দুই দিনের সফরে ঢাকা পৌঁছেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ। ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন শেষে রবিবার (১০ সেপ্টেম্বর) রাতে ঢাকায় আসেন তিনি। এটি তিন দশক পর ফরাসি কোনো প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফর।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাত সাড়ে ৮টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রেসিডেন্ট মাখোঁকে অভ্যর্থনা জানান। বিমানবন্দরে তাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা জানানো হয়।
১৯৯০ সালের ২২ থেকে ২৪ ফেব্রুয়ারি ফ্রান্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া মিতেরার বাংলাদেশ সফরের পর মাখোঁই প্রথম নেতা, যিনি বাংলাদেশ সফর করছেন।
এই সফরে ঢাকা-প্যারিস অংশীদারত্ব বহুমুখী করার আশা করা হচ্ছে।
বিমানবন্দর থেকে ফরাসি প্রেসিডেন্ট সরাসরি রাজধানীর শাহবাগে হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালে যান। সেখানে তার সম্মানে নৈশভোজের আয়োজন করা করা হয়।
নৈশভোজের পর ফরাসি প্রেসিডেন্ট সংগীতশিল্পী রাহুল আনন্দের স্টুডিওতে যান। রাহুল আনন্দসহ চারজন শিল্পীর সঙ্গে আধা ঘণ্টার মতো বাংলাদেশের সঙ্গে ফ্রান্সের সংস্কৃতি বিনিময় নিয়ে কথা বলেন।
ফরাসি প্রেসিডেন্টের সোমবার সকাল ৮টায় ধানমন্ডি লেকে হাঁটার কথা রয়েছে। এরপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানাবেন মাখোঁ।
এরপর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে একটি শীর্ষ বৈঠক করবেন। উভয় নেতা দুটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তি সই এবং একটি যৌথ সংবাদ সম্মেলন করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
ঢাকায় ফ্রান্সের দূতাবাস বলেছে, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে, বিশেষ করে ফ্রান্সের প্রযুক্তি ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের ওপর ভিত্তি করে ব্যবসা সম্প্রসারণে উভয় পক্ষের ক্রমবর্ধমান আগ্রহ দেখে আমরা রোমাঞ্চিত।’
ফ্রান্সের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে প্রেসিডেন্ট মাখোঁর এই সফর দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার করতে কিছু প্রকল্প বাস্তবায়নের সুযোগ হবে।
বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের মধ্যে মোট বাণিজ্য ২১০ মিলিয়ন ইউরো থেকে ৪ দশমিক ৯ বিলিয়ন ইউরোতে উন্নীত হয়েছে এবং ফ্রান্স রপ্তানির ক্ষেত্রে পঞ্চম দেশ। ফরাসি কোম্পানিগুলো এখন প্রকৌশল, জ্বালানি, মহাকাশ, পানি খাতসহ বিভিন্ন খাতের সঙ্গে জড়িত।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, বাংলাদেশ ও ফ্রান্স সরকার আন্তরিকভাবে আশা করছে- ফরাসি প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফর দুই দেশের মধ্যকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে আরও নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁর আমন্ত্রণে ২০২১ সালের নভেম্বরে ফ্রান্স সফর করেন শেখ হাসিনা।
ফ্রান্স এই সফরকে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে গভীর করার সুযোগ হিসেবে দেখছে।
এর আগে ফরাসি সরকার গত সোমবার এই সফরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। একই সঙ্গে তারা বলে, বাংলাদেশ এমন একটি দেশ, যেটি ‘দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে এবং অংশীদারত্বে বৈচিত্র্য আনতে চায়’।
তারা আরও বলেছে, ‘বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশ ও ফ্রান্স দারুণ একতা দেখিয়ে থাকে, বিশেষ করে প্যারিস এজেন্ডা ফর পিপলস অ্যান্ড দ্য প্ল্যানেটের কাঠামোয়, যা বাংলাদেশ সক্রিয়ভাবে সমর্থন করে।’
যেহেতু বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে রয়েছে, তাই প্রেসিডেন্ট মানবিক দিক বিবেচনায়, বিশেষত নিয়মিত বন্যার সম্মুখীন হওয়ায় দেশটির পাশে দাঁড়াতে ফ্রান্সের দৃঢ় সংকল্পের কথা বলবেন।
শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সংহতি কার্যক্রমে বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদানকারী দেশ।
চলতি গ্রীষ্মে প্যারিসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে স্বাগত জানানো এবং পাপুয়া নিউগিনি, ভানুয়াতু ও শ্রীলঙ্কা সফরের পর ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে ফরাসি কৌশলের প্রয়োগ বাংলাদেশে অব্যাহত রাখবেন প্রেসিডেন্ট মাখোঁ।
ফরাসি প্রেসিডেন্টের সোমবার বেলা ২টায় ঢাকা ত্যাগের কথা রয়েছে।
সংবাদচিত্র ডটকম/জাতীয়