বিচারের আগে যেন মিডিয়া ট্রায়াল না হয়–এ ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের নিদের্শনা মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি ওবায়েদুল হাসান। তিনি বলেছেন, ‘বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে কিছু ঘটনায় আমরা কোর্ট ট্রায়ালের আগেই মিডিয়া ট্রায়ালের সংস্কৃতিতে উদ্বিগ্ন বোধ করছি। এ ব্যাপারে আমি সুপ্রিম কোর্টের নিদের্শনার প্রতি মনোযোগ দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’
শুক্রবার রাজধানীর মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সাংবাদিকতায় বজলুর রহমান স্মৃতিপদক ২০২৩ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ সময় মঞ্চে অন্যান্যের মধ্যে জুরিবোর্ড সদস্য ফরিদুর রেজা সাগর, এএসএম সামছুল আরেফিন, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ডা. সরওয়ার আলী ও মফিদুল হক উপস্থিত ছিলেন। জুরিবোর্ডের সভাপতি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের সভাপতিত্ত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরী, সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যধাপক জোবাইদা নাসরীন প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি প্রিন্ট মিডিয়া ক্যাটাগরিতে যৌথভাবে দৈনিক ভোরের কাগজের ঝর্ণা মনি ও ডেইলি স্টারের আহমেদ ইশতিয়াক এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া ক্যাটাগরিতে চ্যানেল আইয়ে’র লায়লা নওশিনকে শ্রেষ্ঠ প্রতিবেদক হিসেবে পুরস্কার তুলে দেন। তিনি পুরস্কৃত তিন সাংবাদিকের হাতে ক্রেস্ট, সনদপত্র এবং প্রতিটি ক্যাটাগরিতে ১ লাখ টাকার চেক হন্তান্তর করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি ওবায়েদুল হাসান বলেন, বিচার নাগরিকের সবশেষ আস্থার স্থল। গণমাধ্যমের সঙ্গে আমাদের বিচার বিভাগের সম্পর্ক চিরকালই আন্তরিকতা ও ঘনিষ্ঠতার রঙে রঙিন হয়ে আছে। জনগণের আস্থাই বিচার বিভাগের সবচাইতে বড় সম্পদ, আর সেই আস্থা প্রতিফলিত হয় গণমাধ্যমের হাত ধরে। বিচার বিভাগ একটি সংবেদনশীল ক্ষেত্র। ফলে আদালত ও বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে তথ্য প্রকাশের ক্ষেত্রে আমরা গণমাধ্যমের কাছ থেকে দায়িত্বশীলতা ও সচেতনতা প্রত্যাশা করি। একটি অপ্রকাশযোগ্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ বা তথ্যের ভুল ব্যাখ্যা সমগ্র বিচার ব্যবস্থার জন্য বিব্রতকর পরিস্থিতির জন্ম দিতে পারে। আবার বিচার ব্যবস্থায় যদি কোনো অনিয়ম কিংবা দুর্নীতি হয় তা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়া জরুরি। এতে বিচার ব্যবস্থার স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও দায়বদ্ধতার জায়গাটি নিশ্চিত হয়।
তিনি বলেন, বিচারাধীন মামলা সম্পর্কে তথ্য প্রকাশের ক্ষেত্রে বিচার বিভাগের সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে থাকে। আদালতের ভাবমূর্তি যাতে ক্ষুন্ন না হয়, আদালতের ওপর মানুষের আস্থা যাতে সংকুচিত না হয়, অথবা বিচারাধীন মামলার কার্যক্রমে যেন প্রকাশিত সংবাদ প্রভাব বিস্তার করতে না পারে এমন চিন্তা থেকেই এ পরামর্শ দেওয়া হয়।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের প্রশংসনীয় উদ্যোগের কথা তুলে ধরে প্রধান বিচারপতি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের মত প্রতিষ্ঠানগুলো অনন্তকাল আমাদের হাত ধরে থাকবে, পথ দেখিয়ে যাবে।
ডা. সরওয়ার আলী বলেন, নির্ভীক সাংবাদিকরা মুক্তিযুদ্ধের তথ্য সংরক্ষণ ও এর প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। এ অঞ্চল সাহসী ও দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার গৌরবময় ঐতিহ্য বহন করে। বিশ্বের মর্যাদাপূর্ণ জাতি হিসেবে তরুণ প্রজন্ম বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে–এমন প্রত্যাশা করে মফিদুল হক বলেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে অনুসন্ধানী রিপোর্ট ও গবেষণার যথেস্ট সুযোগ রয়েছে। এ ব্যাপারে তরুণ সাংবাদিকদের আরও বেশি অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে।
সংবাদচিত্র ডটকম/আইন ও বিচার