সারা দেশে ফের বাড়তে শুরু করেছে করোনা সংক্রমণ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, করোনা শনাক্তের হার বাড়ছে এবং এ অবস্থায় দ্রুত পরীক্ষা ও নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে দেশি-বিদেশি উৎস থেকে পরীক্ষার কিট সংগ্রহে জোর দেওয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জানান, জরুরি চাহিদা বিবেচনায় আন্তর্জাতিক রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির মাধ্যমে ইতোমধ্যে ২৮ হাজার দ্রুত পরীক্ষার কিট দেশে এসেছে। আরও ১০ হাজার আরটিপিসিআর কিট আসার কথা রয়েছে। পাশাপাশি, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ও ইউনিসেফের কাছে ১ লাখ আরটিপিসিআর এবং ৫ লাখ দ্রুত শনাক্তকরণ কিট চাওয়া হয়েছে। দেশীয় সরবরাহকারীদের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হচ্ছে। চীনা দূতাবাসের সঙ্গেও আলোচনার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
তবে বাস্তবতায় দেখা যাচ্ছে, ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে করোনা পরীক্ষার সুযোগ নেই বললেই চলে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ১০১ জনের নমুনা পরীক্ষা হয়েছে, যার সবগুলোই ঢাকায়। এর মধ্যে ১৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। ফলে ঢাকার বাইরের সংক্রমণ পরিস্থিতি সম্পর্কে স্পষ্ট চিত্র পাওয়া যাচ্ছে না।
সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, বরিশাল ও সিলেট জেলায় দ্রুত শনাক্তকরণ কিট নেই। শুধু কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে সীমিতভাবে আরটিপিসিআর টেস্ট চালু আছে, তবে দ্রুত পরীক্ষার কোনো কিট নেই। বরিশাল ও সিলেট বিভাগে কোনো ধরনের টেস্টই কার্যকরভাবে করা যাচ্ছে না।
জনস্বাস্থ্যবিদরা সতর্ক করে বলছেন, যেহেতু সংক্রমণ বাড়ছে, তাই এখনই ব্যক্তি, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে প্রস্তুতি নিতে হবে। মাস্ক ব্যবহার, জনসমাগম এ avoided, নিয়মিত হাত ধোয়ার মতো স্বাস্থ্যবিধি মানা অত্যন্ত জরুরি।
স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, প্রতিবেশী দেশ ভারতে সংক্রমণ বাড়ায় বাংলাদেশেও উচ্চ সতর্কতা বজায় রাখা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে সিভিল সার্জনদের ও সরকারি হাসপাতালগুলোকে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা, টিকা প্রয়োগের পরিকল্পনা এবং হাসপাতালের সক্ষমতা পুনর্মূল্যায়ন করা হচ্ছে।
এদিকে, সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই) কার্যালয় জানিয়েছে, বর্তমানে দেশে ফাইজারের ৩১ লাখ ডোজ টিকা মজুত রয়েছে। এর মধ্যে ১৭ লাখের বেশি টিকার মেয়াদ ৫ আগস্টের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। এই টিকাগুলো মূল করোনাভাইরাস ধরনকে লক্ষ্য করে তৈরি হলেও বর্তমান উপধরনে কতটা কার্যকর হবে, সে বিষয়ে কারিগরি কমিটির সুপারিশের অপেক্ষায় রয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
বর্তমানে দেশে অমিক্রন ধরনের উপধরন ‘জেএন-১’ ছড়িয়ে পড়ছে। যদিও এই ধরনটি তুলনামূলকভাবে কম তীব্র, তবুও ঈদ উপলক্ষে পশুর হাট, গণপরিবহন এবং পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে অতিরিক্ত ভিড় সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়েছে।
২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ২৯ হাজার ৫০০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও জনস্বাস্থ্যবিদরা সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন—মাস্ক ব্যবহার করতে হবে, জনসমাগম এ avoided করতে হবে এবং উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত পরীক্ষা করে আলাদা থাকতে হবে। করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সচেতনতা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাই সবচেয়ে কার্যকর উপায়।
সংবাদচিত্র ডটকম/জাতীয়