মুক্তিযুদ্ধের সূতিকাগার কুষ্টিয়া মুক্ত হয় আজ। ১০ ডিসেম্বর শুরু হওয়া শেষবারের যুদ্ধে পাক হানাদারদের ফাঁদে পড়ে প্রাণ হারায় মুক্তিবাহিনীর ২শ’ জন। পরে শক্তি সঞ্চয় করে আকাশ ও সড়ক পথে মূহুর্মূহু হামলা করে হানাদারদের পরাস্ত করে মুক্তিবাহিনী। ১১ ডিসেম্বর সকালে কুষ্টিয়া ছেড়ে যায় পাক বাহিনী।
কুষ্টিয়া মুক্ত করার যুদ্ধে অংশ নেয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. শামীম রেজা বলেন, ৬ ডিসেম্বর যশোর মুক্ত করার পর মিত্রবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধারা সড়ক পথে কুষ্টিয়ার দিকে অগ্রসর হন। পথে তারা বিত্তিপাড়ায় অবস্থান নেন। সেখানে মুক্তিযোদ্ধা সেজে একদল রাজাকার তাদের ভুল তথ্য দেয়। তারা বলে- কুষ্টিয়া মুক্ত আছে আপনারা নির্বিঘ্নে যেতে পারেন। সম্মুখ যুদ্ধের জন্য এ সাঁজোয়া যান এরপর কুষ্টিয়ার দিকে এগুতে থাকে।
এদিকে রাজাকারদের সঙ্গে পরামর্শ করে ফাঁদ পেতে বসে থাকেন পাক হানাদাররা। কুষ্টিয়া শহরের কাছে চৌড়হাঁসে ব্রিজের নিচে মাইন পেতে রাখে তারা। ১০ ডিসেম্বর দুপুরে মিত্রবাহিনীর ৪টি ট্যাংক পার হওয়ার পরই ব্রিজটি উড়িয়ে দেয় তারা। এই ফাঁদে পড়ে মারা যায় মিত্রবাহিনীর অন্তত: ২শ জন। পরে হেলিকপ্টার এসে যুদ্ধে অংশ নেয়। এখানে মিত্রবাহিনীর একটি হেলিকপ্টারও বিধ্বস্ত করে পাক বাহিনী। এরপর কিছুটা পিছু হটে শক্তি সঞ্চয় করে মূহুর্মূহু মর্টার চার্জ করতে থাকে মিত্রবাহিনী।
বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট আব্দুল জলিল বলেন, শহরের তিন দিক থেকে ঘিরে নিয়ে আক্রমণ করে মুক্তিযোদ্ধারা। মূহুর্মূহু মর্টার চার্জ করলে পিছিয়ে কুষ্টিয়া জিলা স্কুল ও সার্কিট হাউজের ক্যাম্পে অবস্থান নেয় পাক বাহিনী। পরে টিকতে না পেরে রাতে ভেড়ামারার দিকে পালিয়ে যায় পাক হানাদাররা।
১১ ডিসেম্বর সকালে মিত্রবাহিনী বিমান থেকে বোমা ফেললে পাক হানাদারদের দোসররাও পালিয়ে যায়। মুক্ত কুষ্টিয়ায় প্রবেশ করে মিত্রবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধারা।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. শামীম রেজা বলেন, এসময় কুষ্টিয়া শহর ছিলো শুনশান। এক ভয়ার্ত নগরী। যাওয়ার আগেও বিহারীরা ব্যাপক লুটপাট করে। তিনি বলেন, এর আগে একাত্তরের মার্চ মাসেই প্রতিরোধ যুদ্ধে কুষ্টিয়াকে মুক্ত করে ফেলেন মুক্তিকামীরা। সেসময় পরাজিত হয়ে নিহত হন অনেক পাক সেনা। ১৭দিন কুষ্টিয়া ছিলো মুক্তাঞ্চল। সেই প্রতিশোধ নিতে মুক্তিযুদ্ধের পুরোটা সময়ই কুষ্টিয়ার মানুষের প্রতি নির্মম নির্যাতন চালায় পাকিরা।
সংবাদচিত্র ডটকম/সারাদেশ