সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমামের ৮৭তম জন্মদিন আজ। ১৯৩৫ সালের ২৭ জুলাই ভারতের বর্ধমানে মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। সেখানেই কাটে তার শৈশব।
১৯৫০ সালে কলেজের বার্ষিক অনুষ্ঠানের এক নাটিকায় অংশ নেওয়ার মাধ্যমে অভিনয় জীবন শুরু হয় সৈয়দ হাসান ইমামের। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের এ শিল্পী সভাপতি হিসেবে দীর্ঘ সময় বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
দেশের অন্যতম প্রখ্যাত সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব তিনি।
তাঁর অভিনীত প্রথম সিনেমা ‘ধারাপাত’। এই ছবিতে নায়ক হয়ে আলোচনায় আসেন ষাটের দশকে। এরপর অনেকগুলো সিনেমায় নায়ক হয়ে অভিনয় করেছেন।
টেলিভিশন নাটকে রয়েছে তার বিশাল অবদান। টানা ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে টিভি নাটকে অভিনয় করছেন তিনি। মঞ্চে নিয়মিত অভিনয় করেছেন এক সময়। এছাড়াও, অসংখ্য বেতার নাটকেও অভিনয় করেছেন।
দেশের মুক্তিযুদ্ধসহ নানা সংগ্রামে, সংকটে তিনি ছিলেন ন্যায় আর মুক্তির পক্ষে একজন চৌকস সংগঠক। তিনি সবার প্রিয় ও শ্রদ্ধ্বেয় সৈয়দ হাসান ইমাম। আজ ৮৭তম জন্মদিনে আলোকিত এই মানুষটির জন্য ‘সংবাদচিত্র ডটকম’ পরিবারের পক্ষ থেকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও শুভকামনা। একই সঙ্গে তাঁর সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘ জীবন কামনা করছি।
ক্যারিয়ারের শুরুতে একজন গায়কই হতে চেয়েছিলেন সৈয়দ হাসান ইমাম। ১৭ বছর বয়সে ১৯৫২ সালে অল ইন্ডিয়া ইয়ুথ উৎসবের বরীন্দ্র বিভাগে তিনি প্রথম হয়েছিলেন। তখন সবাই জানতেন তিনি ভালো রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী। গানই হওয়ার কথা ছিলো তার সব। কিন্তু এক সময়ে কঠিন অসুখ হয়। সে কারণে গান বাদ দিতে হয়েছিল।
বর্ণাঢ্য এক জীবন সৈয়দ হাসান ইমামের। তার ভাষায়, ‘কখনো এক পেশায় ছিলাম না। একটা সময়ে ফুটবল খেলতাম। একটা সময়ে ক্রিকেট খেলেছি। পড়ালেখা করেছি ম্যাকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে। প্রথম জীবনে চাকরি করেছি দর্শনা চিনি কলে। সেখান থেকে চলে এলাম ব্যাংকে। তারপর টিভি নাটকে। তারপর সিনেমায়। আবার মঞ্চেও অনেকদিন অভিনয় করেছি’।
তিনি বলেন, ‘বহু বছর আগেই সিনেমা পরিচালনা করেছি। আবৃত্তি করেছি। গান করেছি। মুক্তিযুদ্ধ করেছি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য আন্দোলন করেছি। সেজন্যই বলছি, একটা বিচিত্র জীবন আমি পার করেছি। সেই জীবনটা ছিল অর্থময়।’
১৯৫০ সালে কলেজের বার্ষিক অনুষ্ঠানের এক নাটিকায় অংশ নেয়ার মাধ্যমে অভিনয় জীবন শুরু হয় সৈয়দ হাসান ইমামের। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের এ শিল্পী সভাপতি হিসেবে দীর্ঘ সময় বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
সৈয়দ হাসান ইমাম ছিলেন ১৯৬৪ সালের সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী আন্দোলনের সক্রিয় সংগঠক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে নানা জায়গায় গিয়েছেন।
সাংস্কৃতিক চেতনার উন্মেষ ঘটিয়ে সম্প্রীতি ও মৈত্রী স্থাপনের কাজ করেছেন। ১৯৬৯ সালের গণআন্দোলন ও ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ তার জীবনের এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের দাবিতে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা আন্দোলনেরও অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব তিনি।
সৈয়দ হাসান ইমাম শ্রেষ্ঠ অভিনেতা ও শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও বাচসাস পুরস্কার পেয়েছেন।
এছাড়াও পেয়েছেন স্বাধীনতা পুরস্কার, একুশে পদকসহ অনেক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার।
সংবাদচিত্র/বিনোদন