আজাদ আবুল কাশেম: চলচ্চিত্রনায়িকা কবিতা’র নবম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ২০১২ সালের ৮ জুন, ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন । মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬০ বছর। সংবাদচিত্র পরিবারের পক্ষ থেকে প্রয়াত এই অভিনেত্রীর প্রতি বিন্ম্র শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।
নায়িকা কবিতা (আসল নাম কাজী জোবেদা খাতুন) ১৯৫২ সালে, পশ্চিম পাকিস্তানের করাচীতে, জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক বাড়ি পাবনা জেলার মাসুমদিয়া গ্রামে। তিনি পাপিয়া নামে শিশুশিল্পী হিসেবে প্রথম অভিনয় শুরু করেন “কাঞ্চন মালা” ও “মহুয়া” ছবিতে। পরে হন পূর্ণ নায়িকা। নায়িকা হিসেবে তাঁর নাম হয় কবিতা। পরবর্তীতে এই নামেই তিনি পরিচিতি পান ও জনপ্রিয় হন।
কবিতা অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবিসমূহ: আলোমতি, রূপ কুমারী, সাইফুল মুলুক বদিউজ্জামাল, চাঁদ আউর চাঁদনী, অধিকার, চম্পাকলি, মলুয়া, বাহরাম বাদশা, জংলী মেয়ে, বাঘা বাঙ্গালী, শপথ নিলাম, স্বপ্ন দিয়ে ঘেরা, তীর ভাঙা ঢেউ, ফান্দে পড়িয়া বগা কান্দে, জেহাদ, কে আসল কে নকল, ভাড়াটে বাড়ি, নকল মানুষ, হাসিকান্না, হাবা হাসমত, হীরা, পিঞ্জর, দুশমন, ধন্যিমেয়ে অন্যতম।
দেখতে সুন্দর, মিষ্টি-মায়াবতী চেহারার অধিকারী ছিলেন নায়িকা কবিতা। দর্শকদৃষ্টি আকর্ষণ করার মত যথেষ্ট আকর্ষণ ছিলো তাঁর চোখে-মুখে। নাচে-অভিনয়েও ছিলেন পারঙ্গম। তখনকার সব নামি-দামি নায়কের বিপরীতে অভিনয় করেছেন স্বাছন্দে। ফলে আপন পেশায় জনপ্রিয়তা ও প্রতিষ্ঠা পেয়েছিলেন।
কবিতা তাঁর চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারের সুবর্ণসময়ে হঠাৎ বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন, চলচ্চিত্র প্রদর্শক-প্রযোজক গোলাম কবিরের সাথে। বিয়ের পর চলচ্চিত্র থেকে অবসর নেন। সংসার জীবন বেশিদিন স্থায়ী হয়নি কবিতার। কয়েক বছরের মধ্যেই বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। এরপর চলচ্চিত্র ফিরে আসার চেষ্টা করেন। কিন্তু চলচ্চিত্র জগতে তাঁর আর ফিরে আসা হয়ে ওঠেনি।
কবিতা দ্বিতীয়বার বিয়ে করলেও টিকেনি বেশীদিন। পরবর্তীতে চরম দুঃখ-কষ্টে জীবন-যাপন করে আসছিলেন নায়িকা কবিতা। মৃত্যুর আগে বিভিন্ন স্থানে মানবেতর জীবন কাটিয়েছেন অনেক দিন। বলা চলে একেবারে নিঃস্ব অবস্থায় ঢাকায় পল্লবীর রূপনগরে, টিনশেড ভাড়া বাসায় চরম অভাব অনটনের মধ্যে, খুবই করুণ অবস্থায় রোগে-শোকে ভুগে, নিরবে নিভৃতে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন।
জনপ্রিয় প্রতিভাবান একজন চিত্রনায়িকার এমন দুর্বিসহ্ প্রস্থান অবশ্যই আমাদের কাম্য নয়। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে, গুণমুগ্ধ চিত্রনায়িকা কবিতা অবশ্যই চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
সংবাদচিত্র/আআকা