অবিনাশী প্রেম উন্মুক্ত বাতায়ন পরিবেশ, বিজ্ঞান মানবজীবন ও দেশপ্রেমের কাব্যকথা ,
কবি মূলত শাশ্বত প্রেমকে হৃদয়ে ধারণ করে তারঁ কাব্যগ্রন্থ ‘বাউলি বাতাসে বালিকা প্রেম’ রচনা করেছেন। অবিনাশী প্রেম উন্মুক্ত বাতায়ন, প্রকৃতি, পরিবেশ, মানবজীবন, বিজ্ঞান,দেশপ্রেম ও রাজনৈতিক সংগ্রাম,মুক্তিযুদ্ধসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ মানুষ এই কাব্যগ্রন্থের উপজীব্য বিষয়। এছাড়া নারী-পুরুষের একান্ত প্রেমকে কবি বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন যা তাঁর নিজের জীবনকেও প্রভাবিত করেছে। উন্মুক্ত বাতায়নে দাড়িয়ে কবি পৃথিবীকে উদার ভাবে দেখেছেন যেখানে প্রেমই প্রধান উপাদান।
কবি আবদুল মান্নানের কাব্যগ্রন্থ ‘বাউলি বাতাসে বালিকা প্রেম’ এ মোট ৪৭ টি কবিতা রয়েছে নানা আঙ্গিক থেকে কিছু কবিতাকে তুলে ধরা হলো যেমন-
একটি প্রেমের ঢেউ, কবিতায় কবি বলছেন-
‘প্রেম একদিন
অনেক দূরদেশে
পাড়ি জমালো
আমি কুয়াকাটা সুর্যাস্ত
আর ইনানী বিচের
সমূদ্র সৈকতে
পড়িয়া রহিলাম’
স্বাধীনতার ৪৮ বছর কবিতায় মায়ের গেরিলা কৌশল রপ্ত করার ভুমিকা বর্ণণা করতে গিযে কবি বলছেন-
‘সন্ধ্যার পরেই গ্রামগুলে অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে যেতো
আলো না জ্বালানো গেরিলা কৌশলের সাথে
আমরাও তাল মিলিয়ে নিয়েছিলাম
ছোট ভাই বোনেরা রাতের আধাঁরে
মা‘র মুখ দেখতে পেত না
মা কিংবা বড় বোনকে দেখতে না পেয়ে
কান্না জুড়ে দিত অভয় পেতনা।’
সত্যি সেলুকাস কবিতায় গণতন্ত্র সর্ম্পকে কবির অনুভূতি হচ্ছে-
‘গণতন্ত্র
তুমি নববধূর রঙিন শাড়ির মতই
গণতন্ত্র তুমি যখন ব‘র সাথে তখন একরকম
অনেক আকাঙ্খা আর স্বপ্নের মৃত্যু ঘটে
গণতন্ত্র বিপন্ন হয়
যখন আ‘র সাথে
ফেলানিরা কাঁটাতারে ঝুলে
একইসাথে সীমান্ত বিরোধ
নিস্পত্তি হলে
ছিটমহল জুড়ে আনন্দের ঢেউ খেলে যায়
সত্যি সেলুকাস
কী বিচিত্র এই দেশ!’
কবির চেতনায় জাগ্রত আছে আর্ন্তজাতিকতাবাদ সেই দৃষ্টি থেকে তিনি নারী অধিকারের জন্য ইরানে প্রাণ বিসর্জন দেয়া প্রতিবাদী নারী মাহশা আমিনিকে উদ্দেশ্য করে বলছেন-
‘মাহশা আমিনি
তোমার মৃত্যু নেই
তেহরানের আকাশে বাতাসে
তোমার প্রতিবাদের পতাকা ওড়ছে
হিজাব খুলে
আগুন ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে
ইরানের রাস্তায় রাস্তায়
নারী মুক্তির আন্দোলনে
তুমি এক প্রতিবাদী ঝড়
সাহসী নাম মাহশা আমিনী’
১২ বছরের কিশোর মুক্তিযোদ্ধার স্মরণে কবির বাক্য চয়ন মুক্তিযুদ্ধ ৭১ কবিতায়।
‘৭ মার্চের অমর বাণী সাড়ে সাত কোটি মানুষকে
টেনে নিল দেশ উদ্ধারের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে
তখনও আমরা জানিনা
বাঙালির ললাটে কী লেখা আছে!
