শাহ আলমগীর নেই দেখতে দেখতে পাঁচ বছর হয়ে গেলো!একজন পরিচ্ছন্ন মানুষ, সাংবাদিক বান্ধব হাস্যোজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব। জীবন চলার পথে সবক্ষেত্রে নিজের যোগ্যতা আর সাফল্য তুলে ধরেছেন। সফল হয়েছেন প্রতিটি কাজে।
তাঁর মৃত্যুতে অনেক সংবাদকর্মী অশ্রুজলে ভেসেছেন। আর্তনাদ করেছেন। তাঁর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছিলো সাংবাদিক মহলে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাংবাদিকরা প্রিয় সহকর্মীর মৃত্যুতে বিভিন্ন আবেগঘন মন্তব্য করেছেন, ভিন্ন ভিন্ন স্মৃতিস্মরণ করে জানিয়েছেন শ্রদ্ধা।
সাংবাদিক ইউনিয়ন নেতাদের সম্পর্কে সাধারণ ধারণা, ‘এরা অসৎ হয়, এরা সাংবাদিকতাকে পুঁজি করে আর্থিক ও বৈষয়িক ধান্দায় ব্যস্ত থাকে। সেই ধারণা ভেঙ্গে দিতে যে কয়জন সাংবাদিক ইউনিয়ন নেতা হতে সক্ষম হয়েছিলেন, তাদের অন্যতম শাহ আলমগীর। তিনি ইউনিয়ন নেতা হয়েও পেশাদারিত্বের জায়গায় সক্রিয় থেকেছেন আজীবন’।
সবাইকে চলে যেতে হবে, তবু মন মানে না আমাদের। একজন মৃদুভাষী, বিনয়ী ও আমার মতো অনুজের প্রতি পিতৃ স্নেহশীল ছিলেন তিনি। প্রায়ই খোঁজ নিতেন, জানতে চাইতেন তোমার কি অবস্থা? কষ্টে বুক ফেটে যায়- এখন একথাটুকু বলারও কেউ নেই। আল্লাহ আপনি তাঁর সহায় হোন।
বেশ কয়েক বছর ধরে এমন একটি কঠিন রোগের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচেছিলেন, আপনার (আলমগীর ভাই) ওই সদা হাসিমুখ টানতো সবাইকে। সবসময় এতো সদাহাস্যোজ্জ্বোল থাকতেন কি করে!
কাজ পাগল মানুষ, সাংবাদিক ও সাংবাদিকতা পেশার মানোন্নয়নের জন্য ভাবতেন। তবে তার কোনটাই নিজের জন্য নয়। সবই সাংবাদিকতার জন্য। সুস্থ ধারার। মুক্তপ্রাণের সাংবাদিকতার জন্য। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে লালন করা সাংবাদিকতার জন্য। মুক্ত-বাক স্বাধীন গণমাধ্যম দেখতে চেয়েছিলেন শাহ আলমগীর।
প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের (পিআইবি) মহাপরিচালক সাংবাদিক নেতা মো. শাহ আলমগীর গত ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, বৃহস্পতিবার সকাল ১০ টার দিকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।
সাংবাদিক শাহ আলমগীর গণমাধ্যমের বিভিন্ন শাখায় কাজ করেছেন। অনন্য ব্যক্তিত্ব হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলেছিলেন বৈচিত্রময় কর্মজীবনে। পত্রিকা কিংবা টেলিভিশন-সমকালীন আধুনিক সাংবাদিকতার পথিকৃত হিসেবেও নিজের স্থান করে নিয়েছিলেন গণমাধ্যমে।
শাহ আলমগীর এর বর্ণাঢ্য কর্মজীবন:
উপমহাদেশের প্রথম শিশু-কিশোর পত্রিকা সাপ্তাহিক কিশোর বাংলা পত্রিকায় যোগ দেওয়ার মাধ্যমে তিনি সাংবাদিকতা শুরু করেন শাহ আলমগীর। কিশোর বাংলায় ১৯৮০ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত সহ-সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া কাজ করেছেন দৈনিক জনতা, বাংলার বাণী, আজাদ ও সংবাদ-এ। প্রথম আলো প্রকাশের সময় থেকেই তিনি পত্রিকাটির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং ১৯৯৮ সালের নভেম্বর মাস থেকে ২০০১ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত যুগ্ম বার্তা-সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন।
পত্রিকা ছাড়াও চ্যানেল আইয়ের প্রধান বার্তা সম্পাদক, একুশে টেলিভিশনে হেড অব নিউজ, যমুনা টেলিভিশনে পরিচালক (বার্তা) এবং মাছরাঙা টেলিভিশনে বার্তা প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
তিনি শিশু কল্যাণ পরিষদ এবং শিশু ও কিশোরদের জাতীয় প্রতিষ্ঠান ‘চাদের হাট’র সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। বাংলাদেশ শিশু একাডেমীর পরিচালনা পর্ষদেরও সদস্য। পিআইবিতে যোগদানের পূর্বে তিনি সর্বশেষ এশিয়ান টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রধান সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি ‘কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ সাহিত্য পুরস্কার ২০০৬, ‘চন্দ্রাবতী স্বর্ণপদক ২০০৫’, ‘রোটারি ঢাকা সাউথ ভকেশনাল এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড ২০০৪’ এবং ‘কুমিল্লা যুব সমিতি অ্যাওয়ার্ড ২০০৪’ পেয়েছেন।
শাহ আলমগীর ২০১৩ সালের ৭ জুলাই পিআইবির মহাপরিচালক হিসেবে যোগ দেন। সরকার ২০১৮ সালের জুলাই মাসে তাঁর চাকরির মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ায়। ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন।
শাহ আলমগীরের পৈতৃক বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে হলেও বাবার চাকরি সূত্রে জীবনের বড় একটি সময় বৃহত্তর ময়মনসিংহে কেটেছে তাঁর। ময়মনসিংহের গৌরীপুর কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। বাংলা সাহিত্যে অনার্স ও মাস্টার্স করেন। মস্কোর ইন্সটিটিউট অব জার্নালিজম থেকে সাংবাদিকতায় ডিপ্লোমা করেছেন। উচ্চতর কোর্স সম্পন্ন করেছেন থমসন ফাউন্ডেশন থেকে। অভিজ্ঞতার ঝুলিতে সংগ্রহ করেছেন বিভিন্ন দেশের গণমাধ্যমের কোর্স।
পারিবারিক জীবনে শাহ আলমগীর এক পুত্র ও কন্যা সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রী ফৌজিয়া বেগম একটি ওষুধ কোম্পানিতে কর্মরত।
সংবাদচিত্র ডটকম/স্মরণীয় বরণীয়