জাতীয় নির্বাচনের রূপরেখা না দেয়ায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি আশাহত হয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ অবস্থায় অন্তর্বর্তী সরকারকে সংস্কার দৃশ্যমান করার আহ্বান জানিয়েছেন ফখরুল।
সোমবার (১৮ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে মওলানা ভাসানীর মৃত্যুবার্ষিকীর আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুর বলেন, ‘আমরা একটা ক্রান্তিকাল পার করছি। রবিবার (১৭ নভেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে আমি আশাহত হয়েছি। ধারণা করেছিলাম, তিনি তার প্রজ্ঞা দিয়ে একটা নির্বাচনের রূপরেখা দেবেন। আমরা এখন পর্যন্ত আপনাকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু ফ্যাসিবাদের দোসররা সচিবালয়ে বসে আছেন। তারা তো আপনাকে সংস্কার করতে দেবেন না। তাই সংস্কার দৃশ্যমান করুন। তবুও মানুষ মেনে নিচ্ছে। তারা ভাবছে, আপনি একটা সুন্দর জিনিস দেবেন।’
তিনি বলেন, আমরা অবশ্যই সংস্কার চাই। তবে এমন সময় যেনো না নেওয়া হয়, যাতে জনগণের ভেতর ভ্রান্ত ধারণা তৈরি হয়। আমরা বলেছি, একজন দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। পার্লামেন্ট হতে হবে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট। বিচার বিভাগের সংস্কারের কথা আগেও বলেছি আমরা। তারেক রহমানের কথা দেশবাসী ও তরুণরা গ্রহণ করছেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘রাজনীতি যদি ভুল হয়, তাহলে সে দলের ভরাডুবি হয়। যেমন এখন একটা পরিবর্তন এসেছে, এটাকে বুঝতে হবে যে ছেলেরা কী বলছে। ছাত্ররা অনেক কথা বলছে, তাদের অধিকারও আছে। আমরা ১৫ বছর ধরে জান দিয়েছি, প্রাণ দিয়েছি। যখন বিভাগীয় সমাবেশ করতাম তখন আমরা বলতাম তরুণরা না আসলে বুক পেতে গুলি নেবে কে? আমরা বয়স্করা চিন্তা করি, আমার কী হবে? আমার পরিবারের কী হবে? কাজেই ছাত্রদের সঙ্গে কোনো দূরত্ব তৈরি করা যাবে না।’
‘আমরা আবার একটু হিসাবি। সেজন্যই আমরা বলছি, দ্রুত নির্বাচন হওয়া দেশের জন্য মঙ্গল। এই সরকার যত বেশি দিন থাকবে ততই সমস্যা বাড়বে। কারণ এই সরকারের কোনো মেন্ডেড নেই। হাসিনা পালিয়েছেন কেন? কারণ তিনি বুঝতে ভুল করেছেন। তিনি আমাদের কথা শোনেননি। আবারও বলতে চাই, এমন কাজ না করি, যাতে দেশ অনিশ্চয়তার দিকে যায়’, যোগ করেন ফখরুল।
মাওলানা ভাসানী ব্যতিক্রমী রাজনৈতিক নেতা উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ভাসানী কিংবদন্তি, তিনি বিরাট বটগাছ। তার অভ্যুত্থান একদম সাধারণ পরিবার থেকে। তার ভেতরে একটা আগুন আছে। সমগ্র ভারতবর্ষে পাকিস্তান আন্দোলনের জন্য তিনি কাজ করেছেন। সর্বত্র তার বিচরণ ছিল। তার আদর্শ আজকের রাজনীতির সঙ্গে মিলিয়ে নিতে হবে। চাপিয়ে দেওয়া বৈষম্যের বিরুদ্ধে ছিল তার আন্দোলন।
ফখরুল বলেন, ‘আমি যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শেষ বর্ষের ছাত্র, তখন পল্টনে মাওলানা ভাসানী ডাক দিয়েছিলেন। সমাবেশ নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু হাজার হাজার লোক হয়েছিল। আমরা কী করে তাকে ভুলবো? তিনি যখন অসুস্থ হয়ে পিজিতে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন, সে সময় তিনি জিয়াউর রহমানকে বলেছিলেন তুমি তরুণ; তুমি সৎ; তুমি পারবে।’
‘তাই আসুন আমরা মাওলানা সাহেবের আদর্শ ধারণ করে সামনের দিকে এগিয়ে যাই। আমরা বিশ্বাস করি, এ সরকার পারবে, এ দেশের মানুষ পারবে’, যোগ করেন বিএনপি মহাসচিব।
সংবাদচিত্র ডটকম/রাজনীতি