শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর গণ-অভ্যুত্থানকেন্দ্রিক সহিংসতার মামলাগুলোকে ঘিরে ফেনীতে গড়ে উঠেছে বহুমুখী ‘মামলা–বাণিজ্য’। মামলার খসড়া এজাহারে নাম উঠিয়ে টাকা দাবি, টাকা দিয়ে নাম কেটে নেওয়া, আবার জামিন পাওয়ার পর কারাফটকে নতুন মামলায় জড়িয়ে গ্রেপ্তার এড়াতে ঘুষ— সব মিলিয়ে এই বাণিজ্যে জড়িত স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও পুলিশ কর্মকর্তারা।
এজাহার থেকে জেলগেট পর্যন্ত বাণিজ্য
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ফেনীতে বিএনপি, যুবদল ও জামায়াতের কয়েকজন নেতার পাশাপাশি পুলিশের কিছু কর্মকর্তা এ বাণিজ্যে সরাসরি জড়িত। খসড়া এজাহার হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়ে টাকা দাবি করা হয়। টাকা না দিলে নাম যুক্ত হয়। এভাবে ব্যবসায়ী, প্রবাসী, চিকিৎসকসহ বহু নিরপরাধকে মামলায় আসামি করা হয়েছে।
জামিনের পর কারাফটকে আবার গ্রেপ্তার এড়াতেও মোটা অঙ্কের টাকা দিতে হচ্ছে ভুক্তভোগীদের। কারও ক্ষেত্রে ৫০ হাজার, কারও ক্ষেত্রে ৪–৫ লাখ টাকা পর্যন্ত লেনদেন হয়েছে।
ভুক্তভোগীর অভিজ্ঞতা
এক চিকিৎসক জানান, হোয়াটসঅ্যাপে খসড়া এজাহারে তাঁর নাম দেখে ৪০ হাজার টাকা দিয়ে নাম কেটে ফেলেন।
এক আওয়ামী লীগ নেতা জামিনের পর জেলগেট থেকে পুনরায় গ্রেপ্তার এড়াতে চার লাখ টাকা খরচ করেন।
সত্তরোর্ধ্ব সাবেক চেয়ারম্যান শাজাহান মিনু জামিনের পর তিন লাখ টাকা দিয়ে পুনরায় আটক হওয়া থেকে রক্ষা পান।
রাজনৈতিক প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণ
ফেনীতে এখন পর্যন্ত ২২টি মামলা হয়েছে— ৭টি হত্যা ও ১৫টি হত্যাচেষ্টা মামলা। এসব মামলায় ২ হাজার ১৯৯ জন নামীয় আসামি ও প্রায় ৪ হাজার অজ্ঞাতনামা আসামি রয়েছে।
তদন্তে দেখা গেছে, হত্যা মামলার আসামি বাছাইয়ে বিএনপি ও জামায়াতের স্থানীয় নেতাদের ভূমিকা রয়েছে।
ফেনী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শেখ ফরিদ বাহার স্বীকার করেছেন, মামলা নিয়ে অনিয়ম ও বাণিজ্যের অভিযোগ সত্য। তিনি বলেন, “গণহারে আসামি করার দরকার নেই। শিগগিরই দলের বর্ধিত সভায় এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
পুলিশের ভূমিকা
ফেনী সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আরিফুল ইসলাম সিদ্দিকীসহ কয়েকজন কর্মকর্তার নামও জড়িয়েছে। তাঁকে সম্প্রতি বদলি করা হলেও পুলিশ সুপার দাবি করেছেন, এটি “স্বাভাবিক বদলি”।
সংবাদচিত্র ডটকম/অপরাধ