কলকাতার শুরু হল পঞ্চম বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসব। কলকাতার নন্দন-১ প্রেক্ষাগৃহে এই চলচ্চিত্র উৎসবের আনুষ্ঠানিক মোড়ক উন্মোচন হয়।
বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করলেন বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
এসময় তথ্যমন্ত্রী বলেন, চলচ্চিত্র এমন একটা মাধ্যম যেখানে ১০০ বছরের আগের সিনেমা দেখলে সেই সময়কার অবস্থা জানা যায়। বাঙালি আজ বিশ্ব জয় করেছে। তাই আমাদের চলচ্চিত্রকাররা যদি হাতে হাত মেলায় তবে বাংলা সিনেমাও বিশ্ব জয় করবে। বাঙালি সংস্কৃতি বিশ্বের অন্যতম সেরা সংস্কৃতি বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর হাত ধরেই বাংলাদেশে চলচ্চিত্র শিল্পের প্রাতিষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। একটা সময় বাংলাদেশেও হলের সংখ্যা কমে যাওয়ায় কারণে এই শিল্পে আঘাত আসে, কিন্তু শেখ হাসিনার কারণে তা আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
কলকাতায় বাংলাদেশের ছবির জনপ্রিয়তা নিয়ে তিনি বলেন ‘আমি অবাক হয়ে যাই যে “হাওয়া” সিনেমা দেখার জন্য ৮০ মিটার লম্বা লাইন পড়ে।
মন্ত্রী বলেন ‘কাঁটা তার আমাদের বিভক্ত করে দিলেও, নাড়ির বন্ধন আমাদের ভাগ করতে পারেনি, সুন্দর বনের বাঘের যাতায়াত বন্ধ করতে পারিনি। তেমনি আমাদের হৃদয়ের বাঁধানো ভাগ করতে পারিনি। গানের প্রতি ভালোবাসার উদহারণ টেনে কুয়োতে পড়ে যাওয়ার কথা শেয়ার করেন তিনি।
চিত্রপরিচালক গৌতম ঘোষ বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট, তার গভীরতা জানার জন্য চলচ্চিত্র উৎসবের প্রয়োজন। বাংলাদেশের বাজার বড় হচ্ছে, মাঝখানে সিনেমা হল গুলি একটা সময় বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু সেই অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে। এখন ওখানেও মাল্টিপ্লেক্স হচ্ছে।’ তার আক্ষেপ ‘বাংলাদেশের ছবি কলকাতাবাসী দেখতে পায় না। একমাত্র চলচ্চিত্র উৎসব ছাড়া কলকাতার মানুষ বাংলাদেশের ছবি দেখার সুযোগ পান না। কারণ দুই দেশে একসঙ্গে ছবি রিলিজের বিষয়টি পাকা হয়নি। অথচ ভারতীয় ছবি টেলিভিশনের মাধ্যমে বাংলাদেশে দেখা যায়। একটা সময় আমরা বাংলাদেশের নাটক দেখতে পেতাম কিন্তু এখন সেটাও হয় না।
ব্রাত্য বসু বলেন, এই তালিকায় বেশ কয়েকটি পছন্দের ছবির নাম দেখলাম। অ্যাপের দুনিয়ার কারণে ওই বাংলায় কি কাজ হচ্ছে তা খুব সহজেই সামনে আসছে। ডিজিটাল প্রযুক্তি ঘটছে, দুই বাংলাকে এক করে দিচ্ছে।
অভিনেতা ফেরদৌস আহমেদ, অভিনেত্রী পূর্ণিমা, অরুণা বিশ্বাস, নুসরাত ফারিয়াসহ আরও অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।
ওই অনুষ্ঠানে এছাড়া উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের সাংসদ আরমা দত্ত,গায়ক রূপঙ্কর বাগচী, প্রিয়াঙ্কা গোপ, কলকাতায় নিযুক্ত বাংলাদেশের উপ হাইকমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস, প্রথম সচিব (প্রেস) রঞ্জন সেন প্রমুখ।
আগামী ২৯ জুলাই থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত চলবে এই চলচ্চিত্র উৎসব। প্রতিদিন দুপুর ১ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত নন্দন-১, ২ প্রেক্ষাগৃহে এই ছবিগুলি দেখার ব্যবস্থা থাকছে।
এবারে ৫ম বাংলাদেশি চলচ্চিত্র উৎসব ২৪টি বাংলাদেশি ছবি থাকছে। এছাড়া ৫টি প্রামাণ্য চিত্র ও দু’টি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র দেখানো হবে। এরমধ্যে গতবার চলচ্চিত্র উৎসব মাতিয়ে এবারও থাকছে পরিচালক মেজবাউর রহমান সুমনের ‘হাওয়া’ ছবিটি।
এছাড়াও থাকছে রিকসা গার্ল, জেকে ১৯৭১, বীরকন্যা প্রীতিলতা, রেডিও, ১৯৭১ সেই সব দিন, নকশীকাঁথার জমিন, শ্যামা কাব্য, দুঃসাহসী খোকা, শ্রাবণ জোৎস্নায়, প্রহেলিকা, সুড়ঙ্গ, লাল শাড়ি, প্রিয়তমা, গুনিন, বিউটি সার্কাস, পরাণ, দামাল, পায়ের তলায় মাটি নাই, পাপ পুণ্য, সাঁতাও, মা, দেশান্তর, স্ফুলিঙ্গ, চিরঞ্জীব মুজিব, বিক্ষোভ, রেহানা মরিয়ম নূর, নোনা জলের কাব্য, মৃধা বনাম মৃধা, কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া, গলুই, গণ্ডি, ন’ডরাই, আলফা, পুত্র, আয়নাবাজি, দেবী এবং গেরিলা।
প্রামাণ্য চিত্রের মধ্যে থাকছে ‘হাসিনা এ ডটারস টেল, অবিনশ্বর, একটি দেশের জন্য গান, চিরঞ্জীব বঙ্গবন্ধু, কাঙ্গাল হরিনাথ’।
স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের মধ্যে দেখানো হবে ‘ওমর ফারুকের মা’ ও ‘ধড়’ ছবিটি।
সংবাদচিত্র ডটকম/উৎসব