কুমিল্লা (দক্ষিণ) জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের (কুসিক) দুবারের মেয়র মনিরুল হক সাক্কু ‘স্বতন্ত্র’ পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করলে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে এমন খবর এরই মধ্যে গণমাধ্যমে এসেছে। কিন্তু দল থেকে বহিষ্কারের এমন ‘হুমকি’ পাত্তাই দিচ্ছেন না সাক্কু। আগামী ১৭ মে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিনে তিনি রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র দাখিল করবেন বলে জানিয়েছেন।
অপর দিকে কুসিকে নৌকার প্রার্থী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরফানুল হক রিফাত। তিনি মহানগরীতে বিরাজমান দলীয় কোন্দল নিরসন ও নৌকার মনোনয়নপ্রত্যাশী অপর ১৩ জনকে নিয়ে প্রচারণা চালিয়ে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। ইতিমধ্যে দলের মনোনয়নবঞ্চিতরা নৌকার পক্ষে কাজ করবেন বলে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। ২৭ ওয়ার্ডের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা রিফাতকে বিজয়ী করতে একাট্টা হয়ে ভোটের মাঠে ঝড় তুলছেন।
নৌকার প্রার্থী রিফাত বলেন, ‘যারা নৌকার মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন সবাইকে নিয়ে আমি কাজ করব। তারা যেন নৌকার প্রচারণায় অংশ নেয় সেই আহ্বানও জানাব।’ তিনি আরও বলেন, ‘ মান অভিমান ভুলে আশা করি সবাই নৌকার বিজয়ের জন্য মাঠে কাজ করবে।’ নৌকার মনোনয়নপ্রত্যাশীদের অন্যতম ছিলেন নারী আসনের এমপি ও প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যক্ষ আফজল খানের কন্যা আঞ্জুম সুলতানা সীমা। সদর আসনের এমপির সঙ্গে তাদের পরিবারের রাজনৈতিক বিরোধ দীর্ঘদিনের। তবে নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়ার বিষয়ে সীমা বলেন, ‘আমাদের নেত্রী এ মনোনয়ন দিয়েছেন, আমরা নেত্রীর সিদ্ধান্তের বাইরে যেতে পারি না এবং যাবোও না। তাই নৌকার বাইরে গিয়ে অন্য কাউকে সমর্থন করার প্রশ্ন আসবে কেন ? আমরা কি আওয়ামী লীগ করি না ?’
এদিকে শুক্রবার রাত থেকে সাক্কুর অনুসারীরা ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার (সাক্কু) নির্বাচনী মাঠে থাকা, প্রার্থী হওয়া ও বিজয়ের বিষয়ে আশাবাদী বলে প্রচারণা চালান। অপর দিকে মনোনয়নপত্র দাখিল করলে সাক্কু বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত হবেন এমন প্রচারণাও চলছে জোরেশোরে। এদিকে সাক্কু ছাড়াও স্বতন্ত্র ব্যানারে প্রার্থী হতে যাচ্ছেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি নিজাম উদ্দিন কায়সার। নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে কায়সার বলেন, তার অনুসারী নেতাকর্মীদের অনুরোধে তিনি প্রার্থী হতে যাচ্ছেন। ১৭ মে তিনি মনোনয়নপত্র দাখিল করবেন বলে জানান কায়সার। এদিকে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাজী আমিন উর রশিদ ইয়াছিন বলেন, ‘এ সরকারের অধীনে আমরা (বিএনপি) কোনো নির্বাচনেই যাচ্ছি না, কেউ দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে অংশ নিলে বিষয়টি দলের হাইকমান্ড থেকেই সিদ্ধান্ত আসবে।’
দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচনের অংশগ্রহণের বিষয়ে শনিবার বিকালে সিটি মেয়র মনিরুল হক বলেন, আমি দুবারের নির্বাচিত মেয়র। ২৭টি ওয়ার্ডে আমার অনেক নেতাকর্মী, সমর্থক রয়েছে। এ ছাড়া লাখো মানুষ আমাকে ভালোবাসে। তারা চায় আমি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করি। সাক্কু বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাকে নগরীর উন্নয়নে অনেক টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। নগরীর অনেক কাজ এখনো শেষ করতে পারেনি। তাই নির্বাচিত হয়ে এসব সমস্যা সমাধান করতে চাই। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ কেন ? এ বিষয়ে সাক্কু বলেন, ‘সিটি নির্বাচন স্থানীয় সরকারের নির্বাচন, এটা তো জাতীয় নির্বাচন নয়, এখানে স্বতন্ত্র প্রতীকে আমি নির্বাচন করতেই পারি। তারা (বিএনপি) এর আগেও আমাকে কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্যের পদ থেকে বহিষ্কার করেছে, এখন যদি জেলা বিএনপি থেকেও বহিষ্কার করে তাহলে কি করব, আমার তো কিছুই করার নেই।’
কুসিক নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহেদুন্নবী চৌধুরী বলেন, এ সিটির ২৭টি সাধারণ ও ৯টি সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডে মোট ভোটার ২ লাখ ২৭ হাজার ৭৯২ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ১১ হাজার ৬০০ ও নারী ১ লাখ ১৬ হাজার ১৯১ জন। ১০৫ ভোটকেন্দ্রের সবকটিতে ইভিএমে ভোট নেওয়া হবে। তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ১৭ মে ও মনোনয়নপত্র বাছাই ১৯ মে। রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের করা যাবে ২০-২২ মে পর্যন্ত। আপিল নিষ্পত্তি করা হবে ২৩-২৫ মে। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৬ মে। প্রতীক বরাদ্দ ২৭ মে। আগামী ১৫ জুন ইভিএম ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
সংবাদচিত্র/কুমিল্লা সিটি নির্বাচন