কক্সবাজারে বিমান ঘাঁটি সংলগ্ন এলাকায় বিমান বাহিনীর সদস্যদের সাথে স্থানীয়দের সংঘর্ষে একজনের মৃত্যুর ঘটনায় একদিন পার হলেও মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত মামলা হয়নি। পরদিনও ওই এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। মঙ্গলার স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে বৈঠক করেছে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসন।
সমন্বয়কদের নতুন ছাত্রসংগঠনের আত্মপ্রকাশ বিকেলে
ঘটনার পরদিন এ নিয়ে বিবিসি বাংলা কথা বলেছে নিহত শিহাব কবির নাহিদের পিতা নাসির উদ্দিনের সাথে। তিনি আশঙ্কা করছেন, ছেলের ময়না তদন্ত রিপোর্ট পরিবর্তন হতে পারে।
বিবিসি বাংলার কাছে তিনি অভিযোগ করে বলেছেন, “আমরা এখনো পর্যন্ত পোর্স্টমর্টাম রিপোর্ট হাতে পাই নি। কিন্তু আমার কাছে একটি খবর এসেছে বিমান বাহিনী কক্সবাজারের সিভিল সার্জনকে বলেছে যে পোস্ট মর্টাম রিপোর্টে যেন গুলির কথা উল্লেখ না করা হয়”।
তবে আইএসপিআরের পক্ষ থেকে বিবিসি বাংলাকে জানানো হয়েছে, ”বিমান বাহিনীর পক্ষ থেকে কাউকে কোনরকম চাপ দেয়া হয়নি বা হচ্ছে না। গতকালই পরিষ্কারভাবে জানানো হয়েছে, বিমান বাহিনীর গুলিতে উক্ত যুবকের নিহত হওয়ার তথ্য সত্যি নয়।”
এ বিষয়ে কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. আসিফ আহমেদ হাওলাদারের সাথে যোগাযোগ করা হলে নিহতের পিতা জসিম উদ্দিনের ওই অভিযোগ অস্বীকার করেন।
মি. হাওলাদার বলেন, “ময়না তদন্তের রিপোর্ট পরিবর্তন করতে কেউ আমাদের কোন ধরনের অনুরোধ বা চাপ দেয় নি। আমরা বিনয়ের সাথে এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করছি”।
এদিকে এই ঘটনা নিয়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন তদন্ত কমিটিও হয় নি।
ঘটনার পরদিন সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে স্থানীয়দের সাথে বৈঠকের পর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, “পোস্ট মর্টাম রিপোর্টের পর হয়তো মামলা হতে পারে। তবে এখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভাল আছে। কোন জটিলতা নেই”।
তিন দফা জানাজা শেষে মঙ্গলবার সকালে নিহত নাহিদের দাফন হয়েছে তার গ্রামের বাড়ি রামুতে।
সোমবার কক্সবাজারের বিমান বাহিনীর ঘাঁটি সংলগ্ন সমিতি পাড়ায় বাহিনীটির সদস্যদের সাথে স্থানীয়দের সংঘর্ষের সময় শিহাব কবির নাহিদ নামে একজন তরুণ মারা যায়।
সোমবার ওই ঘটনার পরপর নিহতের পিতা নাসির উদ্দিন সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেছিলেন, “তার ছেলে বিমান বাহিনীরগুলিতে মারা গেছেন”।
মঙ্গলবার দাফন ও জানাজা শেষ নিহত নাহিদের বাবা নাসির উদ্দিনের সাথে যখন বিবিসি বাংলার কথা হচ্ছিল তখন কান্না জড়িত কণ্ঠে ছেলে হত্যার বিচার দাব করছিলেন তিনি।
মি. উদ্দিন বিবিসি বাংলাকে বলেন, “আমার তো ছেলে একটাই, সেও তো মারা গেলো। আমি এখন কি নিয়ে বাঁচবো। এই বার্ধক্যে এসে তো নিজের কিছু করার ক্ষমতাও নেই”।
তবে সংঘর্ষের ঘটনার পর সোমবার আইএসপিআর থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, বিমান বাহিনীর সদস্যরা জনসাধারণকে উদ্দেশ্য করে কোন তাজা গুলি ছোড়েনি।
”’একটি কুচক্রী মহল বিমান বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার লক্ষ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিমান বাহিনীর গুলিতে উক্ত যুবক নিহত হয়েছে বলে বিভিন্ন অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে, যা সত্যি নয়।….যুবক নিহতের ঘটনায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনী গভীর শোক ও পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করছে,” বলা হয়েছিল ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
ছেলে নিহত হওয়ার পর মামলা করবেন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে নাসির উদ্দিন বলেন, “এখন মামলা করতে গেলে মামলার প্রসেসে যেতে হবে। আমি ছাড়া এই কাজ করার মতো আর কেউ তো নেই যে আমাকে সাহায্য করবে”।
বিবিসি বাংলার কাছে দেয়া এই সাক্ষাৎকারে তিনি ময়না তদন্ত রিপোর্ট পরিবর্তনের শঙ্কার কথাও জানান।
তিনি বলেন, “পোস্ট মর্টেম রিপোর্টে কি হবে জানি না, তবে এই রিপোর্ট পরিবর্তন হবে বলে খবর পাচ্ছি”।
মামলা হয় নি, ময়না তদন্ত রিপোর্ট কবে?
