নিম্নচাপের প্রভাবে বঙ্গোপসাগর উত্তাল থাকায় কক্সবাজার সৈকতজুড়ে জোয়ারের সময় আছড়ে পড়ছে বড় বড় ঢেউ। এতে গত এক সপ্তাহ ধরে সৈকতের লাবণী ও সুগন্ধাসহ কয়েকটি পয়েন্টে তীব্র ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে।
অব্যাহত ভাঙ্গনে প্রতিদিনই সৈকত এলাকা শ্রীহীন হওয়ার পাশাপাশি ঝুঁকির মুখে পড়ছে পর্যটকদের নিরাপত্তা।
আবহাওয়া অধিদপ্তর কক্সবাজার আঞ্চলিক কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ মো. আব্দুল হামিদ মিয়া বলেন, সৃষ্ট নিম্নচাপের পাশাপাশি পূর্ণিমার প্রভাবে গত এক সপ্তাহ ধরে সাগর উত্তাল রয়েছে। এ কারণে কক্সবাজারসহ দেশে সব সমুদ্রবন্দরকে তিন নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
“বৈরি আবহাওয়ার কারণে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে সাগরের পানি দুই থেকে চার ফুটের বেশি উচ্চতায় প্রবাহিত হয়ে সৈকতে আছড়ে পড়ছে।”
এ পরিস্থিতি আগামী সপ্তাহখানেক বহাল থাকার সম্ভাবনা রয়েছে, এ সময় সাগর উত্তাল থাকার পাশাপাশি মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে বলে জানান এ আবহাওয়াবিদ।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রতিদিনের জোয়ার-ভাটায় ভাঙ্গনের এ মাত্রা অব্যাহত থাকলে বালিয়াড়ির সৈকতের বিস্তৃতি দিন দিন সংকুচিত হয়ে পড়বে। এতে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের অপার সৌন্দর্য্য শ্রীহীন হওয়ার শঙ্কা তৈরি হচ্ছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে পর্যটকরা কক্সবাজার বিমুখ হবেন।
শুক্রবার বিকালে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, কক্সবাজার সৈকতের ডায়াবেটিক থেকে কলাতলী মেরিন ড্রাইভ সড়ক পর্যন্ত বেশ কয়েকটি পয়েন্ট ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে।
ভাঙ্গনের হুমকির মুখে রয়েছে জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেলের কার্যালয়, ট্যুরিস্ট পুলিশের কার্যালয়, লাবণী পয়েন্টের পর্যটন ছাতা মার্কেট এবং সুগন্ধা পয়েন্টের বিচ মার্কেটসহ বেশকিছু স্থাপনা।
সাগরে গোসলে নামা পর্যটকদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত সি-সেইফ লাইফ গার্ডের ইনচার্জ ওসমান গনি বলেন, গত কয়েকদিন ধরে অব্যাহত ভাঙ্গনের কবলে পড়ে সাগরের প্রবাহমান পানি উপকূলের অন্তত ৫০০ গজ কাছাকাছি সরে এসেছে। এতে বালিয়াড়ি সৈকতের বিস্তৃতি সংকুচিত হওয়ায় পর্যটকদের ঘুরাঘুরির জায়গাও কমে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, বৈরি আবহাওয়ার কারণে সৈকতের কয়েকটি পয়েন্টে উড়ানো হচ্ছে লাল নিশানা (পতাকা)। পর্যটকদের উত্তাল সাগরে গোসলে না নামতে ট্যুরিস্ট পুলিশ ও লাইফ গার্ড কর্মীরা সচেতনতামূলক প্রচার চালাচ্ছে। তারপরও নির্দেশনা অমান্য করে অনেক পর্যটক গোসলে নামছেন।
ট্যুরিস্ট পুলিশের কক্সবাজার অঞ্চলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রেজাউল করিম বলেন, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে সাগর উত্তাল থাকায় জোয়ারের পানিতে লাবণীসহ সৈকতের কয়েকটি পয়েন্ট তীব্র ভাঙ্গনের মুখে পড়েছে। জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে ট্যুরিস্ট পুলিশের একটি বক্স।
এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের দ্রুত ব্যবস্থা নিতে অবহিত করা হয়েছে বলে জানান পর্যটন পুলিশের এ কর্মকর্তা।
এদিকে শুক্রবার দুপুরে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শনে যান পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ারসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
পরিদর্শনকালে সাংবাদিকদের কবির বিন আনোয়ার বলেন, আপাতত ভাঙ্গন রোধে বালি ভর্তি জিও ব্যাগ দিয়ে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সৈকতের ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
“১৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে একনেকে জমা দেওয়া হয়েছে। বাঁকখালী নদীর মোহনার নাজিরারটেক থেকে মেরিন ড্রাইভ সড়ক পর্যন্ত স্থায়ী এ প্রতিরক্ষা বাঁধটি নির্মাণ করা হবে। পরিবেশ-প্রতিবেশের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে এ বাঁধটি নির্মিত হবে।”
বিশেষজ্ঞসহ সংশ্লিষ্টদের মতামত ও পরামর্শের ভিত্তিতে স্থায়ী এ প্রতিরক্ষা বাঁধটি নির্মিত হলে সৈকত এলাকা ভাঙ্গনের কবল থেকে রক্ষা পাবে বলে মন্তব্য করেন এ সরকারি কর্মকর্তা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড কক্সবাজার কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী ড. তানজির সাইফ আহমেদ বলেন, বৈরি আবহাওয়ায় অন্য সময়ের চাইতে এ বর্ষায় সৈকতে ভাঙ্গনের তীব্রতা বেশি। সৈকতে ভাঙ্গনের কবলে পড়ার পরপরই জিও ব্যাগ দিয়ে অস্থায়ীভাবে রক্ষার চেষ্টা চালানো হয়। কিন্তু তারপরও ভাঙ্গন অব্যাহত রয়েছে।
সৈকতে ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শনকালে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ, অতিরিক্ত জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু সুফিয়ান ও ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রেজাউল করিম সহ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদচিত্র/সারাদেশ