কাঁধে রাইফেল আর স্টেনগান নিয়ে
১২ বছরের কিশোর ঝাঁপিয়ে পড়লো মুক্তিযুদ্ধে’
বসন্ত ও প্রেম নিয়ে কবির জাগ্রত প্রেম কবিতায় উচ্চারিত পঙতি হচ্ছে-
‘প্রকৃতিতে এক উথালপাতাল হাওয়া
বাসন্তী শাড়ি, ফুলে ফুলে সেজেছে
সোহরাওয়ার্দী আর রমনার সবুজ উদ্যান
যেন ফাগুন বনে আগুন লেগেছে’
মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক কলম সৈনিক সাংবাদিক আবদুল গাফফার চৌধুরীকে নিয়ে নিবেদিত কবিতায় কবি লিখেছেন-
‘পেশার এই দৈন্য ঘোচাতে
দরকার আবদুল গাফফার চৌধুরীর মতো
অকুতোভয় সাহসী কলম যোদ্ধার
আরব যুগের খোয়াজ খিজিরের চশমার
যে চশমায় ধরা পড়বে
সাংবাদিকদের আসল দৈন্যদশা’
নদীর সাথে ভালবাসার সর্ম্পক ধরে কবি লিখেছেন আমার ভ্যালেন্টাইন।
‘নদী তোমাকে দেখার জন্যে
তোমাকে পাওয়ার জন্যে
আমি কতনা ব্যাকুল
একদিন তোমার পবিত্র জলে
স্নান সেরে ধন্য হয়েছি
আজিকার দূর্দিনেও তোমার পাশে আছি
থাকবো চিরকাল’
কবি হেলাল হাফিজ’কে নিবেদন করে কবি বলেছেন-
সব হাফিজ হেলাল হাফিজ নয়, হেলাল হাফিজ একজনই, এই হাফিজ যুগে যুগে আসেনা,কখনো কখনো আবির্ভূত হয় বিপ্লবী গান নিয়ে যৌবনের শ্লোগান নিয়ে এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শেষ্ঠ সময়।’
এছাড়া কবি বৃটিশ রানী এলিজাবেথ তার রাজ প্রাসাদ নিয়ে কবিতা লিখেছেন। কবিতায় কবি কেজি মোস্তফাকে স্মরণ করেছেন, স্মরণ করেছেন শহীদ বুদ্ধিজীবিদেরও। এর পাশাপাশি কবি নারী পুরুষের প্রেম ব্যক্তি প্রেমসহ মানুষের জাগতিক সমস্যা দুঃখগাথা নিয়ে কবিতা লিখেছেন।
কবি ও সাংবাদিক আবদুল মান্নানের পঞ্চম কাব্যগ্রন্থ ‘বাউলি বাতাসে বালিকা প্রেম’ কবির কবিতা চর্চা শুরু রাজশাহী বিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে। যুগান্তরের ছাত্র আমি এই শিরোনামে একটি ছড়া কবিতার মাধ্যমে ১৯৮৩ সালে কবির কাব্যজীবস শুরু। কবি ডাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে কবিতা লিখেছেন। এই গ্রন্থ প্রকাশের আগে কবি আরও ৪টি কাব্যগ্রন্থ ও একটি গল্পগ্রন্থ লিখেছেন। কাব্যগ্রন্থ ‘রক্ত দেখতে দেখতে’ ‘মুক্তিযুদ্ধের চিঠি’ পরিযায়ী প্রেম ও মুক্তিযুদ্ধ ও গল্প গ্রন্থ প্রেম এক উড়–উড়– মন। কবির জন্ম ১৯৫৯ সালের ১ জানুয়ারী। পারিবারিক জীবনে দুই পুত্র সন্তান ও স্ত্রী মাহমুদা ইযাসমিন নিয়ে তাঁর জীবযাপন।
সংবাদচিত্র ডটকম/বুক রিভিউ