শিহাব কবির নাহিদ নিহতের পর সোমবার রাতেই ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
মঙ্গলবার বিবিসি বাংলাকে নিহত নাহিদের পিতা নাসির উদ্দিন জানান, “এখনো পোস্ট মর্টাম রিপোর্ট পাই নি। অন্যদিকে আমি নিজেও প্রচণ্ড অসুস্থ। শরীরটা নড়াচড়া করার মতো শক্তিটুকু পেলে মামলা করার প্রস্তুতি গ্রহণ করবো”।
পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট কবে দেবে সেট সেটি নিয়ে অস্পষ্টতা রয়েছে পুলিশের মধ্যেও।
কক্সবাজার সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইলিয়াস খান বিবিসি বাংলাকে বলেন, “এখনও পর্যন্ত নিহতের পরিবার কিংবা অন্য কারো পক্ষ থেকে মামলা করতে আসে নি”।
কবে নাগাদ ময়না তদন্ত রিপোর্ট পাওয়া যেতে পারে সেটি নিয়েও কোন তথ্য দিতে পারেন নি কক্সবাজারের ওসি মি. খান।
ময়না তদন্ত রিপোর্ট কবে নাগাদ আসবে সেই প্রশ্ন করা হয়েছিল কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. আসিফ আহমেদ হাওলাদারের কাছে।
তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেন, “ময়না তদন্তের রিপোর্ট একটা প্রসেসের মধ্যে দিয়ে যায়। এখনো সেই প্রসেসটি হয় নি। তাই কবে নাগাদ ময়না তদন্ত রিপোর্ট পাওয়া যাবে সেটি এখনই আমি বলতে পারবো না”।
সংঘর্ষের ঘটনায় মঙ্গলবার দুপুরের পর সমিতি পাড়ার স্থানীয়রা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের সাথে বৈঠক করেন।
এতে কক্সবাজার শহরের সমিতিপাড়া ও কুতুবদিয়াপাড়ার ১৭ মহল্লার প্রতিনিধিদল উপস্থিত ছিলেন। তবে সেখানে সাংবাদিকদের ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।
বৈঠকের পর স্থানীয় সাবেক কাউন্সিলর আকতার
কামাল বিবিসি বাংলাকে বলেন, “এখানে জমি জমা নিয়ে কিছু বিরোধ রয়েছে। সেই বিষয়গুলো নিয়ে আমরা কথা বলেছি। একই সাথে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে প্রশাসন যেন উদ্যোগ নেয় সে বিষয়েও জেলা প্রশাসককে বলেছি আমরা”।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বিবিসি বাংলাকে জানান, সোমবার ওই ঘটনার পর বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
তিনি বলেন, “এখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভাল আছে। বড় কোন জটিলতাটা নেই। এই ঘটনার পর লোকদের মধ্যে এক ধরনের টেনশন আছে। এলাকার লোকজন দুঃখভারাক্রান্ত এই ঘটনায় এটা ঠিক। তবে এটা নিয়ে কোন টেনশন ফিল করছি না”।
তিনি জানান, সরকারের কোন নির্দেশনা না পাওয়ায় এই বিষয়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তারা কোন তদন্ত কমিটি গঠন করেন নি।
বিক্ষোভ ও প্রশাসনের সাথে বৈঠক
এদিকে সোমবারের সংঘর্ষের ঘটনার পর থেকে নাহিদ হত্যার বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। সোমবার রাতে মশাল মিছিলের পর মঙ্গলবার সকালেও মৌন মিছিল করেছে তারা।
জেলা প্রশাসকের সাথে বৈঠক শেষে বের হয়ে মঙ্গলবার সমিতি পাড়ার প্রতিনিধিদলের সদস্যরা সাংবাদিকদের জানান, জেলা প্রশাসকের সাথে দেখা করে তারা অনুরোধ করেছেন যেন নিহত শিহাব কবির নাহিদের মেডিকেল রিপোর্টে যেন কোন পরিবর্তন না হয়।
একইসাথে তারা নাহিদের হত্যাকাণ্ডের সঠিক তদন্ত এবং বিচারে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার অনুরোধ করেছেন।
_বিবিসি বাংলা