ক্রিকেটের সবচেয়ে ধৈর্য, মেধা ও মননের পরীক্ষাগার হচ্ছে টেস্ট ক্রিকেট। আর এই পরীক্ষাগারে ভিরাট কোহলি ছিলেন একজন যোদ্ধা, একজন নান্দনিক শিল্পী, আবার কখনো একাই একজন বিপ্লবী নেতা। আজ যখন তিনি এই ফরম্যাট থেকে নিজেকে সরিয়ে নিলেন, তখন তিনি যেন গোটা একটি যুগ থেকে বিদায় নিলেন।
২০১১ সালের জুনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অভিষেকের সময় কেউ কল্পনাও করেনি, যে এই তরুণ একদিন বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ংকর টেস্ট ব্যাটসম্যানদের একজন হয়ে উঠবেন। সময়ের সাথে সাথে তার ব্যাট কথা বলেছে, কেবল রান দিয়ে নয়, প্রভাব দিয়ে। অস্ট্রেলিয়ায় শতরান কিংবা ইংল্যান্ডের সুইংয়ে সুইংয়ে লড়াই, কোহলি সব সময়ই ছিলেন প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে দাঁড়ানো এক প্রতীক। ১১১টি টেস্টে ৮৬৬৭ রান, ২৯টি সেঞ্চুরি ও ২৯টি ফিফটির মালিক ভিরাট কোহলি। তাঁর ব্যাটিং গড় প্রায় ৫০ এর কাছাকাছি।
টেস্ট ক্রিকেটে কোহলির সবচেয়ে বড় অবদান তার নেতৃত্ব। ধোনির শান্ত নেতৃত্বের বিপরীতে কোহলি ছিলেন আগুনে, উত্তেজিত, কিন্তু দারুণ পরিকল্পনাময়। দলকে জেতানোর পাশাপাশি ভারতীয় টেস্ট ক্রিকেটের মর্যাদা ফেরাতে এক বিপ্লবের নেতৃত্ব দিয়েছেন। ভারতের মাঠে টানা জয়ের রেকর্ডের পাশাপাশি বিদেশের মাটিতে একাদশ নির্বাচনে ছিল তার দূরদৃষ্টিসম্পন্ন পদক্ষেপ।
কোহলি সব সময় বলে এসেছেন, টেস্ট ক্রিকেটই তার প্রিয় ফরম্যাট। সে প্রেম ছিল নিঃস্বার্থ, আবেগময়, আর একেবারে শিকড়ের মতো গভীর। আজ সেই ভালোবাসার ফরম্যাট থেকে বিদায় নেওয়ার সিদ্ধান্ত তাই শুধু পরিসংখ্যান নয়, আবেগের জায়গা থেকেও বিশাল এক ক্ষতি।
বিদায় বার্তায় কোহলি বলেন, “টেস্ট ক্রিকেটই আমার আত্মা ছিল। এই ফরম্যাটে খেলাই আমাকে প্রকৃত ক্রিকেটার হিসেবে গড়ে তুলেছে। দেশের হয়ে পাঁচ দিনের লড়াই, সাদা পোশাকের গর্ব, সবকিছুই মিস করব। কিন্তু সময় এসেছে সরে দাঁড়ানোর।”
কোহলির টেস্ট বিদায়ের খবর মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক মাধ্যমে। শচীন টেন্ডুলকার থেকে শুরু করে স্টিভ স্মিথ, রুট, বাবর আজম, বিশ্বজুড়ে ক্রিকেটাররা একইসাথে সম্মান জানিয়ে কোহলির অবদানের প্রশংসা করেছেন।
কোহলির অবসরের পর ভারতীয় ড্রেসিংরুমে একটা বড় শূন্যতা তৈরি হলেও তার রেখে যাওয়া আদর্শ, মানসিকতা এবং পারফরম্যান্সের উচ্চমান বহু তরুণ ক্রিকেটারের জন্য হয়ে থাকবে পথপ্রদর্শক।
সংবাদচিত্র ডটকম/ক্রিকেট