শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে কারখানায় ভাংচুর, লুটপাট ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মারধরসহ হত্যার হুমকি দেয়ার অভিযোগে ১৩৯ শ্রমিকের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা প্রায় ১ হাজার জনের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছে ক্ষতিগ্রস্ত কারখানা কর্তৃপক্ষ।
গতকাল রবিবার (১৩ অক্টোবর) সকালে আশুলিয়া থানায় মামলা দুটি দায়ের করেছেন ছেইন এ্যাপারেলস লিমিটেড কারখানার সহকারী ম্যানেজার (এ্যাডমিন) সুজাত মল্লিক এবং ফিউচার ক্লোথিং লিমিটেড কারখানার ম্যানেজার (এইচআর এ্যাডমিন এন্ড কমপ্লায়েন্স) এনামুল হক।
এর মধ্যে ছেইন এ্যাপারেলস লিমিটেড কারখানার সহকারী ম্যানেজার এ্যাডমিন সুজাত মল্লিক বাদী হয়ে দায়েকৃত মামলায় (নং ২৯) উল্লেখ করেছেন গত ১২ অক্টোবর সকাল ৮ টায় প্রতিদিনের ন্যায় কারখানায় কারখানায় প্রবেশের পর অযৌক্তিক দাবি আদায়ের লক্ষ্যে এজাহারে উল্লেখিত ১১৬ শ্রমিক অজ্ঞাতনামা ৮০০/৯০০ সহযোগী নিয়ে উৎপাদন কাজে বাঁধা প্রদান করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। একপর্যায়ে তারা কারখানা ভবনের সমস্ত গ্লাস, ৪টি সিসি ক্যামেরা, দুটি ফায়ার ডোর, দুটি স্টীলের দরজা, ক্যান্টিন হলের সুকেজ, ক্রোকারিজ মালামাল, ড্রাইভারদের বিশ্রাম কক্ষের সমস্ত আসবাবপত্র, একটি ডেক্সটপ কম্পিউটার ও একটি হায়েস মাইক্রোবাস ভাঙচুর করে।
এসময় কর্মরত সিকিউরিটি সুপারভাইজার লিমন মিয়া (২৪), সহকারী সিকিউরিটি সুপারভাইজার জাহিদ হাসান (২০), সাইফুল ইসলাম (২২), তাদেরকে শান্ত হওয়ার জন্য অনুরোধ করলে বিশৃঙ্খলাকারীরা ক্ষিপ্ত হয়ে সিকিউরিটিদের এলোপাথারি মারধর করে। পরবর্তীতে হামলাকারীরা সিসিটিভির একটি হার্ডডিক্স, ১টি ডেল কোম্পানীর ল্যাপটপ, ১টি সিপিউ লুট করে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকার ক্ষতিসাধন করে। এছাড়াও এই ঘটনায় আইনের আশ্রয় নিলে কারখানা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়ার হুমকি প্রদর্শনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
অন্যদিকে ফিউচার ক্লোথিং লিমিটেড কারখানার ম্যানেজার (এইচআর এ্যাডমিন এন্ড কমপ্লায়েন্স) এনামুল হক বাদী হয়ে দায়েকৃত মামলার (নং ২৮) এজাহারে উল্লেখ করেছেন, গত ১০ সেপ্টেম্বর সকাল ৯ টার দিকে মামলায় উল্লেখিত ব্যক্তিরা অজ্ঞাতনামা ৫০-৬০ জন লোক অযৌক্তিক দাবি-দাওয়া আদায়ের জন্য কারখানার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বে-আইনীভাবে কারখানার ভিতরে আটকে রেখে কাজ বন্ধ করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। এভাবে বিভিন্ন সময়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির কারনে সময়মতো অর্ডার সরবরাহ করতে না পারায় বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হয়। একপর্যায়ে শ্রম আইন অনুযায়ী বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী ১৬ জন শ্রমিককে তাদের পাওনাটি বুঝাইয়া দিয়া গত ১০ অক্টোবর চাকুরীচ্যুত করা হয়। এঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে গত ১২ অক্টোবর সকাল ৯ টার দিকে চাকুরীচ্যুত শ্রমিকসহ তাদের সহযোগীরা লিমন মন্ডলের নেতৃত্বে কারখানার বাউন্ডারী ওয়াল টপকাইয়া ভিতরে ঢুকে উৎপাদন কাজ বন্ধ করে দেয়। এসময় উত্তেজিত শ্রমিকদের শান্ত হওয়ার অনুরোধ করা হলে কারখানার সুপারভাইজার রিয়াজুল ইসলামকে এলোপাথারী মারপিট করে। বিভিন্ন সময়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে উৎপাদন ব্যহত করায় কারখানার শীপমেন্ট জনিত দুই কোটি পঞ্চাশ লক্ষ টাকা ক্ষতি হয়েছে।
আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক বলেন, তৈরি পোশাক কারখানায় অসস্তোষ সৃষ্টির মাধ্যমে শিল্পখাতে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির অভিযোগে ইতিমধ্যে ১৬ জনকে আটক করেছে যৌথবাহিনী। রবিবার দুপুরে তাদেরকে উল্লেখিত মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া শিল্প খাতে অস্থিরতা সৃষ্টিকারী অন্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলমান রয়েছে বলেও জানান তিনি।
সংবাদচিত্র ডটকম/সারাদেশ