প্রকাশের সময়: মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ । ১১:০৮ পূর্বাহ্ণ প্রিন্ট এর তারিখঃ শনিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

৬ কোটি টাকায় এলজিইডির বড় প্রকল্পের পরিচালক তোফায়েল আহমেদ

সংবাদচিত্র রিপোর্ট

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নওগাঁ জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী তোফায়েল আহমেদকে সম্প্রতি Improving Urban Governance and Infrastructure Project (IUGIP)-এর প্রকল্প পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, এই নিয়োগ পেতে তিনি দুই দফায় মোট ছয় কোটি টাকা লেনদেন করেছেন।

প্রকল্পের আকার ও গুরুত্ব

এলজিইডির চলমান প্রকল্পগুলোর মধ্যে IUGIP সবচেয়ে বড় বাজেটের প্রকল্প। এটির ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৩৪৫.০৮ কোটি টাকা এবং মেয়াদ জুলাই ২০২৩ থেকে জুন ২০২৮ পর্যন্ত। অভিজ্ঞ মহলের প্রশ্ন—একজন প্রকৌশলী কেন এমন বিশাল অঙ্কের ঘুষ দিয়ে এ দায়িত্ব নিতে চাইবেন, যদি প্রকল্পের অর্থ লুটপাটের ইচ্ছা না থাকে?

প্রথম নিয়োগ ও বাতিল

গত ৪ মে ২০২৫, তৎকালীন প্রকল্প পরিচালক আব্দুল বারেককে সরিয়ে তোফায়েল আহমেদ এক কোটি টাকা খরচ করে প্রকল্প পরিচালক পদে নিয়োগ পান। তবে দুই দিনের মাথায় দাতা সংস্থার আপত্তির কারণে তার নিয়োগ বাতিল হয়ে যায় এবং আব্দুল বারেক পুনরায় দায়িত্ব পান।

কিন্তু দুই মাসের ব্যবধানে, ২৮ জুলাই ২০২৫ তারিখে আবারও এডিবি ও এএফডি-সহ বৈদেশিক সহায়তাপুষ্ট এই বৃহৎ প্রকল্পে তাকে প্রকল্প পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন

সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ ডিপ্লোমা থেকে ডুয়েটে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্ন করেছেন। তবে বিদেশি সহায়তায় বাস্তবায়িত এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প পরিচালনায় তার দক্ষতা যথেষ্ট কি না—এ নিয়েও সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের মাঝে গভীর সন্দেহ রয়েছে।

অনিয়ম ও বিত্তবৈভব

অভিযোগ রয়েছে, নওগাঁয় নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে চার বছরের দায়িত্ব পালনের সময় তিনি তৎকালীন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে কোটি কোটি টাকা দুর্নীতি করেছেন। মন্ত্রীর আশীর্বাদেই তিনি এখন বিপুল বিত্তবৈভবের মালিক।

বর্তমানে সপ্তাহে শুক্রবার ও শনিবার নওগাঁ অফিসের দায়িত্ব পালন করেন তিনি, আর রবি থেকে বৃহস্পতি পর্যন্ত ঢাকায় এলজিইডি অফিসে সময় দেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে দায়িত্ব পালন এবং নিয়মিত ঢাকা-রাজশাহী বিমানে যাতায়াত নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে—এই বিপুল খরচ বহন করেন কীভাবে?

প্রকল্প পরিচালনায় অনিশ্চয়তা

দেশের ৮৮টি পৌরসভার সুশাসন, জবাবদিহিতা ও অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ করছে IUGIP। দাতা সংস্থার শর্ত মেনে দক্ষতার সঙ্গে এ প্রকল্প এগিয়ে নিচ্ছিলেন পূর্ববর্তী পরিচালক আব্দুল বারেক। তিনি বলেন—

> “আমি জানুয়ারি ২০২৪ থেকে এ প্রকল্পের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। মাঝপথে কেন পরিচালক বদল হলো তা আমার জানা নেই। এ বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ভালো জানবেন।”

এলজিইডিতে ঘুষ সংস্কৃতি

এলজিইডি সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি ১১টি প্রকল্প পরিচালকের পদেও মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তাদের সবাই বিগত সরকারের সুবিধাভোগী ও ছাত্রলীগ ক্যাডার। এখানে সিনিয়র-জুনিয়র মানা হয়নি।

প্রকৌশলীদের মধ্যে এখন একটি প্রবাদ প্রচলিত—“টাকা ছাড়া এলজিইডিতে পদোন্নতি, নিয়োগ বা পোস্টিং হয় না।”

একজন সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী অভিযোগ করে বলেন—

> “সকল যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও আমাকে প্রধান প্রকৌশলী করা হয়নি, কারণ আমি টাকা দিইনি।”

তিনি আরও জানান, মন্ত্রণালয়ে কিছু প্রভাবশালী কর্মকর্তা আছেন যাদের কাছে একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ বিষয় টাকা। ফলে ত্যাগী ও মেধাবী কর্মকর্তারা বারবার বঞ্চিত হচ্ছেন, আর আওয়ামী লীগের প্রেতাত্মারা এখনো বহাল তবিয়তে ক্ষমতা ভোগ করছে।

সংবাদচিত্র ডটকম/জাতীয়

প্রিন্ট করুন