আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল এবং বিচার চলাকালীন দলটির সব ধরনের রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
শুক্রবার (২ মে) রাজধানীর গুলিস্তানে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ ফটকে আয়োজিত এক সমাবেশে তিনি এই দাবি তোলেন।
নাহিদ ইসলাম বলেন, “জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ৯ মাস পার হয়ে গেল, অথচ এখনো আওয়ামী লীগের বিচার ও নিষিদ্ধের দাবিতে আন্দোলন করতে হচ্ছে—এটা আমাদের সম্মিলিত ব্যর্থতা।”
তিনি আওয়ামী লীগকে “ফ্যাসিস্ট সন্ত্রাসী সংগঠন” আখ্যা দিয়ে বলেন, এই দলটি ২০০৯ সালের পিলখানা হত্যাকাণ্ড, ২০১৩ সালের শাপলা চত্বরের গণহত্যা, নিরাপদ সড়ক ও কোটা সংস্কার আন্দোলনে হামলা এবং ২০২৩ সালের জুলাইয়ের ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সহিংস দমন চালিয়ে দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোকে বারবার আঘাত করেছে।
এনসিপি আহ্বায়ক বলেন, “আওয়ামী লীগ কোনো রাজনৈতিক দল নয়, এটা একটি অপরাধী চক্র। গণহত্যার দায়ে তাদের বিচার হওয়া উচিত। এবং বিচার চলাকালীন দলটির নিবন্ধন বাতিল করে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করতে হবে।”
তিনি অভিযোগ করেন, গ্রেপ্তার হওয়া আওয়ামী লীগ নেতারা সহজেই জামিন পাচ্ছেন এবং অন্যান্য দলগুলো তাদের পুনর্বাসন করছে।
নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “এই সরকারের অধীনে গঠিত নির্বাচন কমিশন আওয়ামী লীগের নেতাদের অযোগ্য ঘোষণা করতে সাহস দেখায় না, অথচ নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে তেমন সুপারিশ রয়েছে। তাহলে তারা কার স্বার্থে কাজ করছে?”
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল এবং জাতিসংঘের প্রতিবেদন উদ্ধৃত করে তিনি দাবি করেন, “জাতিসংঘের প্রতিবেদনে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার নির্দেশেই দেশে ১,৪০০ মানুষ হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু কিছু সাংবাদিক এখনো তাকে গণহত্যাকারী বলতে দ্বিধা করেন। তারা আসলে সাংবাদিক নন, বরং সরকারের সহযোগী।”
নাহিদ ইসলাম আবারও দাবি জানান, “আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল করতে হবে এবং তা বিচারাধীন অবস্থাতেই রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনতে হবে।”
তিনি অভিযোগ করেন, সরকার ও সংশ্লিষ্ট মহলের ষড়যন্ত্রে জুলাই ঘোষণাপত্র এখনও প্রকাশ করা যায়নি। এ প্রসঙ্গে তিনি জানান, “ভুলে গেলে চলবে না, এই দেশে আমরা শহীদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে কথা বলছি। মৌলিক সংস্কারের জন্য জুলাই সনদ চাই, যেখানে আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধকরণ স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকবে।”
তিনি নতুন সংবিধান প্রণয়নের দাবি জানিয়ে বলেন, “গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সংবিধান তৈরি করতে হবে। শহীদ ও আহতদের পরিবারকে মর্যাদার সাথে বাঁচতে দিতে হবে।”
আস্থা প্রকাশ করে তিনি বলেন, “জুলাই আন্দোলনে দেশের মানুষ আমাদের পাশে ছিল। সামনে আরও সুসংগঠিত হয়ে ঘরে ঘরে এনসিপির বার্তা পৌঁছে দেব।”
সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহসহ কেন্দ্রীয় ও তৃণমূলের বহু নেতা-কর্মী। উপস্থিত ছিলেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নিহত খালেদ সাইফুল্লাহর বাবা কামরুল হাসানও।
সংবাদচিত্র ডটকম/রাজনীতি