ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার সিলোনিয়া বাজারে অবস্থিত সাউথইস্ট ব্যাংকের একটি শাখা থেকে ‘কয়েক কোটি টাকা’ আত্মসাতের ঘটনায় এক ব্যাংক কর্মকর্তা লাপাত্তা হয়ে গেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের কেন্দ্রে রয়েছেন শাখার জুনিয়র কর্মকর্তা মোহাম্মদ জিয়াউল হক, যিনি দীর্ঘ সাত বছর ধরে ওই শাখার রেমিটেন্স ডেস্কে কর্মরত ছিলেন।
ব্যাংকের ব্যবস্থাপক মো. কামরুজ্জামান জানান, গ্রাহকদের আমানতের অর্থ গায়েব হওয়ার বিষয়টি ধরা পড়ার পরই তা ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে এবং অডিট বিভাগের একটি টিম ইতোমধ্যে শাখায় তদন্ত শুরু করেছে। তবে অডিট কার্যক্রম সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত পরিমাণ জানানো সম্ভব নয়।
স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, ব্যাংকের শুরুর সময় থেকেই জিয়াউল হক সেখানে কর্মরত ছিলেন এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গ্রাহকদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলেন। এই বিশ্বাসকে কাজে লাগিয়েই তিনি দীর্ঘ সময় ধরে গ্রাহকদের বিভিন্ন মেয়াদি আমানতের অর্থ সরিয়ে নিচ্ছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অভিযোগকারীদের মধ্যে রয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকাপ্রবাসী ইমরান হোসেন, যিনি জানান তার হিসাব থেকে ৫০ লাখ টাকা গায়েব হয়ে গেছে। ব্যবসায়ী এ কে আজাদের দাবি, তার ৩২ লাখ টাকা আরটিজিএস লেনদেনের মাধ্যমে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, সম্ভবত স্বাক্ষর জালিয়াতির মাধ্যমে। এক ট্রাভেল ব্যবসায়ীও অভিযোগ করেছেন, কোনো চেক হারানো বা আরটিজিএস ছাড়াই তার ১০ লাখ টাকা উধাও হয়ে গেছে।
গত রবিবার (৪ মে) ব্যাংকের অডিট টিম ঘটনাস্থলে তদন্তে এলে জিয়াউল হক নিরাপত্তাকর্মীকে ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে যান বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। তখন থেকেই তার মোবাইল ফোন বন্ধ, আর অবস্থান অজানা।
জিয়াউলের গ্রামের বাড়ি ছাগলনাইয়া উপজেলার পাঠাননগর ইউনিয়নের পশ্চিম ফতেহনগরে। তার বিরুদ্ধে স্থানীয়ভাবে ব্যাপক ক্ষোভ বিরাজ করছে, কারণ অনেকে তাদের সঞ্চিত অর্থ হারিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। ব্যাংকের গ্রাহক প্রবাসী শফি উল্লার স্ত্রী জোসনা বেগম বলেন, বিদেশ থেকে পাঠানো ১৬ লাখ টাকা উত্তোলনের চেষ্টা করতে গিয়ে জানতে পারেন যে ব্যাংক কর্মকর্তা পালিয়ে গেছেন। ব্যাংক শুধু ধৈর্য ধরতে বলেছে।
সাউথইস্ট ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুর রহমান চৌধুরী আশ্বস্ত করে বলেন, “গ্রাহকদের অর্থ সুরক্ষিত থাকবে। তদন্ত চলছে, এবং ব্যাংকই এর দায়ভার নেবে। কোনো গ্রাহককে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হবে না।”
সংবাদচিত্র ডটকম/অপরাধ