উচ্চ আদালত ছেড়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থক শতাধিক
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দ্রুত পাল্টে যায় ঢাকার বিচারাঙ্গনের দৃশ্যপট। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করেন প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের ছয় বিচারপতি। আত্মগোপনে চলে যান আওয়ামী লীগ সমর্থক অধিকাংশ আইনজীবী। আদালতপাড়ায় এখনও দেখা যাচ্ছে না তাদের।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আওয়ামী লীগ সমর্থক অনেক আইনজীবীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তবে মামলা নেই, এমন অনেক আইনজীবীও গা-ঢাকা দিয়েছেন।
দেড় মাস অবকাশের পর গত ২০ অক্টোবর খুলেছে উচ্চ আদালত। কিন্তু আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীদের তেমন দেখা যাচ্ছে না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনেক বিচারপ্রার্থী তাদের আইনজীবীকে পাচ্ছেন না। এতে মামলার ভবিষ্যৎ চিন্তিত তারা। কেউ কেউ অবশ্য জুনিয়র আইনজীবী দিয়ে বারবার সময় নিচ্ছেন। এতে মামলার দীর্ঘসূত্রতা ও খরচ বাড়ছে।
আওয়ামী লীগ সমর্থক কয়েকজন আইনজীবী জানান, গ্রেপ্তারের ভয়ে তারা আদালত এলাকায় আসছেন না। তবে কেউ কেউ গোপনে চেম্বার করছেন। সুপ্রিম কোর্টে যারা আসছেন না তাদের মধ্যে রয়েছেন–সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের আহ্বায়ক ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, আজমালুল হোসেন কিউসি, সাবেক মন্ত্রী ও সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শ. ম. রেজাউল করিম, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিনউদ্দিন, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি মোমতাজউদ্দিন ফকির, সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এসএম মুনীর, বারের সাবেক সম্পাদক জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক ও আব্দুন নুর দুলাল, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী কামরুল ইসলাম, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম কে রহমান, রবিউল আলম বুদু, সানজিদা খানম, ব্যারিস্টার তানজীব-উল আলম, নাহিদ সুলতানা যুথী, ব্যারিস্টার রেজা-ই রাকিব, ব্যারিস্টার ইমরানুল কবীর, ব্যারিস্টার মেজবাউল হক প্রমুখ।
দুদকের প্রধান কৌঁসুলি খুরশীদ আলম খান সমকালকে বলেন, ‘মব জাস্টিসের ভয়ে প্রথম কিছুদিন আদালতে যাওয়া হয়নি, বাসায় বসে কাজ করেছি। এখন নিয়মিত যাচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘গত ১৫ বছর আওয়ামী লীগের কোনো মিছিল-মিটিংয়ে ছিলাম না। আমার বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগও নেই। দুদক থেকে যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল সেটি যথাযথ পালন করার চেষ্টা করেছি মাত্র।’
ঢাকার জজ আদালতে যারা আসছেন না তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন– ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সৈয়দ রেজাউর রহমান, কাজী নজীব উল্যাহ হিরু, সাইদুর রহমান মানিক, মাহবুবুর রহমান, আব্দুর রহমান হাওলাদার, মিজানুর রহমান মামুন, ফিরোজার রহমান মন্টু, আনোয়ার শাহাদত, শেখ বাহারুল ইসলাম ও খন্দকার গোলাম কিবরিয়া।
এছাড়া, ঢাকা মহানগর আদালতের সাবেক পিপি আব্দুল্লাহ আবু, দুদকের বিশেষ পিপি মোশাররফ হোসেন কাজলসহ অনেকে আদালতে আসছেন না।
আদালতে না আসাদের তালিকায় আরও রয়েছেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক চিফ প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী, প্রসিকিউটর মোখলেছুর রহমান বাদল, রানা দাশগুপ্ত, সুলতান মাহমুদ শিমন, সাইদুর রহমান, ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল প্রমুখ।
এদিকে, হত্যা ও হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন সাবেক মন্ত্রী ও আইনজীবী নুরুল ইসলাম সুজন, সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক মাহবুব আলী, ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন, সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মেহেদী হাসান চৌধুরী, ঢাকা বারের সদস্য অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান দীপু, কাওসারুল ইসলাম সোহেল ও নাইম মো. বশির।
হত্যা মামলায় উচ্চ আদালত থেকে আগাম জামিন নিয়েছেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না, মোতাহার হোসেন সাজু, ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর, সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মো. মোরসেদ ও আবদুল বাতেন। জেড আই খান পান্না সমকালকে বলেন, ‘মব জাস্টিসের ভয়ে অনেক আইনজীবী আদালতে আসছেন না। এতে অবশ্যই বিচারপ্রার্থীদের ক্ষতি হচ্ছে।’
সংবাদচিত্র ডটকম/আইন ও বিচার