজ পাঠিয়ে বলি, তিনি যেন সেখানে চারাপাতা মরিচের বীজ বপন করেন। তিনি বীজ লাগানোর এক মাস পর কয়েকটি চারা গজায়। এরপর তিনি সেগুলো পরিচর্যা করেন। পরে সেই গাছের মরিচের বীজ আবার আমাকে পাঠান।’
‘আমি ৫০টি বীজ লাগানোর পর সেখান থেকে পাঁচটি চারা গজায়। এর মধ্যে দুটি গাছ ঢাকার বনশ্রীর বাসায় এবং তিনটি কুমিল্লার বাসায় লাগিয়েছি। গাছগুলোর আলো প্রয়োজন। শেডের নিচে রাখতে হয়। আবার গাছে নিয়মিত সেচও দিতে হয়। এ মরিচ কাঁচা অবস্থায় সবুজ, পাকলে হলুদ দেখায়। দেখতে অনেকটা গোল মরিচের মতো। এর গন্ধটাও অদ্ভুত। আমি চাই, দেশে এই মরিচ বাণিজ্যিকভাবে চাষ হোক। এতে দেশের কৃষি ও কৃষক সমৃদ্ধ হবে,’ যোগ করেন আহমেদ জামিল সেলিম।
এর আগে দেশে সর্বপ্রথম ব্ল্যাক টমেটোর বীজ এনে রোপণ করেও সফল হয়েছেন সেলিম। এখন অনেকের বাসার ছাদে ব্ল্যাক টমেটো গাছ দেখা যায়। এতে তার খুব ভালো লাগে। এ ছাড়া মেডজুল খেজুর, কোরিয়ান ভোজ্যতেল, সাওপেরিলাসহ বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ঝাল মরিচ চাষ করেও সফল হয়েছেন তিনি। সেগুলো অবশ্য তিনি বাণিজ্যিকভাবে চাষ করতে পারেননি।
সেলিম বলেন, ‘আমার উদ্দেশ্য খুব সরল। আমি চাই, যেসব ফুল-ফল ও ফসলের চারা আমরা ইউটিউবে দেখি, সেগুলো বাংলাদেশের আবহাওয়াতে যেন জন্মাতে পারি। সে লক্ষ্যেই আমি ব্যতিক্রমী ফুল-ফল ও ফসলের চারা এনে দেশের আবহাওয়াতে বংশবৃদ্ধির চেষ্টা করছি।’
কুমিল্লার কৃষি ও পরিবেশ সংগঠক মতিন সৈকত বলেন, ‘আমাদের দেশের মাটি খুবই উর্বর। এখানে মাটির যত্ন নিলে সোনা মেলে। আহমেদ জামিলকে চিনি। তিনি ব্যতিক্রমী সব গাছ সংগ্রহের চেষ্টা করেন। এই যেমন সবচেয়ে দামি মরিচ চারাপিতা সংগ্রহ করেছেন। দীর্ঘ সময় ধরে চেষ্টার পর সফলও হয়েছেন। এটি অবশ্যই আমাদের কৃষির জন্য ইতিবাচক।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লার সদ্য সাবেক উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘আহমেদ জামিল বিভিন্ন সময় নতুন ফসলের চাষ করেন। তার দাবি, তিনি বিশ্বের দামি মরিচ চারাপিতার চাষ করেছেন। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে বিস্তারিত বলা যাবে।’
সংবাদচিত্র ডটকম/কৃষি