জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খানকে রাজস্ব ভবনে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৯মে) এক সংবাদ বিবৃতিতে এমন ঘোষণা দিয়েছে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ।
সংবাদ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বর্তমান চেয়ারম্যান বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব সৃষ্টি করেছেন এবং সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার মাধ্যমে পরিস্থিতিকে জটিল করেছেন। তার অবস্থান অতি নেতিবাচক ও ষড়যন্ত্রমূলক না হলে এই সমস্যা অনেক আগেই সুরাহা হয়ে যেত।
এই পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান চেয়ারম্যানকে অবিলম্বে অপসারণের দাবি জানিয়ে তাকে রাজস্ব ভবনে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে পরিষদ। একই সঙ্গে রাজস্ব নীতি প্রণয়ন ও ব্যবস্থাপনায় অভিজ্ঞ ও দক্ষ কর্মকর্তাকে স্থায়ী চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে।
সংস্কার ঐক্য পরিষদ জানায়, এনবিআর বিলুপ্ত করে নতুন রাজস্ব নীতি ও ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ ২০২৫ জারির প্রতিবাদে ১৪ থেকে ২৫ মে পর্যন্ত তারা কর্মসূচি চালিয়ে এসেছে। ২৫ মে রাতে অর্থ উপদেষ্টার দপ্তর থেকে জারি হওয়া এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানানো হয়, এনবিআর বিলুপ্ত করা হবে না, বরং এটিকে আরও শক্তিশালী ও বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা হবে। সেই সঙ্গে রাজস্ব নীতি প্রণয়নের জন্য একটি নতুন স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান গঠনের পরিকল্পনাও তুলে ধরা হয়।
এই ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে পরিষদ ২৬ মে থেকে ঘোষিত পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতি কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেয় এবং সব দপ্তরে স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হয়। তবে পরিষদের দ্বিতীয় দাবিটি বর্তমান চেয়ারম্যানকে অপসারণ ২৯ মে পর্যন্ত পূরণ না হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে অভিযোগ করা হয়, বর্তমান চেয়ারম্যান এনবিআরের মধ্যে অবিশ্বাস ও বিভ্রান্তি ছড়িয়েছেন। তিনি রাজস্ব সংস্কার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত না করে নানা ধরনের বাধা সৃষ্টি করেছেন। ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় সুবিধাভোগী প্রশাসনের অংশ হিসেবে তিনি অতীতে ব্যাংক খাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছেন এবং কর ফাঁকির সুবিধা দিয়েছেন বলেও অভিযোগ করা হয়। এ ছাড়াও, ভ্যাট হার হঠাৎ বাড়িয়ে অর্থনীতিতে অস্থিরতা সৃষ্টি করা এবং অডিট কার্যক্রম বন্ধ করে রাজস্ব আদায়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলায় তার ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করা হয়।
এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ আরও দাবি করেছে, বর্তমান চেয়ারম্যান সরকারের সঙ্গে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব সৃষ্টি করেছেন এবং সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার মাধ্যমে পরিস্থিতিকে জটিল করেছেন।
সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, চেয়ারম্যান অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত পূর্বঘোষিত অসহযোগ কর্মসূচি বহাল থাকবে এবং প্রয়োজন হলে ভবিষ্যতে আরও কঠোর কর্মসূচি নেওয়া হবে।
এর আগে ২৬ মে এক সংবাদ সম্মেলনে ২৯ মের মধ্যে এনবিআর বর্তমান চেয়ারম্যানকে অপসারণ করার সময়সীমা বেঁধে দেয় এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ।
২৫ মে রাতে এনবিআর কর্মকর্তাদের দাবি মানার আশ্বাস দেয় অর্থমন্ত্রণালয়। আর সেই আশ্বাসে কর্মসূচি প্রত্যাহার করে ঐক্য পরিষদ। তবে এনবিআর চেয়ারম্যানকে অপসারণের ব্যাপারে কোনো কিছুই জানায়নি অর্থ মন্ত্রণালয়। এর পরপরই এক সংবাদ বিবৃতিতে জানায়, এনবিআর বিলুপ্তির অধ্যাদেশ বাতিলসহ চার দাবিতে চলা আন্দোলন কর্মসূচি ১৩ দিন পর কলম বিরতি প্রত্যাহার করা হয়েছে। চারটি দাবির মধ্যে তিনটি দাবি পূরণ হওয়ায় কর্মবিরতি প্রত্যাহার করা হয়েছে। তবে চেয়ারম্যানের অপসারণের দাবিতে অনড় রয়েছে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ।
ঐক্য পরিষদের চারটি দাবি ছিল- অধ্যাদেশ অবিলম্বে বাতিল করা; অবিলম্বে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানকে অপসারণ করা; রাজস্ব সংস্কার বিষয়ক পরামর্শক কমিটির সুপারিশ জনসাধারণের জন্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক প্রস্তাবিত খসড়া ও পরামর্শক কমিটির সুপারিশ আলোচনা-পর্যালোচনাপূর্বক প্রত্যাশী সংস্থা, ব্যবসায়ী সংগঠন, সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক নেতৃত্বসহ সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনের মতামত নিয়ে উপযুক্ত ও টেকসই রাজস্ব ব্যবস্থা সংস্কার নিশ্চিত করা।
যদিও ২৫ মে বিকেলে আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা এবং ওষুধ ও জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জামের আমদানি-রপ্তানি ছাড়া কর, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সকল দপ্তরে পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতির ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল।
গত ১৩ মে আগারগাঁও এনবিআরের সামনে ‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের’ ব্যানারে অবস্থান কর্মসূচি থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কলম বিরতির ঘোষণা দিয়েছিলেন। সে অনুসারে ১৪, ১৫, ১৭, ১৮ ও ১৯ মে কলম বিরতি কর্মসূচি পালিত হয়। আলোচনার আশ্বাসে ২০মে আন্দোলন স্থগিত রেখে ২১ মে থেকে নতুন কর্মসূচির ঘোষণা আসে। গত ২২ মে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের দাবিগুলোর বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয়। এরপর গত ২৪ মে থেকে পূর্ণাঙ্গ কর্ম বিরতি পালন করে ঐক্য পরিষদ।
সংবাদচিত্র ডটকম/অর্থনীতি