ফেনী জেলার পরশুরাম উপজেলার চিথলিয়া ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডে একটি প্রভাবশালী পরিবারের গরু ও মুরগির খামার নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা তীব্র ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। এলাকাবাসীর অভিযোগ, খামারটির দুর্গন্ধে মাদ্রাসা ও মসজিদের শিক্ষার্থী, মুসল্লি এবং সাধারণ পথচারীরা অতিষ্ঠ। খামারের মালিক কাউছারের হুমকি ধামকি ও অত্যাচারে নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছেন এলাকার নারী ও শিশুরাও।
ভুক্তভোগীর অভিযোগ ও সাধারণ ডায়েরি
স্থানীয় বাসিন্দা হোসাইন আহম্মদ মজুমদার ১৭ জুলাই ২০২৫ তারিখে পরশুরাম থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি নং: ৬৯০) করেন। তিনি উল্লেখ করেন, প্রতিবেশী কাউছার ও তার পরিবারের সদস্যরা বাড়ির সংলগ্ন স্থানে গরু ও মুরগির খামার স্থাপন করেছেন, যা দুর্গন্ধ, স্বাস্থ্যঝুঁকি ও চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।
প্রতিবাদ করায় গালিগালাজ, হুমকি এবং মারমুখী আচরণেরও অভিযোগ এনেছেন তিনি। এতে এলাকাবাসীর মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে।
মাদরাসা সংলগ্ন খামারের দুর্গন্ধযুক্ত বর্জ্য। ছবি: সংগৃহীত
পরিবেশ অধিদপ্তরের তদন্ত ও নির্দেশনা
সংশ্লিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে পরিবেশ অধিদপ্তর, ফেনী জেলা কার্যালয় তদন্ত করে ২৭ আগস্ট ২০২৫ তারিখে একটি চিঠি জারি করে। এতে বলা হয়, খামারটি আবাসিক এলাকায় অবস্থিত হওয়ায় তা বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০) এবং পরিবেশ বিধিমালা, ২০২০-এর পরিপন্থী।
অধিদপ্তর খামার অপসারণের জন্য ১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে খামার অপসারণ না করলে, আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও জানানো হয়।
প্রশাসনের বক্তব্য
পরশুরাম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জানিয়েছেন, “সাধারণ ডায়েরি পাওয়ার পর আমরা ঘটনাটি আমলে নিয়েছি। স্থানীয়ভাবে বিষয়টি সমাধানে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্দেশনা বাস্তবায়নে স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সমন্বয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।”
পরিবেশ অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আবাসিক এলাকায় গরু-মুরগির খামার চলতে পারে না। আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। পরিবেশের ক্ষতি এবং স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবেলায় প্রশাসন কঠোর অবস্থান নিচ্ছে।”
সংশ্লিষ্ট পক্ষের প্রতিক্রিয়া
অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত পরিবারের সদস্য মো. কাউছার বলেন, “আমাদের খামার দীর্ঘদিন ধরেই রয়েছে। কেউ যদি এতে সমস্যা মনে করে, আমরা আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে আগ্রহী। তবে আমাদেরকেও হয়রানি করা ঠিক না।”
অন্যদিকে, স্থানীয় এক গণ্যমান্য ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করে জানান, “এই পরিবারটি দীর্ঘদিন ধরে এলাকার নানা বিষয়ে প্রভাব খাটিয়ে থাকে। অনেকেই মুখ খুলতে ভয় পান।”
এলাকাবাসীর চলাচলের একমাত্র রাস্তাটির বেহাল অবস্থা। ছবি: সংগৃহীত
এলাকাবাসীর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি
এলাকাবাসী জানিয়েছে, পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী খামার দ্রুত অপসারণ না হলে তারা সংগঠিত আন্দোলনের মাধ্যমে তাদের অধিকারের জন্য রাস্তায় নামবেন।
একদিকে আবাসিক এলাকায় পরিবেশদূষণ, অন্যদিকে ব্যাংকিং খাতে মেধাবীদের প্রতি উপেক্ষা— দুই ক্ষেত্রেই প্রশাসনের দৃঢ়, ন্যায্য ও দ্রুত পদক্ষেপ এখন সময়ের দাবি। জনসাধারণের আস্থা বজায় রাখতে কার্যকর পদক্ষেপ ছাড়া বিকল্প নেই।
সংবাদচিত্র ডটকম/অপরাধ