যুক্তরাষ্ট্র থেকে চলতি বছর এখন পর্যন্ত ৩১ বাংলাদেশি নাগরিককে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছেন ৩০ জন পুরুষ এবং একজন নারী।
অবৈধভাবে দেশটিতে অবস্থান এবং বিভিন্ন মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ার পর তাদের ফেরত পাঠানো হয়। পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) এবং ইমিগ্রেশন সূত্রে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি সরকারি দপ্তর অবৈধ অভিবাসীদের বিষয়টি তদারক করে থাকে। দপ্তরগুলো হলো– অফিস অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি, ইউএস কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রটেকশন এবং ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট। সংশ্লিষ্টরা একে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন অভিবাসন নীতির প্রতিক্রিয়া হিসেবে মনে করছেন।
ফেরত পাঠানোদের মধ্যে রয়েছেন ৩০ জন পুরুষ ও একজন নারী। এসব ব্যক্তি অভিবাসন-সংক্রান্ত মামলায় হেরে যাওয়ার পরেও অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছিলেন। কেউ কেউ সেখানে বিভিন্ন মামলায় সাজাপ্রাপ্তও হয়েছেন।
ফেরত পাঠানোদের মধ্যে তিনজনকে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ নিরাপত্তা বিভাগের প্রতিনিধিরা বিশেষ নিরাপত্তায় পৌঁছে দিয়ে গেছেন। বাকিরা সাধারণ যাত্রীর মতো ঢাকায় ফেরেন। সর্বশেষ গত শনিবার (১৯ এপ্রিল) একটি চার্টার্ড ফ্লাইটে পাঁচ বাংলাদেশিকে দেশে পাঠানো হয়।
ফেরত আসা নোয়াখালীর এক বাসিন্দা গণমাধ্যমকে জানান, তাকে সম্মানের সঙ্গেই ফেরত পাঠানো হয়েছে। কোনো ধরনের অসম্মানজনক আচরণ করা হয়নি বলেও তিনি জানান। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছিলেন, যা গ্রহণযোগ্য না হওয়ায় তাকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়।
এ বিষয়ে পুলিশের বিশেষ শাখার এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশি নাগরিকদের যাতে সম্মানজনকভাবে ফেরত পাঠানো হয়, সেজন্য শুরু থেকেই কূটনৈতিক পর্যায়ে কাজ করেছে বাংলাদেশ সরকার। মার্কিন দূতাবাসের সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে। ফলস্বরূপ, বাংলাদেশিদের ক্ষেত্রে হাতকড়া কিংবা সামরিক বিমানের ব্যবহার এড়ানো হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্থার তত্ত্বাবধানে এই প্রক্রিয়া পরিচালিত হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে যারা অবৈধভাবে অবস্থান করছেন, তাদের তালিকা তৈরি করে বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট তথ্য ঢাকায় পাঠানো হয়। এরপর পুলিশ ও ইমিগ্রেশন বিভাগ তা যাচাই-বাছাই করে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে এই প্রক্রিয়াটি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। অভিবাসন-সংক্রান্ত নানা দিক বিবেচনায় নিয়ে একাধিকবার বৈঠক করেছে সংশ্লিষ্ট সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলো। ফিরিয়ে আনা ব্যক্তিদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিতে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাককে সম্পৃক্ত করার কথাও ভাবা হচ্ছে।
ব্র্যাকের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বিদেশ থেকে ফেরত আসা অভিবাসীদের জন্য সংস্থাটি বিমানবন্দরে সহায়তা প্রদান করে থাকে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত আসা নাগরিকদের ক্ষেত্রেও তারা প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত রয়েছে।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন প্রথম মেয়াদে ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই অভিবাসন সংক্রান্ত নীতি কঠোর করে। এরই অংশ হিসেবে বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন দেশের অভিবাসীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর কাজ শুরু হয়। ২০ জানুয়ারি ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে শপথ গ্রহণের পর ২৯ জানুয়ারি এক নির্বাহী আদেশে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে অবস্থানকারীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর কাজ শুরু হয়। এতে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশি অভিবাসীদের মধ্যে এক ধরনের উৎকণ্ঠা তৈরি হয়। তবে বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানোর তথ্য এই প্রথম প্রকাশ পেল।
সংবাদচিত্র ডটকম/জাতীয়