পুরো গতিহীন এক অবস্থার মধ্য দিয়ে চলছে এলজিইডি প্রশাসন। প্রধান প্রকৌশলীর কোনো নির্দেশ মানছেনা প্রশাসন শাখার কর্মকর্তারা।
তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী প্রশাসন মাহবুবুর রহমান, নির্বাহী প্রকৌশলী প্রশাসন মোঃ আবু হানিফ মৃধা, নির্বাহী প্রকৌশলী (আইন) জাকির হোসেন, সহকারী প্রকৌশলী (তদন্ত) এই চার জনের সিন্ডিকেট ভাংতে ব্যর্থ হয়েছেন এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী নিজেও। মূলত উল্লেখিত এ চারজনের অঙ্গুলী হেলনে চলছে এলজিইডি।
পাঁচ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে গতি হারিয়েছে এলজিইডি। স্থবির হয়ে পড়েছে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড। নতুন টেন্ডার হচ্ছেনা বললেই চলে। দৈনন্দিন রুটিন কাজেও ভাটা পড়েছে। এলজিইডির একচ্ছত্র ক্ষমতাধর প্রধান প্রকৌশলীর কথা শুনেছে না সিন্ডিকেট।
সূত্র জানায়, সাবেক প্রধান প্রকৌশলী আলী আখতারের শেষ দিকে তার কোন কথা শুনত না নির্বাহী প্রকৌশলী প্রসাশন হানিফ মৃধা। সে অফিস টাইমের বেশিরভাগ সময় কাটাত মন্ত্রণালয়ে। মাঝে মাঝে শেষ বেলায় আসলেও ছুঁয়ে দেখতো না কোন ফাইল। প্রধান প্রকৌশলী জরুরি প্রয়োজনে ডাকলেও পেতেন না তাকে। হানিফ মৃধা সিন্ডিকেটের অন্য সদস্যরাও তার ইশারায় প্রধান প্রকৌশলীকে প্রায় একঘরে করে রেখেছিলেন।
সূত্র আরো জানায়, হানিফ মৃধা নিজের ক্ষমতা ধরে রাখতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে রেখেছেন।
অভিযোগ রয়েছে, মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নেক নজরে থাকার জন্য তাদের পিয়োন চাপরাশিদের মাধ্যমে বাসায় ভাল ভাল বাজার, ভালো মাছ- মাংস যেমন বিলের কৈ, শিং, মাগুর, গলদা, দেশী মুরগী আবার কখনো কখনো দামী গিফট পাঠাতেন। আর ুসব করে করে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নেক নজরে আসেন হানিফ মৃধা।
বিগত সরকারের সময় হানিফ মৃধা বঙ্গবন্ধু পরিষদ এলজিইডি শাখার কার্যকরি কমিটির সদস্য ছিলেন। ১০১ সদস্য বিশিষ্ট ওই কার্যকরি কমিটির ৫৪ নং সিরিয়ালে রয়েছে তার নাম। রাষ্ট্র ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর এখন তাকে বলতে শোনা যায় সে নাকি ছাত্র শিবিরের সক্রিয় সদস্য ছিলেন!
সূত্র জানায়, সাবেক প্রধান প্রকৌশলী আলী আখতারের শেষ সপ্তাহখানেক আগে থেকে তার সাথে যোগাযোগ রাখতেন না। একই ব্যবহার করতেন সদ্য সাবেক প্রধান প্রকৌশলী (রুটিন ওয়ার্ক) গোপাল কৃষ্ণ দেবনাথ এর সাথেও।
তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (প্রশাসন) মাহবুবুর রহমানও একই ধরনের আচরন করতেন। এলজিইডি সূত্র নিশ্চিত করেন যে, গোপাল কৃষ্ণ দেবনাথ রুটিন দায়িত্বে ছিলেন বিধায় শুরু থেকেই তাকে তেমন গুরুত্ব দিতেন না মাহবুব ও হানিফ। তবে প্রথম দিকে প্রধান প্রকৌশলীকে এড়িয়ে চলা দৃশ্যমান না হলেও শেষ সপ্তাহে তা পরিষ্কার হয়।
কোন বিষয় মাহবুব বা হানিফকে ডাকলেও তারা যেতেন না। অতি জরুরী প্রয়োজন পড়লে প্রধান প্রকৌশলী গোপাল কৃষ্ণ দেবনাথ নিজেই মাহবুবের রুমে গিয়ে বসে ফাইল স্বাক্ষর করে নিয়ে আসতেন!
এহেন আচরণে তার বিদায়ের ২/৩ দিন আগে একাধিকবার আক্ষেপের প্রধান প্রকৌশলী বলতেন, হানিফ ও মাহবুবকে এমন কিছু ফাইলে আমি স্বাক্ষর করেছি যা এলজিইডির জন্য খুবই ক্ষতিকর। বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, সম্প্রতি উপ-সহকারী প্রকৌশলী পদে ১২৮ জনকে সহকারী প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্ব) এদের মধ্য থেকে ২০/২৫ জনকে উপজেলা প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্ব) হিসাবে পোস্টিং দেওয়া হয়েছে যেটা, খুবই অনৈতিক।
এই পোস্টিং দিয়ে মোটা অংকের ঘুষ লেনদেন হয়েছে পরবর্তীতে তা পাঠক সম্মুখে উপস্থাপন করা হবে।
এলজিইডি ভবনে কর্মরত বিভিন্ন কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে বলতে শোনা গেছে- এতোদিন যা হওয়ার হয়েছে, মুজাক্কা জাহের শক্ত মানুষ তার সঙ্গে উল্টাপাল্টা কিছু করা যাবে না। এমনিতে ৩/৪ দিন কেটে গেলো সুতরাং তিনি প্রধান প্রকৌশলী হলেও তার হাতে সময় থাকবে মাত্র ৭/৮ দিন।
হানিফ মৃধা কয়েকদিন ছুটি নিয়ে অফিসের বাইরে থাকবে। পরবর্তী প্রধান প্রকৌশলী জুলফিকার সাহেব তার সময়ও ১২ দিন।
তাদের ধারনা মুজাক্কা জাহের ও জুলফিকার এই দুই জন প্রধান প্রকৌশলীর ২৪ দিন যে কোনো ভাবে কাটাতে পারলে পরের প্রধান প্রকৌশলী ইনামুল হককে সনকে দড়ি দিয়ে ঘোরাবে।
সূত্র জানায়, আবু হানিফ মৃধা বঙ্গবন্ধু পরিষদ সদস্য থেকে এখন হয়েছে শিবির। আর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (প্রশাসন) মাহবুবুর রহমান সাবেক প্রধান প্রকৌশলী ওয়াহিদুর রহমানের পূর্ব পর্যন্ত দুর্দান্ত প্রতাপশালী ছিলেন। ওই সময় মাহবুবের গ্রীণ সিগন্যাল ছাড়া চট্টগ্রাম এলাকায় কোন বদলি বা পোস্টিং হতো না।
এরপর ওয়াহিদুর রহমান প্রধান প্রকৌশলীর দায়িত্ব গ্রহনের পর থেকেই মাহবুবকে দৌড়ের উপর রেখেছিল।
শোনা যাচ্ছে, সুযোগ বুঝে এই সিন্ডিকেট এখন যেমন খুশি কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। এলজিইডি প্রায় লুটেপুটে খাচ্ছে চার কর্মকর্তার সিণ্ডিকেট।
সংবাদচিত্র ডটকম/বিশেষ সংবাদ