অন্তর্বর্তী সরকারকে ‘পুরোপুরি সমর্থন করা যাচ্ছে না’ বলে মন্তব্য করেছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি দাবি করেন, এনসিপি এই ‘সরকারের পোষ্য’ রাজনৈতিক দল।
বুধবার (২১মে) দুপুরে এক আলোচনা সভায় নাগরিক ঐক্যের সভাপতি বলেন, “আমরা যে আলাদা আলাদা রাজনৈতিক দল করছি, আমরা একটা জোট করছি, আমরা কার বিরুদ্ধে লড়ছি। সবাই প্রতিদিন বলছেন, আমরা এই সরকারকে সমর্থন করি, সমর্থন করলে এতো বক্তৃতা করছেন কেন?
“পুরোপুরি সমর্থন করি না, করতে পারছি না, সেটা হচ্ছে বড় কথা।
দেশে স্টারলিংকের মতো প্রযুক্তি না থাকার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “তার মানে এটা ওদের দখলে গেছে।”
মান্না বলেন, “আমি জানতে চাই, ওরা (স্টারলিংক) এটা চালাতে চালাতে পুরো প্রযুক্তি আমাদের কি দেবে, আমাদের কি শেখাবে আমরা নিজেরা যাতে এরকম খুবিই উঁচু মানের সাইবার ব্যবস্থা চালাতে পারি? সেরকম করে কি তারা আমাদের শেখাবে আমি তো জানি না, আমাকে তো বলা হয়নি, সরকার তো এ নিয়ে কিছু বলেনি।”
“তাহলে এরা (স্টারলিংক) আমাদের সম্পূর্ণ সাইবার ব্যবস্থার ওপরে নিয়ন্ত্রণ রেখে চলতে পারবে, এটা তো মানা যায় না।”
একই সঙ্গে মিয়ারমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের জন্য ‘মানবিক করিডোর’ দেওয়ার বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকার কঠোর সমালোচনা করেন নাগরিক ঐক্যের প্রধান।
‘ভেতরের ও বাইরের স্বার্থ বড় হচ্ছে’
মান্না বলেন, “ড. ইউনুস একজন উপদেষ্টা সম্পর্কে বলেন না, বিশেষভাবে পরিকল্পনাকারী, এই বিশেষভাবে পরিকল্পনার দিকও এখন বুঝতে হবে। মানুষের মধ্যে এখন নানারকম প্রশ্ন তৈরি হচ্ছে।
“আমাদের দেশের মধ্যে ও বাইরের স্বার্থ বড় হচ্ছে কি? সেটা যদি হয় তাহলে এখন থেকেই সজাগ-সর্তক থাকা দরকার।”
‘রাজনীতিকে অপছন্দ করা মানুষগুলো দেশ চালাচ্ছে’
বর্তমান পরিস্থিতিতে নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তার শঙ্কা প্রকাশ করে মান্না বলেন, “আমরা রাজনীতিবর্জিত একটা সমাজ চাই না। রাজনীতিকে অপছন্দ করা মানুষগুলো দেশ চালাচ্ছে এবং প্রকাশ্যে বলতে গেলে, এটা আমাদের জন্যে সুখকর হতে পারে না।”
‘এনসিপি এই সরকারের পোষ্য রাজনৈতিক দল’
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কার্যক্রম তুলে ধরে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি বলেন, “এই যে এতো দিন ধরে কথা-বার্তা বললেন, কী দাঁড়ালো ন্যূনতম পাওয়া গেছে ১৬৬টা প্রশ্ন। ১৪৬টাতে সব দল একমত হয়েছে। তো আপনি (অন্তর্বর্তী সরকার) যে বলতেন বেশির ভাগের মধ্যে ঐক্য হওয়া দরকার, বেশিরভাগই তো ঐক্য হয়ে গেছে। তারপরও নির্বাচন নিয়ে কথা বলতে পারছেন না কেন?”
জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির নির্বাচন কমিশন ঘেরাও কর্মসূচির সমালোচনা করে মান্না সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, “আপনার পোষ্য রাজনৈতিক দল, ওরা আজকে নির্বাচন কমিশন ঘেরাও করেছে কেন?”
জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হকের লেখা ‘ফ্যাসিবাদ, গণঅভ্যুত্থান, বিপ্লব ও সংবিধান বিতর্ক’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়। ‘কালের দাবি প্র্কশনা’ ১০৪ পৃষ্ঠার এই গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে, যার দাম রাখা হয়েছে দেড়শ টাকা।
‘স্থানীয় সরকারের রব কারা তুলছেন’
জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন দাবি করছে সে গোষ্ঠীটি তারা সরকারের সঙ্গে যুক্ত আছে দাবি করে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, “এই সরকার থাকলে যাদের জন্য সুবিধা হয়, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক আধিপত্য যারা বাড়িয়ে তুলতে চান তারা এই সরকারকে প্রলম্বিত করতে চান, অনির্দিষ্টকালের জন্য একটা জবাবদিহিহীন সরকার চান তারা।”
প্রতিদিন বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশের ঘটনায় ঢাকা শহরে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তা তুলে ধরে তিনি দাবি করেন, অন্তর্বর্তী সরকার দেশ চালাতে পারছে না। সেটা কেবলমাত্র ঢাকা শহরের দিকে তাকালেই বোঝা যাচ্ছে।
সাইফুল হক বলেন, “এখন নির্বাচন কমিশন ঘেরাও করা হচ্ছে কেন? নির্বাচন কমিশন উচ্চ আদালতের রায়টাকে সন্মান দিয়েছিল বলেই তাদের এই নির্বাচন কমিশন ঘেরাও। ইশরাক যাতে শপথ গ্রহণ করতে না পারে, তাই সেটাকে পক্ষপাতদুষ্ট হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।”
আদালতের রায়ে চট্টগ্রাম নগরীর মেয়র হিসেবে শাহাদাত হোসেনের দায়িত্ব পালনের বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, একইভাবে আদালত ঢাকা দক্ষিণের ব্যাপারে রায় দিয়েছেন, বিএনপির ইশরাক হোসেন… তিনি সেখানে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।
“কিন্তু এখন দেখছি, সেটা নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে ঢাকা শহরে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। আদালতের রায়ের প্রতি সন্মান জানিয়ে নির্বাচন কমিশনও তাদের সম্মতি জানিয়েছেন। সেটা নিয়ে আবার উচ্চ আদালতে রিট করা হয়েছে। আইনটা একেক শহরের জন্য কি একেকরকম, আইনটা একেক ব্যক্তির জন্য কি একেকরকম? আপনার পছন্দ হলে একরকম আর পছন্দ না হলে আরেকরকম?”
‘পাক্ষিক কালের দাবি’ পত্রিকার সম্পাদক বহ্ণিশিখা জামালীর সভাপতিত্বে ও পত্রিকার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আকবর খানের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ, কবি মোহন রায়হান, সাংবাদিক মোস্তফা কামাল মজমুদার, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোশরেকা অদিতি হক।
সংবাদচিত্র ডটকম/রাজনীতি