যারা আজ জাতীয় সংগীত নিয়ে কুতর্ক তুলছেন তারা আসলে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের জন্মই চায়নি বলে মন্তব্য করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন বলেছেন, কাল তুলবে জাতীয় পতাকা বদলাতে আর পরশু দাবি তুলবে বাংলাদেশ নামটিই বদলাতে। এদেরকে এখনই থামাতে হবে। জেনে রাখবেন এরা যত বাড়বে বাংলাদেশ তত পেছাবে এবং হারবে। এই দেশটিকে সেই হারের পথে যেতে দিয়েন না প্লিজ।
মঙ্গলবার (১৩ মে) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে অধ্যাপক মামুন এ কথা বলেন।
তার পোস্টটি দৈনিক শিক্ষাডটকমের পাঠকদের জন্য হুবুহু তুলে ধরা হলো-
বাংলাদেশ নামটি শুধু একটি আধুনিক রাজনৈতিক পরিচয় নয়; এর শিকড় গভীরভাবে প্রোথিত আছে বাংলার সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক কল্পনায়, যা ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশের বহু আগেই রচিত হয়েছিল। যদিও রবীন্দ্রনাথের কাব্যিক কল্পনা “বাংলাদেশ” শব্দটিকে আবেগময় এবং সাংস্কৃতিক অর্থ দিয়েছিল, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এটি জনপ্রিয় হতে শুরু করে ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দের ছয় দফা আন্দোলনের সময় থেকে। “বাংলাদেশ” শব্দটির কাব্যিক ও আবেগময় অবয়ব অমর করে রেখে গেছেন বাংলা সাহিত্যের অমর কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনি ১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশের কুষ্টিয়ায় অবস্থিত শিলাইদহ কুঠিবাড়িতে বসে আমাদের জাতীয় সংগীত “আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি” রচনা করেন এবং এখানে “সোনার বাংলা” বলে কাব্যিকভাবে বাংলাদেশকেই বিদৃত করেছেন। শিলাইদহ কুঠিবাড়ি ছিল ঠাকুর পরিবারের পূর্বপুরুষের সম্পত্তি, যেখানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর দীর্ঘ সময় ধরে পারিবারিক জমিদারি দেখাশোনা এবং সাহিত্য সৃষ্টিতে নিবিষ্ট ছিলেন।
কুষ্টিয়ার গ্রামীণ নৈসর্গিক সৌন্দর্য এবং পদ্মা নদীর স্নিগ্ধ প্রবাহ তার মনকে গভীরভাবে আলোড়িত করেছিল। এখানকার শান্ত, মনোরম পরিবেশ তার অনেক কালজয়ী রচনার অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে, যার মধ্যে অন্যতম হলো সেই অমর গান “আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি”। তাহলে আমাদের জাতীয় সংগীতে বাংলাদেশ নাই কিভাবে হলো?
যারা আজ জাতীয় সংগীত নিয়ে কুতর্ক তুলছেন তারা আসলে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের জন্মই চায়নি। তারা আজ এই কুতর্ক তুলছে কাল তুলবে জাতীয় পতাকা বদলাতে আর পরশু দাবি তুলবে বাংলাদেশ নামটিই বদলাতে। এদেরকে এখনই থামাতে হবে। জেনে রাখবেন এরা যত বাড়বে বাংলাদেশ তত পেছাবে এবং হারবে। এই দেশটিকে সেই হারের পথে যেতে দিয়েন না প্লিজ।
কয়েকদিন আগে পাকিস্তানে আটকেপড়া এক বাংলাদেশির কণ্ঠে আমাদের জাতীয় সংগীত গাইতে শুনেছিলাম। কি আবেগ। যখন গাচ্ছিল মনে হচ্ছিল ঝরঝর করে কাঁদছিল। এখানে বিদেশে নতুন প্রজন্মের এক বাংলাদেশির বাজানো আমাদের জাতীয় সংগীতটি কমেন্ট থ্রেডে দিলাম। শুনে দেখেন। শরীরের লোমে goosebumps হবে। এটিও একটি লিটমাস টেস্ট হতে পারে। শোনার সময় যদি goosebumps না হয় তাহলে আপনি কি তা নির্ণয় না জানি।
সূত্র: শিক্ষা